আব্বা ডাকার তৃষ্ণা বুকে
সাহরির সময় বাড়িতে ফোন দিলাম। আম্মা ফোন ধরে বললেন, ‘হ্যালো’।
আমি বললাম, ‘আব্বাকে দেন’।
আম্মা খানিক অবাক হলেন। সাধারণত বাড়িতে ফোন দিলে আম্মার সাথেই বেশি কথা হয়। আব্বা ফোনে কথা বলতে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। আম্মা আব্বাকে ফোন দিলেন।
আব্বা ফোন ধরতেই আমি বললাম, ‘আব্বা, আব্বা, ও আব্বা, আব্বা, আব্বা...’
আব্বা অবাক গলায় বললেন, ‘কী হইছে আব্বা?’
আমি বললাম, ‘আব্বা, ও আব্বা, আব্বা, আব্বা, আব্বা, ও আব্বা... আব্বা।’
আব্বা এবার রীতিমত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি বিভ্রান্ত গলায় বললেন, ‘কী হইছে আব্বা? কিছু হইছে?’
আমি আবারও বললাম, ‘ও আব্বা, আব্বা, আব্বা, আব্বা, আব্বা... ও আব্বা।’
আব্বা বললেন, ‘আব্বা, কী হইছে, কী হইছে?’
আমি ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম, ‘কিছু হয় নাই। এমনিই। অনেকদিন ধরে আপনারে ফোন দেই না। কতদিন আব্বা আব্বা বলে ডাকি না। মনে হচ্ছিল ‘আব্বা আব্বা’ ডাকার জন্য বুকের ভেতরটা শুকাই গেছে, পানি না খাইতে পারলে যেমন তৃষ্ণা লাগে, সেইরকম। গলা শুকাই গেছে, কেমন খা খা লাগতেছিল বুকের মধ্যে। এইজন্য তৃষ্ণা মিটাইলাম। আব্বা, আব্বা, ও আব্বা, আব্বা, আব্বা...।’
আমি ফোন রেখে দিলাম। খানিক বাদে আম্মা ফোন দিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন, ‘তুই তোর আব্বারে কী বলছোস?’
আমি বললাম, ‘কেন? কী হইছে?’
আম্মা বললেন, ‘কী হইছে মানে? সেইটা তুই-ই জানোস। সে ফোন রাখনের পর থেইকা কানতেছে আর কানতেছে। নামাজে দাঁড়াইয়া মোনাজাত ধইরাও হাউমাউ কইরা কানতেছে। কী কইছোস তোর আব্বারে...’
‘কী বলেছি আমি?’
আমি হঠাৎ চুপ করে যাই। একদম চুপ। আম্মার প্রশ্নের কোন জবাব দেই না। চুপ করে বসে থাকি। নিঃশব্দ। আম্মা আমাকে জিজ্ঞেস করতেই থাকেন। আমি জবাব দেই না। আমার চোখ ক্রমশই ঝাপসা হতে থাকে, গাল ভিজে যেতে থাকে। বাইরে সুবহে সাদিকের আলো ফুটছে। সেই আবছা আলোর দিকে তাকিয়ে আমার হঠাৎ মনে হতে থাকল, আব্বা কাঁদুক, কাঁদুক। কাঁদুক তার পুত্রও। জগতে এই কান্নার খুব দরকার, খুব, খুব।
এই অস্থির সময়ে অজস্র কষ্ট, বেদনা, হাহাকার, ঘৃণা, মৃত্যু, জিঘাংসার কান্নায় ক্রমশই ডুবে যেতে থাকা জগতে এমন গভীরতম অনুভূতির তীব্র কান্না, এমন অপার ভালোবাসায় ডুবে থাকা বিশুদ্ধতম কান্না খুব দরকার। খুব দরকার।
এসইউ/জেআইএম