শীতের অতিথি সুন্দরী খয়রা-কাস্তেচরা কি হারিয়ে যাবে?
নানা রঙের, নানা জাতের দেশীয় পাখির সঙ্গে শীতকালে যোগ হয় ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। তীব্র শীত থেকে বাঁচার জন্য পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ থেকে ছুটে আসে বাংলাদেশের জলাশয়গুলোতে। নির্দিষ্ট ৩-৪ মাস কাটিয়ে আবার তারা ফিরে যায়। শীতের সময়টা দেশের হাওর, বাওর আর জলাশয় মুখরিত থাকে পাখির কিচিরমিচিরে। এ পাখীদের মধ্যে অনিন্দ্য সুন্দর পরিযায়ী পাখী ‘খয়রা-কাস্তেচরা’।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পাখিবিদ ড. ইনাম আল হক জানান, খয়রা-কাস্তেচরার গায়ের রং অদ্ভুত সুন্দর। লালচে বাদামি শরীর ও উজ্জ্বল বেগুনি ডানা। তবে প্রজনন মৌসুমে এদের গায়ে লাল রং বেগুনির সঙ্গে মিলে অপরূপ এক রঙের সৃষ্টি করে। দেখলে মনে হবে, কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা ক্যানভাস।
এরা সাধারণত দেশের বিভিন্ন জলাশয় ও হাওরে অবস্থান করে। জলাশয়ের কাদামাটির হাটু পানিতে হেঁটে হেঁটে কাদা থেকে পোকামাকড় ধরে খায়। ওজনে এক কেজির কাছাকাছি এ পাখির দৈর্ঘ্য সাধারণত ৬৫ সেন্টিমিটার। প্রজনন মৌসুম গ্রীষ্মকাল। প্রজনন মৌসুমে সাধারণত ৩টি ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ৩ সপ্তাহ সময় লাগে।
এদের পছন্দের খাবার ছোট মাছ, কেঁচো, ছোট সাপ, ব্যাঙ এবং ছোট ছোট জলচর প্রাণি। খাবারের সন্ধানে কাদায় মুখ গুজে থাকে। তবে ডাঙায় তাদের প্রিয় খাবার পোকামাকড় ও টিকটিকি ইত্যাদি। তবে মৌসুম ভেদে তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়।
জলজ উদ্ভিদে ভরপুর হাওর বা জলাশয় খাবার এবং বাসস্থানের জন্য তাদের কাছে প্রিয়। শিকার খুঁজতে গিয়ে হাটুজলের বেশি নামে না। এরা কখনো একাকী, কখনো বা ঝাঁকবেঁধে বিচরণ করে। আবার জোড়ায় জোড়ায় ঘুরতেও দেখা যায়। বাংলাদেশে নির্বিচারে পাখি শিকার, জলাশয়ের জলজ উদ্ভিদ নষ্টের কারণে কমে এসেছে এদের সংখ্যা।
পাখী প্রেমিদের দাবি, এয়ারগানের ব্যবহার, বিষটোপ ও জাল দিয়ে পাখি শিকার বন্ধে আইনের প্রয়োগ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাখি দেখতে পাবে না। সেই সাথে নষ্ট হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। বন্যপ্রাণি বা পাখি টিকে থাকতে না পারলে পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকা সম্ভব হবে না।
তাই যত দ্রুত সম্ভব আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে হবে। সেই সঙ্গে অবৈধ জাল এবং এয়ারগান নিষিদ্ধ করতে হবে।
এসইউ/পিআর