ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

বিশ্ব বন দিবস

জলবায়ু পরিবর্তন ও বন ধ্বংস: ভবিষ্যৎ কি সংকটে?

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৪০ এএম, ২১ মার্চ ২০২৫

তানজিদ শুভ্র

২১ মার্চ বিশ্ব বন দিবস। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের মোট ভূমির অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন, অথচ বাংলাদেশে বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৪.১ শতাংশ। দিন দিন বন উজাড় হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়ছে, কমছে জীববৈচিত্র্য। বন সংরক্ষণ, পরিবেশ সচেতনতা এবং টেকসই উন্নয়নের পথে কী করা দরকার-কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছে তাদের ভাবনা। গ্রন্থনা করেছেন তানজিদ শুভ্র-

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জলবায়ু পরিবর্তন ও বন ধ্বংস: ভবিষ্যৎ কি সংকটে?

জলবায়ু পরিবর্তন ও বন ধ্বংস: ভবিষ্যৎ কি সংকটে?
আব্দুর রশিদ
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, সিলেট সরকারি কলেজ

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের মোট ভূমির শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। যেখানে বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এদেশে বনভূমি বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমাদের চারপাশ থেকে অহরহ আমরা নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করে চলছি। বৃক্ষের গুরুত্ব কমবেশি আমরা সবাই জানি তবুও কারণে-অকারণে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করছি না। এতে করে আমরা ক্রমশ একটি অনিবার্য পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছি। গাছ কাটার ফলে বন ধ্বংস হচ্ছে, আর এভাবে সুজলা সুফলা বাংলাদেশের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে আকস্মিক বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে প্রতিবছর বাংলাদেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত।

বৃক্ষ নিধনজনিত অনিবার্য পরিণতির হাত থেকে রেহাই পেতে বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। আমাদের উচিত একটি গাছ কাটার পূর্বে তার বদলে কমপক্ষে চারটি গাছের চারা রোপণ করা এবং সেগুলোর পরিচর্যা করা। বৃক্ষ আছে বলেই পৃথিবীতে মানবসমাজ আজও ঠিকে আছে। বৃক্ষরোপণ একটি জাতীয় কর্ম হলেও এ ব্যাপারটি সরকারের একার প্রচেষ্টায় সাফল্য লাভ করা কঠিন। তাই সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ মানুষদেরকেও। বিশেষ করে গ্রামে বসবাসকারীদের ভূমিকা এতে অধিক প্রয়োজনীয়। গাছ রোপণের পর সঠিক পরিচর্যা না করলে গাছের অকাল মৃত্যু হতে পারে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারিভাবে বৃক্ষরোপণ ও অরণ্য সম্প্রসারণের যেসব কর্মপ্রচেষ্টা চলমান রয়েছে এগুলোর ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে শুধু আর্থিক ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ালেই অরণ্য সম্প্রসারণ ও অরণ্য সংরক্ষণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যথাযথভাবে সফল হতে পারে না। এজন্য জনসাধারণকে উৎসাহিত করে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জলবায়ু পরিবর্তন ও বন ধ্বংস: ভবিষ্যৎ কি সংকটে?

বন সংরক্ষণ, পরিবেশ সচেতনতা ও টেকসই উন্নয়ন
তানজিনা আক্তার
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ

বনভূমি সংরক্ষণ, বনজ দ্রব্য, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত এক দশক ধরে প্রতিবছর ২১ মার্চ পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক বন দিবস। বন উজারকরণের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কৃষি কাজে। ফলে বাংলাদেশের মত কৃষিপ্রধান দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বনজ সম্পদের সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করাই হল বন সংরক্ষণ। বন সংরক্ষণে গাছ লাগানো ও বন নিধন ছাড়া যা জরুরি: মানব সৃষ্ট আগুন থেকে বনকে রক্ষা করা, অধিক পরিমাণে গবাদি পশুচারণ বন্ধ করা, গাছকে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষা করা, ফসলি জমিতে অধিক কীটনাশক প্রয়োগ না করা, বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা বাড়ানো। এসব উদ্ভিদ থেকে ভবিষ্যতে গবেষণার মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব হবে। এছাড়া কৃষি ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ঘটাতে পারে শিল্প বিপ্লব। দারিদ্র বিমোচনে এনে দিতে পারে অপার সম্ভাবনা। পরিকল্পিত ছাদ বাগানও এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। নগরায়ন ও শিল্পায়নের জন্য পাহাড় কেটে বন নিঃশেষ প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেলে প্রাণীকুল আবাসস্থল হারাবে। যা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বনভূমিকে আমরা নিজেদের জন্য না হলেও অন্তত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করব।

জলবায়ু পরিবর্তন ও বন ধ্বংস: ভবিষ্যৎ কি সংকটে?

