সাংবাদিক থেকে বিসিএস ক্যাডার মনদীপ
মনদীপ ঘরাই স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক। তার জন্ম বাগেরহাটে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা রণজিত কুমার ঘরাই। মা বাসন্তী ঘরাই গৃহিণী। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার পড়াশোনা ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরিফুল ইসলাম আরমান—
আপনার ছেলেবেলা কোথায় এবং কেমন কেটেছে?
মনদীপ ঘরাই: আমার ছেলেবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। তাই তার বদলির সাথে সাথে স্কুলও বদল হতো। বন্ধু বদল হতো। সব ধরনের মানুষের সাথে মিশে চলার অভ্যাসটা তাই ছোটবেলা থেকেই গড়ে উঠেছে।
পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
মনদীপ ঘরাই: পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা অনুভব করিনি। পরিবার থেকে সবাই চাইতো বেশি বেশি পড়ি। তবে আমি ছিলাম ফাঁকিবাজ ছাত্রদের দলে। রেজাল্টও করতাম মাঝারি মানের। এ নিয়ে অবশ্য তেমন চাপ ছিল না পরিবারে। সবাই বলতেন, ‘ভালো মানুষ হও।’
> আরও পড়ুন- বেকার ও বিধবা নারীদের ভরসা মরিয়ম বুবু
কোন পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন?
মনদীপ ঘরাই: একদম শৈশবে বাবার মতো অফিস করতে চাইতাম। একটু বড় হওয়ার পর সব হতে চাইতাম। কখনো ডাক্তার, কখনো ক্রিকেটার, কখনো মুদি দোকানদার।
কত সালে এবং কীভাবে বর্তমান পেশায় এলেন?
মনদীপ ঘরাই: ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম সাংবাদিকতা দিয়ে। প্রথমে প্রিন্ট, তারপর ইলেকট্রনিক মিডিয়া। রিপোর্টিং করতাম, নিউজ পড়তাম। মনের কাজ যখন চাকরি হিসেবে করতে হয়, তখন ভালো লাগাটা বেশি হয়। কিন্তু ওই যে শৈশবে বাবার মতো অফিস করার স্বপ্ন! অবচেতন মন কখন যে ওইদিকে টেনে নিয়ে গেছে টের পাইনি। আর বিসিএস পরীক্ষা একটি রোলার কোস্টার রাইডের মতো। একবার প্রিলিমিনারি দিয়ে শুরু করলে শেষের আগে থামাথামি নেই। এরপর একদিন গেজেট প্রকাশিত হলো। ২০১৩ সালে জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়ে গেলাম।
বর্তমানে কোথায় কর্মরত আছেন?
মনদীপ ঘরাই: বর্তমানে আমি স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক। এখানে ইউনিয়ন পরিষদ অর্থাৎ তৃণমূল পর্যন্ত উন্নয়ন কাজ মনিটরিংয়ের জন্য এমআইএস সিস্টেম তৈরির কাজ সমন্বয় করছি ডোমেইন এক্সপার্ট হিসেবে।
> আরও পড়ুন- স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে মামুনের অনন্য উদ্যোগ
কাজ করতে কেমন লাগছে?
মনদীপ ঘরাই: সরকারি চাকরির ছয় বছর হলো। কাজ খুবই উপভোগ করি। বিশেষ করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে, তাদের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারলে নিজেকে একটু হলেও সফল মনে হয়। চাকরির পাশাপাশি লেখালেখি ও সমাজকর্মে মনোনিবেশ করেছি। সাধ্য কম হলেও চেষ্টা করে যাচ্ছি নিজের মতো করে।
কোন প্রতিবন্ধকতা আপনার চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে কি?
মনদীপ ঘরাই: প্রতিবন্ধকতা একটাই। আমার-আপনার কিংবা আমাদের সবার মানসিকতা। সেবাদাতার সাথে সেবাগ্রহীতার মানসিকতা পরিবর্তনও জরুরি। পারষ্পরিক সহনশীলতা বাড়াতে পারলে যে কোন শুভ পথে এগোনো সহজ।
কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?
মনদীপ ঘরাই: বাবা-মা আমার অনুপ্রেরণার বড় জায়গা। আর স্ত্রীর অনুপ্রেরণা আছে বলেই সীমিত সাধ্যের মধ্যেও সমাজকর্ম এবং লেখালেখি করে যেতে পারছি।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মনদীপ ঘরাই: ভবিষ্যতে দেশকে, মানুষকে আরও বেশি ভালোবাসতে চাই। নিজের পথ থেকে বিচ্যুত হতে চাই না। সৃষ্টিকর্তা যেন সেই শক্তি ও সাহস দেন।
সরকারি কর্মকর্তা হয়েও কী কী সমাজকর্ম করেছেন?
মনদীপ ঘরাই: যশোরের অভয়নগরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও থাকার সময় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করেছিলাম। তাদের সমন্বয়ে জলাবদ্ধ এলাকার ১০ কিলোমিটার খাল থেকে কচুরিপানা অপসারণ করেছিলাম। একযোগে চার লাখ তালবীজ রোপণ করেছিলাম তরুণদের নিয়ে। নীড়হারা শিক্ষানুরাগী শান্তিলতা দেবীকে শান্তিনীড় গড়ে দিয়েছিলাম। আমার লেখা বইয়ের লভ্যাংশ পথশিশুদের জন্য উৎসর্গ করেছি। ভূমি অফিস প্রাঙ্গণে স্বাধীনতার থিম পার্ক ‘স্বাধীনতা অঙ্গন’ গড়ে তুলেছি। এবার নববর্ষের ভাতাও পথশিশুদের জন্য উৎসর্গ করেছি। আমার প্রতিমাসের বেতনের একদিনের সমপরিমাণ টাকা দুঃস্থ মেধাবীদের শিক্ষা সহায়তায় ব্যয় হয়।
এএ/এসইউ/এমকেএইচ