কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে বথুয়া শাক
বথুয়া শাক মূলত এক ধরনের আগাছা। এটি কেউ চাষ করে না। জমিতে আপনা আপনি জন্ম নেয়। তবে শহরের বাজারে আঁটি বেঁধে বিক্রি হয়। দামে খুব সস্তা। উত্তরবঙ্গে এ শাক বেশি জন্মে। এ শাকের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মো. হুমায়ন কবির রানা-
বৈশিষ্ট্য: এ শাকের গড় উচ্চতা ২-৩ ফুট। এটি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। গাছের পাতার রং ফ্যাকাসে সবুজ। কাণ্ডে উঁচু শিরা ও বেগুনি রেখা দেখা যায়। পাতার ওপর মোমের প্রলেপ থাকায় পানি ধরে না। পাতার নিচেও সাদাটে আস্তরণ থাকে।
১. বথুয়া শাকে থাকা পটাশিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হজম শক্তি বাড়ায়, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে, কনজাংটিভাইটিস নিরাময়ে সাহায্য করে, অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যা দূর করে। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ডায়াটারি ফাইবার যকৃতকে ভালোভাবে কাজ করতে এবং মল নির্গমন প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
২. বথুয়া শাক পেটের বিভিন্ন অসুখ সারাতে দারুণ উপকারী। পুরাতন আমাশয়ের মত রোগে যারা ভুগছেন; তাদের জন্য বথুয়া শাক খুবই কার্যকরী প্রাকৃতিক ওষুধ। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া সারাতে এটি খুব দ্রুত কাজ করে।
৩. বথুয়া শাকে পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। একই সাথে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়। ফলে হার্ট ভালো থাকে এবং বিভিন্ন রকমের হার্ট ডিজিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
৪. বথুয়া ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। ভিটামিন এ স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি এবং প্রতিষেধক সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কিডনি, হার্ট এবং অন্যান্য অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এছাড়া রাতকানার মতো সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা করে।
৫. বথুয়া শাক রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করে।
৬. এটি ক্যালসিয়াম, লোহা, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান ধারণ করে। যা দেহ গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন আমাদের শরীর সুস্থ রাখে। একইসাথে দেহের কোষের ক্ষয় রোধ করে ও কোষকলার সুস্থতায় সাহায্য করে।
৭. বথুয়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি-র অভাব একটি রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যা স্কার্ভি নামে পরিচিত। বথুয়া শাক গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৮. বথুয়া শাকে থাকা ভিটামিন বি ত্বকের চুলকানিসহ ত্বকের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ কমাতে অনেক কার্যকর। যকৃত এবং কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে বথুয়া শাক।
৯. এ শাকে হিমোগ্লোবিন স্তর উন্নত হয়। কারণ বথুয়ায় প্রচুর আয়রন আছে, যা রক্তের হিমোগ্লোবিন স্তর উন্নত করার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখে।
১০. বথুয়া শাক অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এর পাতার মধ্যে ৮টি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। যা আমাদের দেহ গঠনে সাহায্য করে।
১১. বথুয়া শাক পাচক ব্যবস্থা স্বাস্থ্যকর রাখে।
১২. বথুয়া শাক কিডনি পাথরের সমস্যার বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে কাজ করে। এটি পাথর গঠনের প্রবণতা হ্রাস করে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
এসইউ/পিআর