নদীর তীরে শীতে কাঁপছে বেদে জনগোষ্ঠী
আশি পেরোনো বৃদ্ধ সিকান্দার এক সময় মাছের ব্যবসা করতেন। এখন বয়সের ভারে কাবু হয়ে পড়েছেন। তীব্র শীতে তার যেন যায়যায় অবস্থা। কথা বলার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন। শ্রবণশক্তিও প্রায় নাজুক। কর্মহীন এক দুর্বিষহ জীবন তার। জীবন যুদ্ধে যেন এক পরাজিত সৈনিক।
বৃদ্ধ কমলা খাতুনেরও একই অবস্থা। তীব্র শীতের তাণ্ডবে তিনিও যেন কাবু। তবুও তার একরাশ আশা, হয়তো কেউ এসে পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু কমলা খাতুনের গল্পটা করুণ! পৃথিবীতে কেউ নেই তার। এই বয়সে ভিক্ষা করেই চলে তার সংসার। বয়স্ক ভাতার কার্ডটিও পাননি।
তাই তো ক্যামেরা দেখে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কর্তৃপক্ষের টনক নাড়তে চাইলেন। তিনি শোনালেন হতাশার কথা। গত দু’বছর আগে কেউ একটি চাদর দিয়েছিল। সেটিকে পুঁজি করেই কোন রকমে জীবন পার করছেন। দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভিক্ষার করার মতো যে শক্তি দরকার, সেটিই তার নেই।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। প্রচণ্ড শীতল হাওয়া আর তীব্র কুয়াশার চাদরে জনজীবনে নেমে এসেছে অশান্তির ছায়া। কনকনে ঠান্ডাকে মোকাবেলা করতে অনেকেই অনেক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। তবে দারিদ্রপীড়িত বেদে জনগোষ্ঠীর ভালো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে ওঠে না।
ঠান্ডার প্রকোপ এখন ডাঙার মানুষের কাছেও এক অভিশাপের নাম। সেই রেশ পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত বেদে সম্প্রদায়ের মাঝেও। কী শীত, কী গ্রীষ্ম—নৌকাই তাদের বাসস্থান। তারা বেদে সম্প্রদায় নামেই বহুল পরিচিত। কোন রকমে মাছ ধরে জীবন চলে। কষ্টের যেন শেষ নেই।
তাদের থাকা-খাওয়া সব কিছুই নৌকায়। তাদের কষ্টের তীব্রতা বেড়ে যায় শীত মৌসুমে। তবু বাঁচতে হবে—এ বিশ্বাস নিয়ে জীবন যুদ্ধে টিকে আছেন। নিম্ন আয়ের লোক বলে গরম কাপড়ও কেনা হয় না। তাদের কেউ কেউ নৌকা ছেড়ে এখন ডাঙায় বাস করছে। কিন্তু সেখানেও ঝুপড়ি ঘর। কোন রকমে বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি। যেখানে প্রচণ্ড শীতল বাতাস ঢোকে।
চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের পেছনে ডাকাতিয়া নদীর তীরে প্রায় শতাধিক বেদে পরিবারের বাস। কেউ ডিঙি নৌকায়, আবার কেউ বাসা বেঁধেছেন নদীর তীরে। হতদরিদ্র মানুষগুলো প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে। অনেকে বলছেন, ‘অনেক তো আশার বাণী শোনালেন, এবার আমাদের আর আশাহত করবেন না। আমরা ভালো আছি। শুধু শুধু ছবি তুলে কষ্টটা আর বাড়াবেন না!’
সত্যিকারার্থেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। নদীর পানি খেয়েই তাদের তৃষ্ণাটুকু নিবারণ করতে হচ্ছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা যে কতটা নাজুক; সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। তবুও তারা বেঁচে আছেন। আমাদের উচিত, তাদের পাশে দাঁড়ানো। তবেই জয় হবে মানুষের, জয় হবে মানবতার।
এসইউ/এমএস