২৫ লাখ টাকায় ভাসমান রেস্টুরেন্ট
শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া বাইপাস সড়কের পাশের লেকে খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে ভাসমান রেস্টুরেন্টটি। নাম রাখা হয়েছে ‘সম্পা মেরিয়ট বার-বি-কিউ অ্যান্ড ক্যাফেটেরিয়া জলস্বপ্ন’। গ্রামীণ আবহে রেস্টুরেন্টটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২৫ লাখ টাকা।
সরেজমিনে জানা যায়, শরীয়তপুর শহর থেকে আঙ্গারিয়া বাইপাস সড়কের ডানপাশের একটি লেকে আলোকসজ্জায় ঘেরা ভাসমান রেস্টুরেন্ট ‘জলস্বপ্ন’। বাঁশ ও কাঠের তৈরি ঝুলন্ত সিঁড়ি দিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে মনে হবে অন্য জগৎ। সিঁড়ির দু’পাশে সারি সারি গাছের চারা। ভেতরে ঢুকলে নৌকার মতো দোলে। কেউ হাঁটলে হেলেদুলে ওঠে। বামে একটি কিচেন। ডানে দুটি কাপল কেবিন। শেষ মাথায় কনফারেন্স রুম। মাঝখানে ছোট একটি গলি।
রেস্টুরেন্টে বসে চাইনিজ ও দেশীয় খাবার খাচ্ছে আগতরা। কনফারেন্স রুমে ৫০টি আসন। দুটি কাপল রুমে ৪০টি আসন। আসনগুলোতে বসলে খাবারের মেন্যু হাতে হাজির হন ওয়েটাররা। এর ডানে কিছু দূরে নাগরদোলা, চটপটি, ফুচকাসহ বিভিন্ন জলখাবারের দোকান।
জানা যায়, জলস্বপ্ন ৪০ শতাংশ জমি ওপর গড়ে উঠেছে। ২ লাখ টাকায় ৫ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ করতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিমাসে ৯০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
রেস্টুরেন্টের প্রধান শেফ তরিকুল ইসলাম কোতোয়াল বলেন, ‘এখানে বার-বি-কিউ, বার্গার, বিফ বার্গার, চিকেন বার্গার, চিকেন কারি, চিকেন চাওমিন, ফ্রাইড রাইস, ফ্রাই চিকেন, চিলি চিকেন, ভেজিটেবল, বিফকারি, চাইনিজ রোল, বডি কাবাব, ন্যাসুসসহ বিভিন্ন চাইনিজ, বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস ও দেশীয় খাবার পাওয়া যায়। এসব খাবার পরিপূর্ণভাবে খুব যত্নসহকারে তৈরি করা হয় এবং সুস্বাদু করতে চেষ্টা করি।’
ম্যানেজার সুজন বলেন, ‘আমরা ১১ জন স্টাফ কাজ করি। এতে আমাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। দূর থেকে অনেক মেহমান আসেন। তাদের খাবারের চাহিদা পূরণ করে থাকি। সব খাবার পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি এবং পরিবেশন করা হয়। সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে।’
রেস্টুরেন্টে খেতে আসা সুপ্তা চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম সোহাগ, নাজমুল হাসান বলেন, ‘খবর পেয়ে ভাসমান রেস্টুরেন্টে খেতে আসলাম। মনোরম পরিবেশ। খাবারের দামও ঠিকঠাক আছে। খাবারগুলোও সুস্বাদু।’
জলস্বপ্ন রেস্টুরেন্টের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম শাওন বলেন, ‘আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) থেকে আইন বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স করেছি। পরিবারের সবাই আইন পেশায় আছেন। কিন্তু আমি বেকারদের কথা চিন্তা করে রেস্টুরেন্টটি করেছি। যাতে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়।’
তিনি বলেন, ‘যশোরে ভাসমান সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা দেখেই ভাসমান রেস্টুরেন্ট করার পরিকল্পনা করি। এখানে শরীয়তপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের পার্ট টাইম জবের ব্যবস্থা করেছি। যদিও রেস্টুরেন্ট করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তবে পরিবারের সহযোগিতায় গড়ে তুলতে পেরেছি।
শাওন আরও বলেন, ‘মোস্তফা কাজিসহ বন্ধুদের নিয়ে পাঁচ মাস পরিশ্রম করেছি। স্থানীয় কারিগররা গোলপাতা, বাঁশ, কাঠ, লোহার অ্যাঙ্গেল ও ২০০টি ড্রাম দিয়ে রেস্টুরেন্টটি নির্মাণ করেছেন। এটি আল্লাহর ইচ্ছায় বন্যায় ডুববে না, ঝড়ে উড়ে যাবে না, ভূমিকম্পেও ভাঙবে না।’
মো. ছগির হোসেন/এসইউ/পিআর