ফ্রিল্যান্সিং করে সংসারের হাল ধরেন মুরসালীন
শেখ নাসির উদ্দিন
আগামীর পৃথিবীটা তথ্যপ্রযুক্তির। সামনে এগিয়ে যেতে হলে থাকতে হবে সঠিক তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান। গদবাঁধা বই পড়ে সবাই চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরতে পারছেন না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বেকারত্ব। হতাশায় ভেঙে পড়ছে কর্মক্ষম তরুণরা। তবে অন্য সব তরুণ থেকে ভিন্ন ঢাকার শ্যামপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরসালীন আহমেদ।
তিনি শিখে নেন পড়াশোনার পাশাপাশি হাতের স্মার্টফোন দিয়ে অনলাইনে কিভাবে আয় করা যায়। ইউটিউবে সেসব ভিডিও দেখতে দেখতে শিখে নেন গুগল অ্যাডসেন্স কিভাবে করতে হয়। এরপর ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন আর ডিজিটাল মার্কেটিংও শিখে নেন। তখন মাত্র অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তখনই টুকটাক আয়ও করতেন।
২০১৬ সালে জীবনের প্রিয় ব্যক্তি বাবাকে হারিয়ে ছন্দপতন ঘটে। নিজেকে সামলে আবার এগিয়ে যান আর তখন থেকে ফ্রিল্যান্সিং করে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা। আর ২১ বছর বয়সে পুরো সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। মুরসালীনের ‘ওয়ার্ল্ড ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি ফেসবুকের জন্য কন্টেন্ট তৈরি ও বিভিন্ন ধরনের এজেন্সির হয়ে কনটেন্ট প্রজেকশন এবং ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং করেন। আর এখন তিনি প্রতিমাসে বেশ ভালো টাকা আয় করেন।
শুধু নিজেই অনলাইনে স্বনির্ভর হননি, গত কয়েক বছরে অর্ধশত মানুষকে বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়েছেন। স্বপ্ন দেখেন নিজের প্রতিষ্ঠানকে বড় করে বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন। এ ছাড়াও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছেন।
তরুণ এ ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘আমি কখনো চাকরির আশায় বসে থাকতে চাইনি। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে চাইলেই স্বনির্ভর হওয়া যায়। ছোটবেলা থেকে প্রযুক্তির প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল। ইউটিউব আমার প্রযুক্তি শিক্ষক। সেখানে শিখেছি কিভাবে অনলাইনে আয় করা যায়। বর্তমান যুগের ডিজিটাল মার্কেটিং একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। দিন দিন এর গুরুত্ব বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ শুরু করতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে। সঠিক জ্ঞান না থাকলে সফল হওয়া যায় না। এরপর অনুসন্ধান করতে হবে প্রতিনিয়ত চোখ-কান খোলা রেখে। পাশাপাশি জানতে হবে বিভিন্ন টুলসের ব্যবহার। মানুষ কী ধরনের কনটেন্ট পছন্দ করছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবেই না একজন ফ্রিল্যান্সার সফলতা পাবে।’
মুরসালীন আরও বলেন, ‘একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে বিশ্বাস করি, সফলতার কোনো শর্টকাট পথ নেই। মানুষ নিজের সততা, একাগ্রতা, কাজ এবং পরিশ্রম দিয়ে সফল হয়ে ওঠে। যেখানে মানুষের কাজের কোনো সততা নেই; সেখানে কাজের প্রকৃত সম্মান পাওয়া যায় না। প্রকৃত সফলতা পাওয়া যায় না।’
তিনি মনে করেন, প্রতিটি মানুষের সততা ঠিক রেখে কাজ করা উচিত। পরিশ্রম মানুষকে সফলতার চূড়ায় নিয়ে যায়। সততা ও ধৈর্য ধরে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।
এসইউ/এএ/এমএস