জীবন ও প্রকৃতির রক্ষাকবচ বন সংরক্ষণে সচেতনতা জরুরি
রিকমা আক্তার
শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

বিজ্ঞাপন

গাছপালা ও বনভূমি আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। উদ্ভিদকুল ব্যতীত প্রাণীকুল কল্পনা করা যায় না। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১২ সালে বন দিবসটি ঘোষণা করে। যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, বন ও গাছপালা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং বনায়নে মানুষকে উৎসাহিত করা। গাছপালা থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সহ পানি, খাদ্য, আশ্রয় পেয়ে থাকি। বনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। জলবায়ুর প্রভাব কমাতে এবং কার্বন শোষণে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে নগরায়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনে মানুষ প্রতিনিয়ত বন ধ্বংস করছে, যা পৃথিবীর অদূর ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ। যে পরিমাণে বন ধ্বংস করা হচ্ছে সেই পরিমাণে গাছপালা লাগানো হচ্ছে না। পৃথিবীর ১.৬ বিলিয়ন মানুষ বনের উপর নির্ভরশীল। ভূমিক্ষয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে, খাদ্য ও ঔষধের জোগান সহ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে আমরা প্রকৃতির নিকট ঋণী। তাই আমাদের বনায়ন বৃদ্ধি জরুরি, বনায়নের বিষয়ে সবার সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। সামাজিক ও স্থানীয়ভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গাছপালা রোপণের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি যেতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও বন ধ্বংস: ভবিষ্যৎ কি সংকটে?

বনায়নই পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় রুখে দিতে পারে
নাইমা খাতুন
শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

বিজ্ঞাপন

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জীববৈচিত্র্য নানামুখী হুমকির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। এই বিপর্যয় আরও বেশি ত্বরান্বিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত বনভূমি ধ্বংসের মাধ্যমে। সবুজ বনাঞ্চল শুধু পরিবেশের ভারসাম্যই রক্ষা করে না, পরিবেশে বিদ্যমান ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশের গ্রহণ উপযোগী অক্সিজেন মুক্ত করে এবং জীবের বসবাসে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

বিভিন্ন ধরনের কাষ্ঠল উদ্ভিদ, বিরুৎ, গুল্ম, ঘাস ও লতানো উদ্ভিদ এর সমাহারে বনভূমি গঠিত হয়। যেখানে বিভিন্ন বন্য প্রাণী, পাখি, ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ আশ্রয় গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। খাদ্য ও বাসস্থান এর উপর ভিত্তি করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসব জীব বনের উপর নির্ভরশীল।

একটি দেশের মোট ভূমির ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন সেখানে বাংলাদেশ মোট বনভূমির পরিমাণ ১৪.১ শতাংশ। ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য বনভূমির আয়তন দিন দিন আরও হ্রাস পাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জীববৈচিত্র্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে,অস্তিত্ব সংকটে পরবে বিলুপ্তপ্রায় জীব প্রজাতি। পরিবেশের সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনভূমি রক্ষা এবং নতুন বনায়ন সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

বিজ্ঞাপন

জলবায়ু পরিবর্তন ও বন ধ্বংস: ভবিষ্যৎ কি সংকটে?

পরিবেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য বন সংরক্ষণ
কাজী মালিহা আকতার
শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

পরিবেশ সচেতনতার মূলে রয়েছে বন সংরক্ষণ। কেননা পরিবেশকে জীবনের উপযোগী করতে পারে সবুজ উদ্ভিদ। যার মধ্যে থাকা ক্লোরোফিলের কারণে খাদ্য ও অক্সিজেন তৈরি করতে সক্ষম, যা অন্যকিছুর ক্ষেত্রে সম্ভব না। তাই পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রথমে বন সংরক্ষণ করতে হবে। তার জন্য অকারণে বনাঞ্চলের গাছকাটা বন্ধ করতে হবে, নতুনভাবে চারাগাছ লাগাতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় এমন প্রজাতির নতুন গাছ লাগানোর। বনাঞ্চলের উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগ এবং পচনশীলতা দমন করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে বনভূমির উর্বরতা বজায় রাখতে হবে। লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের হাত থেকে বনাঞ্চলের উদ্ভিদকে রক্ষা করতে হবে। বনে যাতে আগুন না লাগে সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। কারণ বনে আগুন লাগলে, দাবানলে বনজ সম্পদের বিশাল ক্ষতি হয়। বনাঞ্চলের বৃষ্টির পানি যাতে সহজে ঐ এলাকার মাটিতে প্রবেশ করে সেজন্য খাল কাটা এবং আল দেওয়া প্রয়োজন। বনে বহিরাগতের প্রবেশে কঠোর হতে হবে।

আরও পড়ুন

কেএসকে/এমএস

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন