ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

সচেতনতাই করোনা প্রতিরোধের একমাত্র উপায়

ডা. হিমেল ঘোষ | প্রকাশিত: ০২:০৬ পিএম, ০৯ মার্চ ২০২০

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়। চীনের উহান প্রদেশের একটি পাইকারি প্রাণি, সাপ ও মাছের বাজারের বেশকিছু দোকানি হঠাৎ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। প্রথমে স্বাভাবিক নিউমোনিয়ার মত মনে হলেও আস্তে আস্তে এটি চীনের মধ্যাঞ্চলীয় এ প্রদেশ ছাড়াও অন্যান্য অঞ্চল, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩৫ জন ও বাংলাদেশে ৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

প্রথমদিকে দেখা যায়, এসব দেশের আক্রান্ত নাগরিকরা মোটামুটি সবাই চীনের উহান প্রদেশে ভ্রমণ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে অনেকেই আক্রান্ত হন আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে। বর্তমানে এন্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশেই এ রোগের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। চীনসহ আক্রান্ত অন্যান্য দেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে বাংলাদেশের ভালো যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়া সার্কভুক্ত অন্য সব দেশেই এ রোগের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ায় বাংলাদেশও উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে।

নামকরণ: শুরুতে বোঝা না গেলেও পরে এ ধরনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তিদের শরীরে একটি নতুন ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। নতুন ভাইরাসটি করোনাভাইরাস। সার্স ভাইরাসের সাথে যার প্রায় ৭০% মিল রয়েছে। ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের নিচে এ ভাইরাসকে দেখতে মুকুট (ক্রাউন) বা সূর্যরশ্মির (সোলার করোনা) মত মনে হয় বলে এর নাম করোনাভাইরাস। নতুন এ করোনাভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নোবেল করোনাভাইরাস’ বা ‘উহান করোনাভাইরাস’ বা ‘২০১৯-এনসিওভি করোনাভাইরাস’।

corona-(1)

ধরন: ভাইরাসটি অনেকটা সার্স ভাইরাসের মতই ভয়ঙ্কর। সার্স ভাইরাসের সংক্রমণে ২০০২-২০০৩ সালে চীন ও হংকংয়ে ৭৭৪ জনেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ইতোমধ্যে সার্স সিওভি এবং মার্স সিওভি’র মত নোবেল করোনাভাইরাসও প্যানডেমিক রূপ লাভ করেছে। নতুন এ নোবেল করোনাভাইরাস জুনোটিক। এ ভাইরাস আগে পশু-পাখিতে রোগ সৃষ্টি করত। এখন মিউটেশন ঘটিয়ে মানবদেহেও রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়।

কোথা থেকে এলো: আগের মার্স বা সার্স করোনাভাইরাস যথাক্রমে উট ও বাঁদুড় থেকে বিস্তার লাভ করলেও এবারের নোবেল করোনাভাইরাস সাপ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাঁদুড় থেকে এ ভাইরাস সাপের শরীরে এসেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। তবে করোনা ভাইরাসটি একই সময়ে উষ্ণ ও শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণিদেহে কিভাবে টিকে থাকল, সেটাই এখন রহস্য।

ভয়াবহতা: ভাইরাসটি একেবারে নতুন বলে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত গবেষণা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ভাইরাসটি মানবদেহে কতদিন প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকতে পারে বা কত দ্রুত ছড়াতে পারে বা সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা কি, তা-ও অজানা। তবে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং সুপ্তিকাল প্রায় ২ সপ্তাহ বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি আরও ধারণা করা হচ্ছে যে, ভাইরাসটি আরও মিউটেশন ঘটিয়ে ‘এস’ ফর্ম থেকে ‘এল’ ফর্ম হয়ে আরও ধ্বংসাত্মক ও বিস্তীর্ণ এলাকায় বিস্তরণকারী হিসেবে পরিবর্তিত হয়েছে। এই মিউটেটেড রূপই বর্তমানে প্রায় ৭০% কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ি বলে মনে করা হচ্ছে।

লক্ষণ: এ ভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ হলো- জ্বর (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি) ও শুকনা কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় শ্বাসকষ্ট। পরবর্তীতে নিউমোনিয়াসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়াসহ মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। দেখা গেছে যে, ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ করতে ৫-১৪ দিন সময় নেয়। এ পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৩.৯% মৃত্যুবরণ করেছেন।

corona-(1)

প্রতিকার: যেহেতু ভাইরাসটি এখনো নতুন, এ পর্যন্ত কোনো টিকা বা কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। শুধু সাপোর্টিভ কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে এ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের শুশ্রূষা করা হচ্ছে।

সচেতনতা: সচেতনতাই এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। ভালোভাবে সাবান-পানি অথবা অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ডরাব দিয়ে হাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মাস্ক পরিধান করে থাকতে হবে। হাত দিয়ে নাক-মুখ ঘষা থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্দেহজনক আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকতে হবে। মাংস ও ডিম ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে। বন্য অথবা পোষা প্রাণির সংস্পর্শে সাবধানতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। অন্যকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি পার হওয়া পর্যন্ত সংক্রমিত ব্যক্তিকে আলাদা করে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। এয়ারপোর্ট স্ক্রিনিং করে উপদ্রুত এলাকা থেকে প্রত্যাগত যাত্রীদের চেক করতে হবে।

করোনা এড়াতে চাইলে: করোনাভাইরাস এড়াতে চাইলে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি-
১. অপ্রয়োজনীয় কোনো জনসমাবেশ এড়িয়ে চলবেন। অযথাই ভিড়ের সংস্পর্শে যাওয়ার দরকার নেই।
২. গণপরিবহন বা জনসমাগমে যেতে হলে সার্জিকাল মাস্ক বা পিএম-২.৫ মাস্ক ব্যবহার করুন।
৩. প্রয়োজন বা কারণ ছাড়া বিদেশে যাবেন না। ট্যুর পরিকল্পনা থাকলে কিছুদিনের জন্য তা বাতিল করুন।
৪. অনিবার্য কারণে বিদেশ ভ্রমণের প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন।
৫. ঘরে ফেরা, করমর্দন ও হাঁচি-কাশির পর ভালোভাবে সাবান দিয়ে অন্তত ৩০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন
৬. যেখানে সেখানে কফ-থুথু ফেলার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
৭. হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন।
৮. কারো সামনে মুখের ওপর গিয়ে হাঁচি-কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৯. আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করলে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

এসইউ/পিআর

আরও পড়ুন