অ্যাঞ্জেলিকা : সংগীতের ক্ষুদে জাদুকর
ভারতের সংগীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা লিটল চ্যাম্প ২০১৭’ অনুষ্ঠানের মঞ্চ কাঁপিয়েছিল পাঁচ বছর বয়সী শিশু জায়াস কুমার। একই বছর আমেরিকার রিয়েলিটি শো ‘আমেরিকাস গট ট্যালেন্ট’ অনুষ্ঠানে গান গেয়েছে আরেক বিস্ময় অ্যাঞ্জেলিকা হেল। মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা এই শিশুকে নিয়ে আজকের আয়োজন-
‘আমেরিকাস গট ট্যালেন্ট’ অনুষ্ঠানে এবছর গান গেয়েছে ৯ বছরের মেয়ে অ্যাঞ্জেলিকা হেল। প্রতিযোগিতার ফাইনালে বিজয়ী হতে না পারলেও রানার্সআপ হয়েছিল। তার সুরের মূর্ছনায় উপস্থিত শ্রোতা, টেলিভিশনের দর্শকরা বিমোহিত হয়েছিলেন! অডিশনে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গায়িকা আন্দ্রে ডের বিখ্যাত গান ‘রাইস আপ’ গাওয়ার পর বিচারকরা দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
অ্যাঞ্জেলিকা হেলের জন্ম অাটলান্টার জর্জিয়ায়। বাবা জেমস হেল, মা ইভা বোলান্ডো। তাদের প্রথম সন্তান অ্যাঞ্জেলিকা। অ্যাঞ্জেলিকা রেডিওতে গান শুনে শুনে গুনগুন করে গাইতো। কিন্তু চার বছর বয়সে জীবনে নেমে আসে ঝড়। বেঁচে থাকার আশাই ক্ষীণ হয়ে আসে। হাসপাতালে নিলে জানা যায়, অ্যাঞ্জেলিকার ডান ফুসফুস ও কিডনি ‘সফ্ট’ হয়ে আসছে। সবাই তখন বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে আটলান্টা চিলড্রেন হেলথ কেয়ারে ৮০ দিন চিকিৎসার পর আশা জেগে ওঠে অ্যাঞ্জেলিকার জীবনে। মেয়েকে বাঁচাতে মায়ের একটি কিডনিও দিতে হয়েছিল।
তারপর কেটে গেছে অনেক সময়। তবে গানের চর্চা চালিয়ে যেতে থাকে অ্যাঞ্জেলিকা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে বাবা-মায়ের ইচ্ছায় ‘আমেরিকাস গট ট্যালেন্ট’র ১২তম আসরে নাম লেখায়। এতে যেকোনো বয়সী প্রতিযোগী অংশ নিতে পারেন। কণ্ঠশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, জাদুশিল্পী ও কমেডিয়ানসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। অডিশন রাউন্ডের পর চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার জন্য একটি রাউন্ড থাকে। সেখানে চার বিচারকের সঙ্গে যুক্ত হন অতিথি বিচারক। এখানে সংগীতশিল্পীর সঙ্গে নৃত্যশিল্পী, কমেডিয়ান, জাদুশিল্পী এবং অন্যান্য প্রতিভাবানদের প্রতিযোগিতা হয়।
অ্যাঞ্জেলিকা লাইভে যাওয়ার আগে দ্বিতীয় রাউন্ডে অ্যালিসা কিসের ‘গার্লস অন ফায়ার’ গানটি শোনান। সেদিন অতিথি বিচারক ছিলেন আমেরিকার স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান, গায়ক, উপস্থাপক ক্রিস হার্ডউইক। অ্যাঞ্জেলিকার গান শুনে তিনি ‘গোল্ডেন বেজার’ বাটন চাপেন। লাইভ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগেই অ্যাঞ্জেলিকা তারকা হয়ে যান। তার প্রথম দুটি গান ইউটিউবে ঝড় তোলে। লাইভের প্রথম ধাপ কোয়ার্টার ফাইনাল। সেখানে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সেমিফাইনালে ওঠে অ্যাঞ্জেলিকা। কোয়ার্টারে জেডের ‘ক্ল্যারিটি’ এবং সেমিফাইনালে ডেভিড গোয়েটার ‘উইদাউট ইউ’ গানটি শোনান অ্যাঞ্জেলিকা। এছাড়া প্রতিটি রাউন্ডে সেরাদের কাতারে থেকে ফাইনালে ওঠে এই ক্ষুদে জাদুকর।
ফাইনালে ১০ জন প্রতিযোগির মধ্যে অ্যাঞ্জেলিকা উঠে আসে সেরা দুইয়ে। ফাইনালে ক্লিন ব্যানডিটের ‘সিম্ফনি’ গানটি গেয়ে মানুষকে কাঁদিয়েছিল সে। কিন্তু ভোটের কারণে তাকে রানার্সআপ হতে হয়। ১২তম আসরে শিরোপা জেতে ডারসি লিন। রানার্সআপ হলেও আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের মন জয় করেছিল অ্যাঞ্জেলিকা। তবে দুই সেরার মধ্যে কঠিন লড়াই হয়েছে।
অডিশনের দিন বিচারকের প্রশ্নের জবাবে অ্যাঞ্জেলিকা বলেছিল, ‘আমি এখানে জিততে এসেছি এবং জিতেই যাব।’ বড় হয়ে কী হতে চাও- এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলেছে, ‘আই উইল বি উইটনি হিউস্টন। আই উইল বি এ সুপারস্টার।’ তবে এবারও বিচারক ছিলেন সিমোন কোওয়েলে, হোয়ি ম্যানডেল, মেল বি এবং হেইডি কাম। উপস্থাপনা করেছেন সুপার মডেল ও বিজনেস ওম্যান টায়রা ব্যাংকস। প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয় ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টায়।
অ্যাঞ্জেলিকার গান শুনতে পারেন
এসইউ/জেআইএম