ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

থিয়েটার: মঞ্চের আলোয় জীবনের গল্প

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:০২ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২৫

সানজানা রহমান যুথী

থিয়েটার, যা কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয় বরং সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে, মানবজীবনের আবেগ, সংগ্রাম ও সংস্কৃতিকে মঞ্চে তুলে ধরে। প্রতিবছর ২৭ মার্চ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব থিয়েটার দিবস, যা আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই) ১৯৬১ সালে প্রবর্তন করে। এই দিনটি থিয়েটারের শক্তি ও গুরুত্বের কথা তুলে ধরে এবং বিশ্বজুড়ে নাট্যচর্চাকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্যে কাজ করে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

থিয়েটারের ইতিহাস ও গুরুত্ব
থিয়েটারের উৎপত্তি বহু প্রাচীনকাল থেকে। প্রাচীন গ্রিসে থিয়েটারের জন্ম, যেখানে দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে নাটক মঞ্চস্থ হতো। সেই সময়ে সফোক্লিস, অ্যারিস্টোফেনসের মতো নাট্যকাররা ট্র্যাজেডি ও কমেডির মাধ্যমে মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতেন। পরবর্তীতে রোমান থিয়েটার, মধ্যযুগের ধর্মীয় নাটক, রেনেসাঁ যুগের শেক্সপিয়রের নাটক এবং আধুনিক যুগের বাস্তবধর্মী থিয়েটার সমাজ ও সংস্কৃতির বিবর্তনকে মঞ্চে ফুটিয়ে তুলেছে।

থিয়েটার: মঞ্চের আলোয় জীবনের গল্প

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

থিয়েটার কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং এটি মানুষের ভাবনা, সংস্কৃতি এবং সমাজের পরিবর্তনের হাতিয়ার। এটি ব্যক্তির মানসিক বিকাশে সহায়তা করে, সমষ্টিগত চেতনার বিকাশ ঘটায় এবং সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরে। বিশেষ করে রাজনৈতিক থিয়েটার, প্রতিবাদী নাটক এবং বাস্তবধর্মী নাটক সমাজ পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

বাংলাদেশের থিয়েটার আন্দোলন
বাংলাদেশে থিয়েটারের ইতিহাস বহু পুরোনো। গ্রামবাংলার জারি, সারি, কবিগান, যাত্রাপালা ছিল লোকনাট্যের অংশ, যা সাধারণ মানুষের আনন্দ ও শিক্ষার উৎস ছিল। আধুনিক বাংলা থিয়েটারের যাত্রা শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে। ১৮৭২ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘শর্মিষ্ঠা’ মঞ্চস্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলা থিয়েটারের আধুনিক ধারা সূচিত হয়।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে থিয়েটার আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ঢাকা থিয়েটার, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, আরণ্যক নাট্যদল, প্রাচ্যনাটসহ বিভিন্ন নাট্যসংগঠন দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেলিম আল দীন, মামুনুর রশীদ, আবদুল্লাহ আল মামুনের মতো নাট্যকারেরা বাংলা নাটকের ভিতকে মজবুত করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মঞ্চনাটকগুলো রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে।

বিশ্ব থিয়েটার দিবসের তাৎপর্য
বিশ্ব থিয়েটার দিবসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এই দিনে একজন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্বের বার্তা প্রকাশ করা হয়, যা বিশ্বজুড়ে নাট্যশিল্পীদের অনুপ্রেরণা জোগায়। এই দিনে বিভিন্ন দেশে নাট্যোৎসব, সেমিনার, নাট্য প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপনের জন্য বিশেষ নাট্য প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং থিয়েটার কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। নাট্যশিল্পীরা এই দিনটিকে থিয়েটারকে আরও জনপ্রিয় ও গণমানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ হিসেবে নেন।

থিয়েটার: মঞ্চের আলোয় জীবনের গল্প

বিজ্ঞাপন

থিয়েটারের ভবিষ্যৎ ও চ্যালেঞ্জ
থিয়েটার আজকের ডিজিটাল যুগে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সিনেমা, টেলিভিশন ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উত্থানের ফলে অনেক দর্শক মঞ্চনাটক থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তবুও থিয়েটারের স্বকীয়তা ও মঞ্চনাটকের সরাসরি সংযোগের অভিজ্ঞতা আজও মানুষের মনকে আন্দোলিত করে।

বাংলাদেশের মতো দেশে থিয়েটারের আরও প্রসার ঘটানোর জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, নাট্যশিল্পীদের আর্থিক সহায়তা এবং আরও বেশি দর্শকের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। বিশেষ করে নাট্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন এবং থিয়েটার কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে এই শিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে ।

থিয়েটার এক অনন্য শিল্পমাধ্যম, যা সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিশ্ব থিয়েটার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মঞ্চনাটক কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং এটি মানুষের কথা বলে, সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরে এবং পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দেয়। আমাদের উচিত থিয়েটারকে ভালোবাসা, লালন করা এবং এর প্রসারে অবদান রাখা।‘থিয়েটার কখনো মরে না, কারণ এটি জীবনের কথা বলে।’

বিজ্ঞাপন

কেএসকে/এএসএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন