ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

বিজয়ের ৪৯ বছরে তরুণদের প্রত্যাশা

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:৫৬ এএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। যেখানে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে দেশ। ইতিহাসের এমনই এক সন্ধিক্ষণে উপনীত এবারের বিজয় দিবস। দিবসটির প্রাসঙ্গিকতায় যুক্ত হয়েছে নানা মাত্রা, নানা তাৎপর্য। বিজয়ের মাসে কী ভাবছেন বর্তমান তরুণরা? কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণের ভাবনা জানাচ্ছেন মামুন সোহাগ-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মো. শাহ্ নেওয়াজ বলেন, ‘ডিসেম্বর হচ্ছে অহংকারের মাস। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের নানা অর্জন থাকলেও ১৯৭১ সালে যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল; আজ বিজয়ের ৪৯ বছর পরও সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে পূরণ হয়নি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন এখনো দেখতে পাইনি। অর্জন করতে পারিনি স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য। আমাদের বিজয় সেদিনই সফল হবে; যেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে যাবে দেশ। সেদিন থাকবে না কোনো দুর্নীতি। থাকবে না কোনো অনাহারী। থাকবে না মৌলিক অধিকারে কোনো বাধা। থাকবে না অশিক্ষিত মানুষ। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল-সবুজের বাংলাদেশ হবে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ।’

রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নাজিয়া বিনতে বলেন, ‘এ বছর আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। ফলে সেই পরিসরে বিজয় দিবস কিংবা বিজয়ের মাস পালিত হবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে লড়াই কিংবা চ্যালেঞ্জের অভাব নেই। এবারও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশাল একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমরা। তবে তরুণ সমাজ এ সময়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা উদ্যোগ নিতে পারে, যাতে বিজয়ের মাসের গুরুত্ব যেকোনো অবস্থানে পালন করে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে পারি। ১৯৭১ সালে তরুণ সমাজ যেভাবে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে, একইভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে পারবো এ সময়েও।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় গৌরবের। ডিসেম্বর এলেই বিজয় কেতন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে নবরূপে উড়তে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শন ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও অর্থনৈতিক সাম্যের দেশ গড়া। সাম্প্রদায়িক শক্তি যখন দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় এবং দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে মানুষের অসহায়ত্ব দেখি; তখন নিশ্চয়ই স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে কষ্ট পেতে হয়। বিজয়ের প্রায় অর্ধশত বছর পরও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের জন্য সুখকর নয়। কষ্টার্জিত এ বিজয় আমাদের অস্তিত্ব, এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে আমাদের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হবে অনুপ্রেরণা।’

রাজধানীর বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী তানিয়া মুক্তি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা এ দেশ, এ বিজয়। তরুণদের ভূমিকা যেখানে অবর্ণনীয়। বিজয় মানে শুধু একটি পতাকা বা ভূখণ্ডই নয়। সময় এখন সেই অর্জিত ভূখণ্ডকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। বিজয় মানে এমন একটি দেশ, যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য। থাকবে মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ৫০ বছরে রয়েছে নানা অসামঞ্জস্য, অক্ষমতা । সেই সাথে রয়েছে অনেক প্রাপ্তি, অনেক শক্তি আর অনেক অর্জন। এখন সময় তাই সব অক্ষমতাকে জয় করে, দেশ ও দেশের মানুষকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা তৈরির।’

তরুণ সাংবাদিক ও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জুনাইদ আল হাবিব বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়কার তরুণদের চেতনার সঙ্গে আজকের তরুণদের একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়৷ আজকের তরুণরা হয়তো মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারেনি। কিন্তু প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করছে৷ সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। আজকে কোথাও যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন সর্বপ্রথম তরুণরাই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নিজেরা বিভিন্নভাবে এ দেশের সম্মান ছড়াচ্ছে বিদেশের মাটিতে। সাদাত, রাশেদদের গল্প আমরা কম-বেশি জানি। তবে এটা অস্বীকার করা যাবে না, দেশের একটা বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী আজও হতাশায় দিন পার করছে। বিজয়ের এ মাসে একজন তরুণ হিসেবে প্রত্যাশা করি, দেশটি যেন বেকারত্বের গ্লানি থেকে মুক্তি পায়।’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী তিতলি দাস বলেন, ‘দেশের অগ্রযাত্রায় তরুণদের ভূমিকা বরাবরই ব্যাপক প্রাধান্য পেয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে, নিপীড়িতকে বিচার পাইয়ে দিতে, এমনকি নিজেদের অধিকার বাস্তবায়নে রূপ দান করতে তরুণরা সর্বদাই হয়ে উঠেছে বজ্রকণ্ঠী। প্রিয় স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছে আত্মসম্মান বোধ সম্পর্কিত জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার সুযোগ। যা যেকোনো জাতির জন্যই বহু কাঙ্ক্ষিত, বহু মূল্যবান। বিজয়ের এ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তরুণ সমাজের হাত ধরে তাদের শক্ত সামর্থ্যবান কাঁধে দেশের উন্নয়নে ভার প্রদান করে দেশের সব নাগরিকের উচিত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রে বলীয়ান হওয়া।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘পাকিস্তান সরকারের পরাধীনতার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দোরগোড়ায় বাংলাদেশ। দুঃখিনী মায়ের কোল ছেড়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতে ঘর ছাড়া হয়েছিল হাজারো তরুণ। তাদের রক্তে রঞ্জিত আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। স্বাধীনতা মানে শুধু একটি রাষ্ট্র বা একটি সরকার ব্যবস্থা নয় বরং দেশকে পৃথিবীর বুকে সমৃদ্ধির সুবর্ণ শিখরে আরোহন করা। যেখানে তরুণদের ভূমিকা ও কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। সজীব ও তরুণ মস্তিষ্কের লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজন শুধু সুন্দর প্ল্যাটফর্ম ও সুস্থ মস্তিষ্কের বসবাসযোগ্য সমাজচিন্তা। নতুবা ইন্টারনেটের অপব্যবহার, ফেসবুক ও মোবাইল আসক্তে বিলীন হয়ে যাবে তারুণ্যশক্তি, মেধাশূন্য হয়ে পড়বে সমাজ ও সভ্যতা।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বর্তমান তরুণ সমাজের নানাবিধ চিন্তা রয়েছে। তবে আমার মনে হচ্ছে, আজ কেবল নিজেকে নিয়ে, নিজের উন্নতি, নিজের ক্যারিয়ার এসবের ভাবনায়ই মগ্ন। অধিকাংশের চিন্তা যেন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। করোনা পরিস্থিতি যুদ্ধ অপেক্ষা কম নয়। এ যুদ্ধ জয়ের জন্য যে মনোবল, উদ্দীপনা, সচেতনতা দরকার; অধিকাংশেরই তা নেই। তরুণ সমাজ আজকের এ কঠিন পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে সবাইকে সচেতন করতে পারে। চাইলেই চিন্তা-ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে পারে। স্বাধীন দেশের উত্তরসুরী হয়ে আমরা যেন পূর্বসুরীদের আত্মত্যাগ ভুলে না যাই। তা উজ্জ্বলভাবে যেন পরের প্রজন্মে স্থানান্তরিত করতে পারি, সেই প্রত্যাশা রইল। যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলতে পারি, তবেই আমরা বদলে দিতে পারি দেশের ভবিতব্য প্রতিচ্ছবি।’

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন