একজন আলোর ফেরিওয়ালার গল্প
সমাজের অন্ধকার দূর করতে এগিয়ে আসেন অনেকেই। তারা নিরন্তর কাজ করে যান। বিনিময়ে চান না কিছুই। শুধু সমাজকে বদলাতে চান। দিন বদলের এমনই এক যোদ্ধা হারুন-অর-রশীদ। তিনি একজন আলোর ফেরিওয়ালা। সমাজকে আলোকিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। একযুগ ধরে বই পৌঁছে দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। গ্রাম, শহর, বন্দর- যেখানে যেভাবে পারছেন পৌঁছে দিচ্ছেন। স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারসহ সবখানে ছুটছেন সভ্যতার আলো হাতে।
বইপ্রেমী মানুষটির জন্ম কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া গ্রামে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। বর্তমানে ঢাকার নবাবগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত। বই নিয়ে তার পাগলামির শেষ নেই। বইয়ের পাতার ঘ্রাণে খুঁজে পান হারানো শৈশব। বই নিয়ে তার কাজের অন্ত নেই। অনলাইনে কয়েকশ দেশি-বিদেশি বইয়ের রিভিউ লিখে ঝড় তুলেছেন। বইয়ের কথা ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করেন সব সময়। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও কাজ করে যাচ্ছেন।
গ্রামের বাড়ি বাড়ি, শহরের বাসায় বাসায় গিয়ে বই পৌঁছে দিচ্ছেন। সপ্তাহ শেষে আবার নতুন বই দিয়ে আসছেন। নিয়ে আসেন পুরোনো বই। করোনার সময়েও থেমে নেই তার কাজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই পৌঁছে দিচ্ছেন ঘরবন্দি মানুষের কাছে। সবাই যখন ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আসক্ত, একজন বইপ্রেমী হারুন তখন বই কাঁধে ছুটে বেড়ান গ্রামের পর গ্রাম। মানুষগুলোকে বইয়ের দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনতে সবার হাতে তুলে দিচ্ছেন বই।
হারুন জানান, তরুণ সমাজকে বইমুখী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। মাদকাসক্ত তরুণদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বই। তাদের অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে আনছেন বইয়ের দুনিয়ায়। গত দশ বছরে এমন প্রায় দুই শতাধিক তরুণকে বইয়ের জগতে ফিরিয়ে এনেছেন। তাদের হাতে শোভা পাচ্ছে বই। এ ছাড়াও অনলাইনের আসক্তি কমিয়ে তরুণদের একটি বিশাল অংশকে এভাবেই ফিরিয়ে আনছেন বইয়ের রাজ্যে।
নিরন্তর ছুটে চলা বইপ্রেমী মানুষটি সভ্যতার মশাল হাতে কাজ করে যাচ্ছেন ক্লান্তহীনভাবে। তিনি স্বপ্ন দেখেন একটি সভ্য সমাজের। তাই তো দেশের সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে লাইব্রেরি গড়তেও অসামান্য অবদান রাখছেন। বিত্তশালীর কাছে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেন অর্থ। সেই অর্থ দিয়ে একাধিক অঞ্চলে গড়ে তুলছেন উন্মুক্ত পাঠাগার। সেলুন কিংবা চা-কফির দোকানেও পড়ার জন্য বই দিয়ে যাচ্ছেন।
হারুনের আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি একজন লেখকও। শুধু বইয়ের প্রচারেই সীমাবদ্ধ নন। ২০২০ সালের বইমেলায় একটি মৌলিক থ্রিলার প্রকাশ হয়েছে। বইটি সাড়াও ফেলেছে। আরও কিছু বই প্রকাশের অপেক্ষায়। এ সম্পর্কে হারুন-অর-রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বই নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে। সে অনুযায়ী কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত। সারাজীবন বই নিয়েই কাজ করতে চাই। এভাবেই বই বিমুখ প্রজন্মকে ফেরাতে চাই বইয়ের পাতায়।’
> আরও পড়ুন-
অস্ট্রেলিয়ায় সেরা শিক্ষক হলেন বাংলাদেশের মোয়াজ্জেম
সমুদ্রের পানি পরিশোধনের ফিল্টার তৈরি করলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী
৪৪ বছর ধরে ছবি বাঁধাই করেন সুভাষ
যেভাবে শ্রেষ্ঠ মা হলেন নার্গিস সুলতানা
এসইউ/এএ/পিআর