ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

ঈদের সেই আনন্দ কোথায় পাবো?

মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার | প্রকাশিত: ১১:৪৬ এএম, ২৬ মে ২০২০

করোনা মহামারীর প্রকোপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এর প্রভাব কম নয়। চলমান সংকটে আতঙ্কিত সময়ের মধ্যে আমাদের সময় পার হচ্ছে। পৃথিবীর চিত্র বলে দেয়, সব কিছু থমকে আছে। আজ বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার শিখরে আরোহন করেও মানুষের অসহায়ত্ব প্রকাশ পাচ্ছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কাছে।

আমাদের এবারের ঈদটি স্মরণীয় হিসেবে উল্লেখ করতে চাই। এর মূল কারণ এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ঈদ উদযাপন আগে কখনো হয়নি। সুতরাং জীবনের এক কঠিন সময় নিশ্চয়ই অতিক্রম করছি। চলমান বৈশ্বিক মহামারীতে আমাদের আনন্দ, আমাদের খুশি বা ঈদের হাসি সবকিছু থমকে গেছে। চলছে করোনা মোকাবেলা করে টিকে থাকার যুদ্ধ।

ঈদ বাড়তি এক অনুভূতি নিয়ে হাজির হয় আমাদের মাঝে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে মেলবন্ধন তৈরি হয় ভ্রাতৃত্বের। আমরা ঈদের দিন ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় শেষে একে অন্যের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে থাকি। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, আড্ডা দেওয়া আমাদের চলমান সামাজিক প্রথার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে প্রচলিত সহজাত এ চিত্র পাল্টে নতুনভাবে উদযাপন হলো এবারের ঈদ। ইতিহাসের পাতায় হয়তো চলমান পরিস্থিতিতে উদযাপিত ঈদ অমর হয়ে থাকবে। আমরা স্মৃতির পাতা হাতরে হয়তো বা চমকিত হবো সময়ের আবহে।

এবারের ঈদ সীমিত আকারে উদযাপিত ঈদ। সকালে আম্মুর হাতের রান্না মজাদার খাবারের পসরা মনে ধরলো না। চলমান সংকটে আমাদের মনে আনন্দের পরিবর্তে শঙ্কা বেশি। কেমন যেন গুমোট নিস্তব্ধ পরিবেশ। হালকা কিছু খাবার মুখে দিয়ে বেরিয়ে পড়া ঈদের নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে। করোনা মহামারীর কারণে এবার ঈদগাহের পরিবর্তে আমাদের মহল্লার মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বল্প পরিসরে ঈদের নামাজ আদায় করা। যা ছিল আমাদের জীবনে এক নতুন অভিজ্ঞতা। নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানোর প্রথা থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফিরে এসে পরিবারের সাথে সময় অতিবাহিত করেছি সবাই। সার্বিক পরিস্থিতি বলে দেয়, মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক অনুভূত হয়েছে। আনন্দের উচ্ছ্বাস যেন জীবনের শঙ্কার কাছে পরাজিত হয়েছে। এ বিজয় হয়তো বা করোনাভাইরাসের।

বাড়িতে বন্দি জীবন ঈদের দিন কিছুটা বেমানান মনে হলো। আমার হৃদয় প্রকৃতির স্পর্শ পাওয়ার বাসনায় ব্যাকুল। গোধূলিলগ্নে তাই একটু বের হলাম প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে। আমার বাড়ি খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলায়। আমার এলাকার বুক দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। এর দূরত্ব আমার বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার। কৈশোরে নদের তীরে হেঁটেছি, নদের তীরে বসে গল্প করেছি। স্মৃতিময় সে সময়ের ছবি এঁকে আমি পুলকিত বোধ করলাম। মনের কাছে পরাজিত হয়ে আমি নদের তীরে অপরাহ্নে ছুটে গেলাম।

পারিপার্শ্বিক পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করলো, নদের বুকে ছোট ছোট কয়েকটি নৌকা আপন মহিমায় দুলছে। স্রোতের সাথে ভেসে চলছে হাতেগোনা কচুরিপনা। প্রবাহমান নদের কলকল ধ্বনি আমার মনে প্রেমের আবেগ সঞ্চার করল। স্বকীয় প্রবাহমান চিত্র দেখে মনে হলো, আজ যেন যৌবন ফিরে পেয়েছে, ভরা জোয়ারে বয়ে চলেছে সে আপন গতিতে।

আমি তীরে দাঁড়িয়ে কিছুটা সময় বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে নদের বুকে নৌকায় চড়ার লোভ সম্বরণ করতে পারলাম না। মাঝিকে ডেকে উঠে পড়লাম তার নৌকায়। কিছুটা সময় ভৈরব নদের ভরা যৌবনে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করলাম। প্রকৃতির সাথে মেলবন্ধনে গুনগুনিয়ে দু’লাইন গান ধরলাম। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই কালজয়ী গান-
‘ও নদী রে,
একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে
বলো কোথায় তোমার দেশ
তোমার নেই কি চলার শেষ
ও নদী রে...’
গানের শেষ লাইনে নিজেকে নদীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করলাম।
‘সুখ দুঃখের কথা কিছু কইলে না হয় আমারে’।

নদী ছুটে চলেছে আপন গতিতে। কিন্তু তার দুঃখ মানুষ যদি বুঝতো তাহলে নদী দূষণ, নদী দখল, নদীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা থেকে বিরত থাকতো। মনের অজান্তে আমার কিছুটা সংশয় তৈরি হলো তাকে হারানোর, গ্রাস করার ভয়। সমাজের সেসব নদী দখলকারী মানুষের প্রতি ক্ষোভ তৈরি হলো। নদী বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশ। কিন্তু তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। মানুষ নদীর দুঃখ বুঝলে নিশ্চয়ই লোভের বশবর্তী হয়ে তার অকৃত্রিম বন্ধুর সর্বনাশে মনোনিবেশ করতে পারে না।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, সূর্য মামা বিদায় নিলো। নদীর উদারতায় একবুক ভালোবাসা গ্রহণ করে তার বয়ে চলা স্রোতের ধ্বনির মুগ্ধতা নিয়ে আর নদী দখলের শঙ্কা এবং চলমান করোনা মহামারীর উদ্বিগ্নতায় ঘরের দিকে পা বাড়াতে হলো। প্রকৃতির দেওয়া দান গ্রহণ করে ফিরে এলাম নিজ আঙিনায়। হাজারো নাগরিক ব্যস্ততা বা ঈদের সচরাচর চিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত এক চিত্র। নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চার করে কাটিয়ে দিলাম ঈদের দিন।

দিন শেষে প্রত্যাশা, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে মুক্ত হবে পৃথিবী। ঈদের যে প্রকৃত দিক হাসি এবং খুশি, তার প্রাণবন্ত উদযাপনে আমাদের উৎসবমুখর সময় অতিবাহিত হবে। আমরা আবারও স্বরূপে উদযাপন করবো ঈদ। দিন শেষে আমার এবারের ঈদ উদযাপন স্মৃতির পাতায় অমর হয়ে থাকবে। সমৃদ্ধ হলো স্মৃতি, প্রত্যাশার ঝুলিতে কেটে যাক সংকট, মুক্ত পৃথিবীতে হোক মানুষের বিচরণ।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন