ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জানা-অজানা গল্প

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

অনয় মুখার্জী

যার সম্পর্কে লেখাটি লিখছি, তিনি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমার সাথে সম্পর্কটা গুরু-শিষ্যের। যার কাছ থেকে আমি প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হই। তিনি একজন বহু গুণে গুণান্বিত মানুষ। কর্মজীবনে তিনি বহুমাত্রিক। তার সাফল্য বহুবিধ। তিনি একজন নেতা, একজন নায়ক, একজন বন্ধু ও একজন অভিভাবক। মানুষকে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা তার মাঝে অশেষ। তিনি একজন শক্তিমান নেতা; যিনি সবাইকে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করে এক আদর্শতলে আসতে। কর্মের প্রতি নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও সততার মাধ্যমে নিজেকে আলোকিত করেছেন সর্বমাঝে। তার জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের সংমিশ্রণ সম্মানের শিখরে পৌঁছে দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করেছে।

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা বৃহৎ অংশে জানি বা চিনি একজন স্বনামধন্য অভিনেতা হিসেবে। পাণ্ডিত্যপূর্ণ দক্ষতা ও সাবলীল অভিনয়ে প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে নায়ক হয়ে উঠছিলেন তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চরিত্রে মানুষের হৃদয়ে পাকাপোক্ত করেছেন নিজ অবস্থান। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে কায়রো, মিশর অংশগ্রহণসহ ফোবানা সম্মেলন, বার্লিন কার্নিভাল ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে নিজ অবস্থানের সাথেসাথে উজ্জ্বল করেছে বাংলাদেশের মুখ।

তার বহুমাত্রিক গুণাবলীর কথা আজ আর অজানা নেই। তিনি ষাটের দশকে ছাত্রজীবন থেকেই জড়িত ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। মিছিল-মিটিংয়ের অগ্রভাগে অংশ নিয়েছেন প্রতিনিয়ত। সে সময় তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের নেতা এবং একজন পরিচিত নাম। ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্যে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। যা ছিল তার জীবনের পরম সৌভাগ্যপূর্ণ সময়। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যে কজন পথিকৃতের হাত দিয়ে নবনাট্য আন্দোলন শুরু হয়, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনে সারাদেশ ঘুরে বেরিয়েছেন তৃণমূলে নাট্য আন্দোলন সংগঠনে। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৯৮৫ সালে ‘বাংলাদেশ যুব ঐক্য’ গড়ে ওঠে। সংগঠনটি পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ও যুব সংগ্রাম পরিষদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন পেশাদারী সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৯০-৯৪ সালে সম্পাদনা করেছেন দৈনিক লাল সবুজ পত্রিকা। ১৯৮৬ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিয়মিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কলাম-নিবন্ধ লিখে চলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রতিটি গণমাধ্যমে তিনি সোচ্চার ছিলেন এবং এখনও রয়েছেন। তিনি মৌলিক সাহিত্য নিয়ে বিস্তর কাজ করেছেন। আজ পর্যন্ত প্রকাশিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা ২০টি বা তারও বেশি।

২০০৪-০৫ সালে নির্মিত ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটকে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। যে নাটকের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো উন্মোচিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পেছনের মূল ষড়যন্ত্র। কে বা কারা এর সাথে যুক্ত ছিলেন, তা পরিষ্কার হয়েছিল জাতির সামনে। যে কারণে তিনি দেশ ও বিদেশে জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছেন অনেকবার। যা সে সময় আওয়ামী লীগকে সামনে পথ চলতে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে।

২০১৮ সালে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামক একটি সংগঠন। যার মূল উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া তরুণ ও যুব সমাজের মাঝে। ১৯৭৫ পরবর্তী অপরাজনীতি-অপব্যাখ্যা খণ্ডন ও সত্য প্রতিষ্ঠাই যার উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে এবং তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্ত করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

এ সংগঠনের একজন কর্মী হিসেবে আমার সৌভাগ্য হয় পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থেকে কাজ করার। দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ঘুরে ঘুরে সম্প্রীতির কথা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা ছড়িয়ে দেওয়ার। এসময় আমি দেখেছি, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আপামর জনতার আবেগ ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। প্রতিনিয়ত আমি আবিষ্কার করেছি একজন নতুন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি যখন বক্তৃতা করেন, সব সদস্য সেটা তন্ময় হয়ে শোনেন। মানুষের মন বোঝার ক্ষমতা তার অশেষ, আচরণে মনে হয় যেন বহুদিনের আলাপ। যার কারণেই খুব অল্প দিনেই সম্প্রীতি বাংলাদেশ দেশের প্রতিটি প্রান্তে একটি পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে।

আজ আমি যখন লিখছি; তিনি তখন ৭০ বছর পেরিয়ে ৭১ বছরে পড়তে চলেছেন। ১৯৫০ সালে ২৩ সেপ্টেম্বরে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আমি তার শতায়ু কামনা করি। প্রার্থনা করি, আরও দীর্ঘসময় সমাজ সংস্কার ও আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির শুদ্ধ চর্চায় যেন কাজ করে যেতে পারেন।

লেখক: সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

এসইউ/এএ/জেআইএম

আরও পড়ুন