কিশোরীরা তৈরি করছে স্যানিটারি ন্যাপকিন
অর্থনৈতিক কারণে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানেটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারে না উপকূলীয় জেলা ভোলার নিম্নবিত্ত নারীরা। তবে স্থানীয়ভাবে ন্যাপকিন তৈরি হওয়ায় তাদের মাঝে বেড়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের সচেতনতা। কম দামের বিশেষ এ ‘শান্তি স্যানেটারি ন্যাপকিন’ হয়ে উঠেছে বেশ জনপ্রিয়। উৎপাদনকারীদের আয়ের পথও তৈরি হয়েছে।
জানা যায়, পরিশোধিত তুলা, নেট ও ব্যান্ডেজের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় পণ্যটি। ভোলার স্থানীয় কিশোরীরা ‘শান্তি স্যানিমার্ট’ নামে তৈরি করছে এ পণ্য। উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের ঘুইংগারহাটসহ (চরকুমারিয়া) বেশকয়েকটি গ্রামে নিম্নবিত্তদের মাঝেও বেড়েছে ন্যাপকিন ব্যবহারের সচেতনতা। ফলে কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমে এসেছে। কারখানাটিতে ১৫ জন কিশোরী কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হওয়ায় কম দামে গুণগত মানের স্যানেটারি ন্যাপকিনও এখন বেশ সহজলভ্য।
কারখানার কর্মী কিশোরী নিহার জানায়, সে পড়াশোনার খরচ চালাতে অবসরে ২ ঘণ্টা করে এই কারখানায় কাজ করছে। এছাড়া নিজের সুরক্ষার পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করছে। শুধু নাহার নয়, তার মতো খাদিজা, আকলিমা, সীমাসহ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ১৫ জন কিশোরী এ কারখানায় কাজ করছে।
এনজিও কর্মী শিল্পী রানী জানান, এ কারখানা দারিদ্র্যের শিকার কিশোরীদের আশার আলো হয়ে এসেছে। এমনকি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ স্বাস্থ্য বিষয়েও তাদের সচেতন করে তুলছে। বিক্রেতা উত্তম কুমার জানায়, স্থানীয়ভাবে তৈরি বলে তারা কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। আর স্থানীয় কিশোরীরা এগুলো বেশি কিনছেন।
কারখানার উদ্যোক্তা নুরতাজ আক্তার বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালে ১৫ জন কিশোরী নিয়ে কাজ শুরু করি। আমরা দৈনিক গড়ে ৫০-১০০ প্যাকেট স্যানেটারি ন্যাপকিন উৎপাদন করতে পারি। প্যাকেটগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কিশোরী ক্লাবসহ স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করে থাকি।’
ইউনিসেফের (ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন) কর্মকর্তা মো. ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘কিশোরীরা পিরিয়ডের সময় অর্থাভাবে স্বাস্থ্যসম্মত ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এটি কমিয়ে আনতে স্যানেটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়াতে আশপাশের উপজেলায়ও সরবরাহ করা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর এবং ইউনিসেফের সহায়তায় স্থানীয় কিশোরীদের দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত এ স্যানেটারি ন্যাপকিন তৈরি করা হয়। স্কুলে ন্যাপকিন ব্যবহারের হার বাড়ানোর জন্য বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টকে নিয়ে কাজ করছে ইউনিসেফ।
আদিল হোসেন তপু/এসইউ/এমএস