১২১ তরুণের পরিচ্ছন্নতা অভিযান
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক রূপের কারণে বিশ্বের দরবারে বেশ সমাদৃত এ দেশ। গ্রামবহুল এ দেশের প্রায় পঁচাত্তর ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। এসব গ্রামের সৌন্দর্যকে প্রকৃতির আরেক লীলা নিকেতন মনে হয়। তবে শহরের চিত্র এর ঠিক উল্টো।
রাজধানীর দিকে লক্ষ্য করলেই বড় ফারাক দেখা যায়। রাজধানীতে কালবদলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, গাছ কাটা, খাল ভরাট, কোলাহল ঢাকার নিয়মিত চিত্র। এসব পরিবেশকে বাঁচিয়ে স্বচ্ছ সমাজ উপহার দিতে কাজ করছেন একঝাঁক সেচ্ছাসেবী তরুণ।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সবুজবাগে ১২১ সদস্যদের সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রাজারবাগ শান্তি সংঘ’। সংগঠনটির উদ্যোগে গত ৭ মাসে এলাকার সব ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করছেন তরুণরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে প্রতিদিনই বর্জ্য সংগ্রহ করছেন।
শুরুতে নিজেদের অর্থায়নে শুরু করলেও দীর্ঘমেয়াদী এ কাজের জন্য পরবর্তীতে তা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম প্রাথমিক বর্জ্য সেবা প্রদানকারীর (প্রাইমারি কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার-পিসিএসপি) আওতায় নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে ডিএসসিসির নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে নির্ধারিত স্থান থেকে ময়লা-আবর্জনা মাতুয়াইলের ভাগাড়ে (ল্যান্ডফিল) ফেলা হয়।
এ ব্যাপারে রাজারবাগ শান্তি সংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মেহেদি হাসান শাকিল বলেন, ‘আমাদের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে সংগঠনের সবাইকে নিয়ে বিভিন্ন রকমের পরিকল্পনা করি। এরজন্য আমরা মাসব্যাপী এলাকার মধ্যে জরিপও করি। কোথায় কোথায় ময়লা ফেলা হচ্ছে, তা দেখি। কারা এ ময়লা ফেলছেন, তা-ও আমরা নজরে রাখি।’
তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলি। তাদের কাছে আমাদের পরিকল্পনা জানাই। পরবর্তীতে তাদের সহযোগিতায় ‘পরিবর্তন’ নামে এলাকায় অভিযান শুরু করি। এর প্রধান কাজ আমাদের সমাজকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।’
শকিল বলেন, ‘কয়েকমাস নিজেদের অর্থায়ন ও কাউন্সিলরের থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করি। মানুষকে বর্জ্য দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করি। কাউন্সিলরের পরামর্শে সেই ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে রাখি। এ ছাড়াও সাধ্যমতো খালের আশেপাশের বর্জ্যগুলোও অপসারণ করার চেষ্টা করি। তবে সেটা আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ কাজের কয়েকমাস পরই সিটি করপোরেশন থেকে একই পদ্ধতিতে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পিসিএসপি করার নির্দেশনা আসে। তাই আমরা এ কাজকে সম্প্রসারণ করতে পিসিএসপির আওতায় নিয়ে আসি। বর্তমানে এলাকার সবাই আমাদের বর্জ্য দেয়। এখন যেখানে-সেখানে ময়লা পড়ে থাকে না। তবুও এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সর্বদা নজর রাখি।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল সরকার বলেন, ‘সংগঠনের যাত্রা শুরু ২০০৯ সালে। দীর্ঘসময় ধরে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছি। এখন পর্যন্ত আমরা সমাজের অনেক সুবিধাবঞ্চিতদের সুবিধা দিয়েছি। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছি। ভবিষ্যতেও আমরা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চাই। আমরা সমাজের পরিবর্তন চাই।’
তারা এলাকাকে নিরাপদ করতে চান। এ লক্ষ্যে পুরো এলাকাকে সিসিটিভির আওতায় আনতে চান। তরুণ বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান। এলাকায় মাছের বড় খামার করতে চান। সেখান থেকে অনেক তরুণের কর্মসংস্থান করে দিতে চান। এলাকার সব মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। এর জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছে সংগঠনটি।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/জেআইএম