ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

সেলাই আপু রুবাবার সফলতার গল্প

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০২০

বেনজির আবরার

উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা মোটেই সহজ কাজ নয়। প্রচুর পরিশ্রম, ইচ্ছা ও সততা না থাকলে কোনো উদ্যোগেই সফলতা পাওয়া যায় না। চাকরির বাজারে এখনো অনেক নারীকে প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে দেখা যায়। আর এ অবস্থার মধ্যে কোনো নারী যদি উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, তাহলে পুরো সমাজ তার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে ভুলে যায় না!

এত বাধা, এত প্রতিকূলতার মধ্যেও কিছু মানুষ আছেন, সব কিছুকে একদিকে সরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন নিজের স্বপ্নের লক্ষ্যে। সফল করছেন কষ্ট ও পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা নিজেদের উদ্যোগগুলোকে! তেমনি একজন ‘সেলাই আপু’! দেশের পোশাক শিল্পে বেশ পরিচিত একটি নাম। এই সেলাই আপু রুবাবা আকতারের অসাধারণ একটি উদ্যোগ ‘সেলাই’।

প্রায় ১ যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত সেলাই। দেশের নামিদামি ব্র্যান্ড হওয়ার পথটা খুব সহজ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে রুবাবা আকতারের আগ্রহ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়েও আগ্রহ থেকে পড়া শুরু করেন।

Benjir-Abrar-1

এর মাঝেই বিয়ে হয় প্রকৌশলী আরিফ চৌধুরীর সাথে। ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায় এখানেই। স্বামীর অনুপ্রেরণায় ইচ্ছা, শখ ও স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরের চেষ্টা শুরু হয়। একটি দোকান ও দুটি সেলাই মেশিন দিয়ে যাত্রা শুরু করে সেলাই। প্রতিষ্ঠার শুরুতে চাকরির পাশাপাশি স্ত্রীর ব্যবসায় সময় দিতেন আরিফ।

সেলাইয়ের শুরু প্রসঙ্গে রুবাবা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকের দিনগুলোর কথা মনে পড়তে চাপা কান্না চলে আসে। কোনো অর্ডার পেতাম না। দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করতাম। ছোট মেয়েটা যখন জন্ম নেয়; ব্যবসা তখন মাত্র আস্তে আস্তে এগোচ্ছিল। আমি মেয়েকে কোলে রাখতাম আর আরিফ থান কাপড়ের বস্তা নিয়ে এ দোকান থেকে ওই দোকান ঘুরতো!’

শুধু ইচ্ছা নয়, অদম্য পরিশ্রমের ফলে আজকের সেলাই একটি দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ড হতে পেরেছে। বর্তমানে সেলাই বেশ বড় একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। শুরু বাংলাদেশ নয়, দেশের বাইরে থেকেও প্রচুর অর্ডার আসে। পোশাকের বাইরেও জুতা এবং বাচ্চাদের খেলনা নিয়ে কাজ করছেন রুবাবা। তার নতুন একটি উদ্যোগের নাম ‘জুনিয়র বাই আরিজা’। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে বাচ্চাদের খেলনাসহ শিক্ষণীয় বেশ কিছু উপকরণ।

Benjir-Abrar-1

সেলাইয়ের কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াটিও বেশ সুন্দর। সেলাইয়ের বেশিরভাগ কর্মী হচ্ছেন নারী। এ প্রসঙ্গে রুবাবা বলেন, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে আমি নারীদের প্রাধান্য দেই। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত নারী, যারা সমাজে অবহেলিত ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। এমন প্রায় অর্ধশতাধিক নারী কর্মী আছেন সেলাইয়ে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে খানিকটা দূরে থাকলেও গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে রুবাবা আকতার সেলাইয়ের পেইজে নিয়মিত লাইভের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে উঠেছেন ‘সেলাই আপু’ নামে। চারটি আউটলেট এবং ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সেলাইকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়।

Benjir-Abrar-2

এ ছাড়াও করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সেলাই এখন দেশেই উৎপাদন শুরু করেছে নিজস্ব ব্যান্ডের পোশাক ‘কালার লাইফ’ ও ‘ব্লু বেরি’। এতে ব্যাপক সারা মিলেছে। ক্রেতারাও অনেক খুশি কম দামে বিদেশি মানের পোশাক পেয়ে। সেলাইয়ের ইচ্ছা, সারাদেশের মানুষের কাছে নিজের ব্রান্ডের পোশাক ছড়িয়ে দেওয়া।

প্রতিষ্ঠার একযুগ চলে গেছে। এত পরিশ্রম, এত চেষ্টার ফসল সেলাই এগিয়ে চলছে অনন্য গতিতে। সেলাই আপু বিশ্বাস করেন, সততা ও ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায়। পোশাকের ব্যবসায় সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বিশ্বাস ও ভরসা। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসায় জায়গাটি ধরে রেখে নিজের লক্ষ্যে একনিষ্ঠভাবে এগিয়ে গেলেই সফলতা আসবে। বিশ্বাস রাখতে হবে নিজের প্রতি, বিশ্বাস রাখতে হবে নিজের পছন্দ ও লক্ষ্যের প্রতি!

এসইউ/এএ/পিআর

আরও পড়ুন