অধ্যক্ষের উদ্যোগে ফুলে ভরা ক্যাম্পাস
শীতের সকাল। দশটা বাজলেও কুয়াশা রয়ে গেছে চারদিকে। তবে শীতের মিষ্টি রোদ আছে। শিক্ষার্থীরা যে যার মতো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছে। কলেজের গেট পেরিয়ে মাঠে যেতেই চোখে পড়লো ফুলের বাগান! বাহারি রঙের ফুল আর ফুল। ফুলঘেরা মাঠের মাঝখানে শিক্ষার্থীরা কথা বলছে। কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে মুঠোফোনে ফুলের ছবিও তুলতে দেখা গেল। প্রথম দেখায় যে কারো মনে হতে পারে- কোনো ফুলের বাগানে এসে পড়লাম বুঝি! যদিও মুহূর্তেই বিভ্রম কেটে যাবে। চাঁদপুর জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমন পুষ্পশোভিত নান্দনিক ক্যাম্পাস আর চোখে পড়ে না।
বলছিলাম ডাকাতিয়া নদীর কোলঘেঁষে দাঁড়ানো পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসের কথা। একটু এগিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেল, কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারের উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে এ বাগান। প্রতিদিনই তিনি সকাল-বিকেল বাগানের পরিচর্যা করেন। কলেজের শিক্ষকরা জানান, ফুলের বাগান কলেজের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়েছে। শিক্ষার পরিবেশকেও সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিমসহ ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্য।
কলেজের শিক্ষার্থী মো. আল আমিন, আবু সুফিয়ান ও কামরুল হাসান বলেন, ‘আগের চেয়ে আমাদের ক্যাম্পাস বহুগুণে সুন্দর হয়েছে। ক্যাম্পাসে এলেই মন জুড়িয়ে যায়। কলেজে এসে খুব ভালো সময় কাটে। একটি সুন্দর ক্যাম্পাস উপহার দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষ স্যারকে ধন্যবাদ।’
মাঠেই দেখা হয় কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. হাবিবুর রহমান পাটওয়ারীর সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফুল সবাই ভালোবাসেন। কিন্তু ফুলের বাগান করা কষ্টসাধ্য। কলেজ ক্যাম্পাসে বাগান করা আরো কষ্টকর। আমাদের অধ্যক্ষ স্যারের আগ্রহে এবং ঐকান্তিক পরিশ্রমে ফুলের বাগান করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও বাগান নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তারাও ফুলের বাগানটি রক্ষা করতে সহযোগিতা করছেন।’
অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার জানান, গাছগুলো চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বাগানে ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, স্নো-বল, জিনিয়া, ভার্জিনা, সেলভিয়া, হলিওক, ডেনডান, গেজানিয়া, আমেরিকান ইনকা (গাঁদা), কসমস, স্টার, বেলি, কালার করবী, অ্যারোমেটিক জুঁই, দোপাটি, নয়নতারা, বাগান বিলাস, গোলাপ, জবা, মাধবীলতাসহ কয়েকশ’ ফুল গাছ রয়েছে। এরমধ্যে বিশ রকমের গোলাপ ও সাত রকমের জবা ফুল রয়েছে। রয়েছে কিছু ফলের গাছও।
বাগান সম্পর্কে তিনি বলেন, শৈশব থেকে আমার বাগান করার শখ। অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে ভাবলাম, ক্যাম্পাসটি সাজাই। আরো দৃষ্টিনন্দন করি। সেজন্য ক্যাম্পাসে ফুলের বাগান করার পরিকল্পনা করলাম। এছাড়া আরেকটি উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে ক্যাম্পাসে আকৃষ্ট করা এবং মনোরম পরিবেশে পাঠদান নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, আমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীই নয়, এলাকাবাসীও ধন্যবাদ জানিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আগে ক্লাসের ফাঁকে বাইরে যেতো। কিন্তু এখন তারা ক্যাম্পাসেই থাকে। ফুলগুলো তাদের আকৃষ্ট করে রাখে। আমি প্রতিদিন সকাল-সকাল কলেজে এসে বাগানের পরিচর্যা করি। কলেজ ছুটি হলে বিকেলে ফুলের গাছগুলোর যত্ন নেই। বাগানের যত্ন নেওয়ার জন্য একজন মালিও রেখেছি আমরা।
‘কেউ ফুল ছেঁড়ে না?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মৃদু হেসে বলেন, যখন বাগান করা শুরু করি; তখন আশঙ্কায় ছিলাম! শত শত শিক্ষার্থীর মধ্যে বাগান টিকিয়ে রাখা কঠিন। ভেবেছিলাম, ফুল ফুটলে ছেলেমেয়েরা ছিঁড়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। আমাকে অবাক করে দিয়ে তারা ফুলের বাগান করতে আমাকে সহযোগিতা করলো। এখন যে শত শত ফুল ফুটে আছে, আমার কোনো শিক্ষার্থী একটি ফুলও ছেঁড়ে না। আমার খুব ভালো লাগে। আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাই।
বাগান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে রতন কুমার মজুমদার বলেন, প্রতি মাসেই নতুন নতুন ফুল গাছ আনছি। দুর্লভ ফুল গাছের চারা আনার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে বাগানের পরিসর আরো বাড়াবো। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
এসইউ/পিআর