চা নিয়ে যে তথ্যগুলো জানলে অবাক হবেন!
চা কম-বেশি সব দেশেই জনপ্রিয়। পানীয় হিসেবেও মন্দ নয়। উপকারিতা-অপকারিতা মিলেই সারা বিশ্বে চায়ের রাজত্ব। বিশ্বের অনেক দেশ চা উৎপাদনে বিখ্যাত। সে তালিকায় রয়েছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, তানজানিয়া। তবে দৈনিক যে ব্যক্তি আট-দশ কাপ চা পান করছেন; তিনিও জানেন না চায়ের চমকপ্রদ এসব তথ্য। আসুন আজ জেনে নেই-
কবে চা পান শুরু: ২০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে চা পান শুরু হয় চীনে। মধ্য চীনের ইয়াং লিং সমাধিস্তম্ভে প্রাচীনকালে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যেসব নৈবেদ্য দেওয়া হতো; তার মধ্যে পাতা দিয়ে তৈরি শুকনো কেক দেখা যেতো। এসব পাতার মধ্যে থাকা ক্যাফেইন এবং থিয়ানিন প্রমাণ করে যে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ছিল চা পাতা। যা মৃতদেহের সঙ্গে দেওয়া হতো তাদের পরলৌকিক ক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে।
চা আসে কোথা থেকে: সব চা আসে এক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে। যত ধরনের চা আছে; সবই তৈরি হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস থেকে। এই চিরহরিৎ গুল্ম বা ছোট গাছ থেকে পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে তা চা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের চায়ের মধ্যকার পার্থক্যগুলো উদ্ভিদের চাষের ধরন, পরিস্থিতি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা রয়েছে।
ধর্মীয় অনুষঙ্গ: জাপানে চা আসে চীন থেকে ফিরে আসা জাপানি ধর্মগুরু এবং দূতদের হাত ধরে। ষষ্ঠ শতকের দিকে দ্রুত ধর্মীয় শ্রেণির মানুষদের পছন্দের পানীয় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। গরম পানির সংস্পর্শে এসে গ্রিন টি কয়েক শতাব্দী ধরে সংস্কৃতিমনা এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের কাছে প্রাধান্য পেয়ে আসছে।
রাশান ক্যারাভান চা: রুশদের কাছে বেশিরভাগ চা পৌঁছতো চীন থেকে রাশিয়ার পথে ক্যারাভান রুটে। উটের কাফেলা মাসের পর মাস ধরে ভ্রমণ করে মহাদেশজুড়ে চা বহন করত। রাতের ক্যাম্প-ফায়ারের ধোঁয়া চায়ের ওপর পড়তো এবং যতক্ষণে তারা মস্কো কিংবা সেন্ট পিটার্সবার্গ পৌঁছতো; পাতাগুলোয় ধোঁয়াটে স্বাদ তৈরি হতো। সেখান থেকে তৈরি হওয়া চায়ের স্বাদ আজকের দিনে ‘রাশান ক্যারাভান চা’ হিসেবে পরিচিত।
চীনের বাজারে ভাঙন: সপ্তদশ শতকে চীন এবং ব্রিটিশদের মধ্যে কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভাঙন ধরে। ফলে ব্রিটিশদের চায়ের জন্য অন্য দেশের দিকে মনোযোগ দিতে হয়। তাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একজন স্কটিশ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী রবার্ট ফরচুনকে নিয়োগ করেন। যিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিদেশি নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো অভিজাতদের কাছে বিক্রির জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি ২০ হাজার চা গাছ ও চারাগাছ গোপনে চীন থেকে দার্জিলিংয়ে রফতানি করেন।
দুধ চা: ভারতে প্রচুর জন্মানো চায়ের উদ্ভিদটি ছিল ক্যামেলিয়া সিনেনসিস অসমিকা নামে একটি উপ-প্রজাতির উদ্ভিদ। গ্রিন টি’র চেয়ে আসাম টি বেশি স্বাদযুক্ত কালো রংয়ের ছিল। সাধারণভাবে সকালের নাস্তার অন্তর্ভুক্ত আসাম চায়ের রং কড়া থাকায় তা লোকজনকে দুধ সহকারে পান করতে প্ররোচিত করেছিল। কিন্তু ইউরোপ মহাদেশের অন্যান্য স্থানে চায়ের সাথে দুধ খুব কমই পরিবেশন করা হয়।
টোস্টের সাথে চা: ১৬৫৭ সালে লন্ডনে টমাস গ্যারাওয়ে নামে এক লোক প্রথম খুচরাভাবে চা বিক্রি শুরু করেন। তখন অনেকেই বুঝতে পারেননি কীভাবে চা খাবেন। পাউরুটির উপর মাখন মাখিয়ে তার উপর ভেজানো চা পাতা ছড়িয়ে অনেকেই খেতেন। এরপর তাদের শেখানো হয়, ওই পাতা থেকে আলাদা করে লিকার চা বানিয়ে টোস্টের সঙ্গে খাওয়া যায়। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই টোস্টের সঙ্গে চা জনপ্রিয় হয়।
কফিকে ছাড়িয়ে চা: ঐতিহ্যগতভাবে তুরস্ক বিশ্বের বড় চা বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম। কৃষ্ণ সাগরের উপকূলের উর্বর ভূমি থেকে অধিকাংশ টার্কিশ ব্ল্যাক টি আসে। তুর্কি কফিও বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। তবে তুরস্কে সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হলো চা।
চায়ের জন্য বিপ্লব: ১৭৭৩ সালে আমেরিকার বোস্টন শহরের বাসিন্দারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল। চায়ের উপর আরোপ করা অতিরিক্ত করের জন্যই এ প্রতিবাদ। এরপর রাতের অন্ধকারে ব্রিটিশ জাহাজে অভিযান চালিয়ে প্রচুর চা পাতা ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
শব্দ করে চা পান: অনেকেই শব্দ করে চা খেতে পছন্দ করেন। এতে বিরক্ত হন অনেকেই। কিন্তু চা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চায়ের স্বাদ এবং ঘ্রাণ মন খুলে নিতে চাইলে এভাবেই চা খাওয়া উচিত। তবেই মনের মাঝে চায়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মাবে।
এসইউ/এমএস