লেগে থাকার ছয় বছর, তারপর এই মঞ্চে ‘আওয়াজ উডা’র হান্নান
‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ এবং ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’ ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেরা দুই গান। গোবিন্দ হালদারের লেখা গান দুটি সেসময় ভীষণ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল মানুষকে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে যে গানগুলো মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে সেগুলোর অন্যতম ‘আওয়াজ উডা বাংলাদেশ’। রীতিমতো তারুণ্যের গণসংগীত হয়ে উঠেছিল হান্নান হোসেন শিমুলের লেখা ও গাওয়া গানটি। গণ-অভ্যুত্থান থেকে কারাগার, সেখান থেকে ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’-এর মঞ্চ! কেমন ছিল তার যাত্রাটি?
গতকাল শনিবার বিকেলে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্টের মঞ্চে ওঠেন হান্নান হোসেন শিমুল ওরফে র্যাপার হান্নান। তার সিগনেচার র্যাপ গানটি গেয়ে উপস্থিত তরুণদের স্মরণ করিয়ে দেন জুলাইয়ের দিনগুলোর কথা। আন্তর্জাতিক সংগীতের ভেন্যু হিসেবে নানান কারণে পরিচিত আর্মি স্টেডিয়াম মঞ্চ হান্নানের জন্য ‘বিশেষ’। কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। মঞ্চে উঠে সেকথা স্বীকারও করেছেন তিনি। শ্রোতাদের উদ্দেশে হান্নান বলেছেন, ‘এই মঞ্চে পৌঁছাতে আমার ছয় বছর লেগেছে।’
র্যাপসংগীতের পেছনে লেগে ছিলেন হান্নান। তার স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে জানতে চাই, কেমন ছিল সেই পরিভ্রমণ? কেমন লাগলো এত বড় মঞ্চে গান করে? জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘সত্যিই, জার্নিটা তো এক দিনের না। আর্মি স্টেডিয়ামের মঞ্চে আসতে আমার ছয় বছর লেগেছে। খুব ভালো লেগেছে গাইতে। তবে এও মনে হয়েছে, পারফরমেন্সটা যদি সন্ধ্যায় পর হতো, আরও বেশি ভালো লাগতো। সন্ধ্যার পর দর্শক বেড়েছিল, তখন গানটা শোনাতে পারলে আরও বেশি ভালো লাগতো।’
তখন দর্শক-শ্রোতা কম ছিল! তবে যারা ছিলেন, তারাও ছিলেন হান্নানের আপনজন। কথা হয় সেরকম এক দর্শক দম্পতির সঙ্গে। খোলা মাঠে চেয়ারে বসে গান শুনছিলেন ৫০ ছুঁইছুঁই শফিক আহমেদ। কেমন লেগেছে হান্নানের গান? তিনি বললেন, ‘এই গানটা আমাদেরকে শক্তি জুগিয়েছিল। জুলাইয়ের আন্দোলনে আমাদের ছেলে বাসায় না ফেরা পর্যন্ত আমরা গানটা শুনতাম। মনে হতো, শিল্পী আমাদের কথাই বলছে। আমরা রাজপথে যেতে পারিনি বয়সের কারণে, কিন্তু আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম। যখন টিভিতে খবর দেখতাম, তখন কান্না করতাম। বন্ধুরা সবাই বিদেশে চলে যাচ্ছিল। আমাদেরও পরামর্শ দিচ্ছিল, কোথাও যেন চলে যাই। কিন্তু ছেলের সিদ্ধান্ত মেনে আমরা দেশে থেকে যাই।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা দিতে আয়োজন করা হয় কনসার্ট ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’-এর। কনসার্টের টিকিট বিক্রির অর্থ চলে যাবে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবার নিয়ে কাজ করা কল্যাণমূলক সংস্থা ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এ। শফিক আহমেদ বলেন, ‘এই কনসার্টের কথা যখন শুনলাম, আমরা ১০টা টিকেট কিনেছি, ১ লাখ টাকায়। ছেলের বন্ধুদের টিকেটগুলো উপহার দিয়েছি। সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সব সময় পাশে থাকতে চাই।’ কথা হয় এক চিকিৎসক দম্পতির সঙ্গেও। তাদের একজন সাজ্জাদ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘শেষ কবে কনসার্টে এসেছি সেটা তো ভুলে গিয়েছি। তবে আজ এসেছি জুলাই অভ্যুত্থানের নায়কদের পাশে থাকবো বলে।’
২০১৮ সালে র্যাপ গান শুরু করেন হান্নান। ‘ডিসকাউন্ট’ শিরোনামে প্রথম গান করেছিলেন তিনি। এরপর থেকে টানা ছয় বছর ছিলেন র্যাপসংগীত নিয়েই। একাধিক মিক্সড অ্যালবামেও কাজ করেছেন। তবে হান্নানের নবযাত্রা হলো চলতি বছর স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে। আগামীকাল সোমবার বিপিএল মিউজিক ফেস্টেও গান শোনাবেন তিনি। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি কনসার্টে গান করবেন তিনি।
- আরও পড়ুন:
- টিএসসিতে পারেনি, স্টেডিয়ামে গাইল উপদেষ্টা আসিফের দল
- কনসার্ট-মঞ্চে হাসিনার বিচার দাবি, ঐক্যের আহ্বান সারজিসের
- তরুণদের দখলে বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম
নতুন নতুন সব গান প্রস্তুত করেছেন হান্নান। প্রস্তুত তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘হরেক মাল’। সেখানে থাকবে নয়টি গান। জাগো নিউজকে হান্নান বলেন, ‘বড় ভাই সেজানের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। দুবছর হলো গানকেই পেশা হিসেবে নিয়েছি। আগে কেবল নিজের জন্য গান করতাম, এখন মানুষের জন্য করছি।’
এমআই/আরএমডি