যেভাবে ঈদ কাটায় ঢাকাবাসী
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে সোমবার বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনে প্রস্তুত দেশের মুসলিমরা। রাজধানী ঢাকা, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও দিনাজপুরসহ সারাদেশে ঈদের জামাত আয়োজনের জন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হবে ৪০০টিরও উপরে ঈদের জামাত। ঈদের জামাত শেষ হওয়ার পর কুরবানি। তারপর? তারপর কেমন হবে ঢাকার ঈদ? কেমন করে ঈদ কাটায় ঢাকাবাসী?
ঐতিহ্যগতভাবে ঈদের দিনকে আনন্দের দিন বলা হলেও ডেঙ্গু আতঙ্কের কারণে সে আনন্দে খানিকটা ভাটা পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। তারপরও আনন্দ উদযাপনে কমতি নেই ঢাকাবাসীর। কেননা বাঁধভাঙা হৈ-হুল্লোড়, ঘোরাঘুরি, পাড়া-মহল্লায় আড্ডা, ঢাকার ঈদ আনন্দের সংস্কৃতি বছরের পর বছর অনেকটা এরকমই।
এ বিষয়ে কথা হয় ধানমন্ডির ইউল্যাবের শিক্ষার্থী ফারিয়ার সাথে। তিনি জানান, ঈদের দিন বিকেলে রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়াবেন বান্ধবিদের নিয়ে। ঘোরাঘুরির কোন গন্তব্য থাকবে না। চলতে চলতে যেখানে যেতে মন চায় যাবেন; হুট করে ঢুকে যাবেন কোন রেস্টুরেন্টে। কেবল কফি খাবেন। কারণ বাসায় তখন রান্না হতে থাকবে কুরবানির গোশত। যদি বৃষ্টি নামে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এটাই তো চাই। এতে ঈদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করবে।’
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ নিভু নিভু গলায় বলেন, ‘এবারের ঈদটা হয়তোবা আমার জন্য পানসে হয়ে যাবে। আম্মু-আব্বুর কড়া নির্দেশ বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর আতঙ্ক দূর না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। শুধু আমার না, এমন অবস্থা আমার প্রায় সব ক্লাসমেটেরই।’
ঈদের দিনটিতে ঢাকার চিরচেনা যানজটমুখর রাস্তা অনেকটাই থাকবে ফাঁকা। মাঝেমধ্যেই হুঁস করে বেরিয়ে যাবে মোটরসাইকেল আরোহী তরুণের দল। অনেকে বের হবে পিকআপ ভ্যান নিয়েও। মিরপুরে এমন একটি দলের সাথে কথা হয় আমার। তারা বলেন, ‘পনেরো-বিশজন বন্ধু মিলে পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে ঘুরে বেড়াই প্রতি ঈদেই। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। সবাই এডিশ মশার প্রোটেক্ট সংগ্রহ করেছি। কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।’
ভিড় জমবে ঢাকার সিনেমা হলগুলোতে। পরিবারের সবাই একসাথে যাবে সিনেমা দেখতে। বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের এখন বেহাল দশা। তবুও ঈদ মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এসব চলচ্চিত্রের দর্শক মূলত নিম্ন আয়ের মানুষ। এদের ঈদ আনন্দ অনেকটা চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক। আর বিভিন্ন পার্ক, ধানমন্ডি-গুলশান লেক আর হাতিরঝিল তো আছেই। উচ্চবিত্তদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন বার বা দেশের বাইরের বিভিন্ন স্পট।
বনানীর অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের একটি ফ্ল্যাটে কথা হয় ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, সবসময় ঢাকাতেই ঈদ করেন তিনি। ঈদের দিনে পরিবার-পরিজনের সাথে বাসাতেই টিভি দেখে সময় কাটান, তেমন একটা বের হন না। এবার তো আরও বের হবেন না। তিনি সিটি মেয়রের উপর কিছুটা ক্ষোভও ঢালেন ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের প্রসঙ্গটি তুলে।
এতসব সমস্যার পরও অবশ্য দেখা যাবে ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায় এ প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণীকে। যারা বৃষ্টিমুখর ঈদের দিনটিতেও ছাতাবিহীন দলবেঁধে হৈচৈ করছে অথবা কাঠফাটা রোদে সানগ্লাস চোখে ঘুরে বেড়াচ্ছে দিগ্বিদিক। এমনটাই মনে করেন কবি জেবুন্নেসা মায়া। তিনি বলেন, ‘ঘরে বসে বড়জোর বিশ্রাম করা যায়। আনন্দ পাওয়ার জন্য অথবা আনন্দ প্রকাশের জন্য বাইরে খোলা আকাশের নিচে বের হওয়ার বিকল্প নেই।’ এমন মতামতকে সমর্থন প্রদান করেছেন মনোবিদ আলাম নাশরাক।
আবার রয়েছে উল্টো রথও। সে রথের সদস্যরা সময় কাটাবে মুঠোফোন বা মনিটরের স্ক্রিনে। এ সংখ্যা নেহায়েত কম না। অনেকের ধারণা ঢাকার প্রতি একশ জনের মধ্যে ষাট জনই নাকি এভাবে ঈদ কাটাবে। এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম জব্বর আরমানের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরাও ঘোরাঘুরি কিংবা আত্মীয়-বন্ধুদের সাথে দেখা করে সময় কাটাবো। এর পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে দূরে থাকা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে আরও বাড়িয়ে নেব আমাদের ঈদ আনন্দ।
এসইউ/পিআর