জামদানি নিয়ে কাজ করে লাখপতি সানজিদা
সাজেদুর আবেদীন শান্ত
সানজিদা আফরোজের জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। বাবা আবুল হাশেম ছিলেন একজন ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। দুই বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে পরিবারের বড় সন্তান সানজিদা। কলেজে পড়ার শেষের দিকে হঠাৎ তার বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। পড়াশোনা আর শেষ হয়নি। আনোয়ার সাদাত নামের একজন ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিবাহ হয় তার।
পরে স্বামী, শ্বশুর ও সানজিদার মায়ের অনুপ্রেরণায় শ্বশুরবাড়ি থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। মার্কেটিংয়ে বিবিএ শেষ করার পরে চাকরির সুযোগ পান। কিন্তু নবজাতক ও যৌথ সংসার সামলাতে গিয়ে কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। বর্তমানে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে চার জনের পরিবার।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি ডিজাইনিং, আঁকাআঁকি ও মেকআপের শখ ছিল তার। মা-খালাদের জামদানি শাড়ি দেখে জামদানি পণ্যের প্রতি ভালোবাসা ও আগ্রহ জাগে। চাকরি করতে না পারলেও কিছু করার আগ্রহ থেকে ২০১৪ সালে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন জায়গা থেকে বিউটিফিকেশন ও বুটিকস রিলেটেড কোর্স করেন।
সরকারি-বেসরকারিভাবে সার্টিফায়েড মেকআপ আর্টিস্ট হয়ে ‘Aliza makeover’ নামে লেডিস সেলুন ও বুটিকস শপ দেন। শুরুতে আট জন কর্মচারী ও একজন কারিগর ছিল। অনেককে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করেছেন।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো অনলাইনে তুলে ধরে তার উদ্যোগে Alizabd ও Aliza food সাজিয়েছেন। তার পণ্যগুলোর মধ্য আছে- নারায়ণগঞ্জের জামদানিতে ফিউশন, জামদানি শাড়ি, জামদানি ফ্রক, ফতুয়া ব্লক হাউস পেইন্ট ও জুট ফিউশনে শাড়ি, থ্রি-পিস, ব্যাগ ও বিছানার চাদর ইত্যাদি।
উই থেকে তার জামদানি ও জুট পণ্য অলরেডি তিনটি দেশের প্রবাসীদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন। উইতে তার মোট পণ্য বিক্রি হয়েছে দেড় লাখের ওপর। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি আছে তার আলিজা ফুড নামের উদ্যোগে। বিষমুক্ত শুঁটকি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে তার এ উদ্যোগ।
সানজিদা আফরোজ বলেন, ‘কোভিড শুরুর প্রথমদিকে হঠাৎ লেডিস সেলুন ও বুটিকস বন্ধ করে দেই। স্টাফদের ছাঁটাই করে একদম ঘরে বসে থাকি। তবে উদ্যোক্তা হয়ে অনলাইনে কাজ করে যাই। নিজের পণ্য বিক্রির মাধ্যমে তাঁতি ও কর্মচারীদের আহারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন আলিজাবিডিকে সবাই একনামে দেশীয় পণ্য হিসেবে চিনবে। খুব শিগগিরই আমি জামদানি ব্লক ও হ্যান্ডপেইন্ট গাউন, টপস, শটস, স্কাফ করব। বিদেশিদের জন্য এবং দেশীয় সব অনুষ্ঠানের জন্য লেহেঙ্গা, ব্যাগ ও জুতা তৈরি করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন উদ্ভাবন সংযুক্ত হবে আমার উদ্যোগে। অনলাইনে ই-কর্মাস ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে দেশি পণ্য বিদেশে ছড়িয়ে যাবে। দেশ-বিদেশে আলিজাবিডি অফলাইন শপ ও অনলাইনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে।’
লেখক: ফিচার লেখক ও শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু কলেজ, ঢাকা।
এসইউ/এমএস