ফারুকীকে সাহস জুগিয়েছেন যে কোরীয় মন্ত্রী
প্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদ পরবর্তী ঢাকার সিনেমাকে যে নির্মাতারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরেছেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাদের অন্যতম। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে সদ্য শপথ নিয়েছেন এই চলচ্চিত্রকার। দপ্তরে যোগ দিয়েই তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে সাহস জুগিয়েছেন কোরীয় এক মন্ত্রী!
আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাণ করে খ্যাতি অর্জন করেন ফারুকী। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। গতকাল এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিলেন ফারুকী। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ শেষে তাকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
- মন্ত্রিত্ব ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের পুরস্কার নয়: ফারুকী
- ফারুকী বললেন, ‘অস্বীকার হচ্ছে অপরাধীর প্রথম অস্ত্র’
উপদেষ্টা হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক বিনোদন বাণিজ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ভ্যারাইটিকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এই নির্মাতা। তিনি বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে প্রাণিত করেছে কোরীয় নির্মাতা লি চ্যাং-ডং। ‘গ্রিন ফিশ’, ‘ওয়েসিস’, ‘সিক্রেট সানশাইন’ ছবিগুলোর এই নির্মাতা ২০০৩-২০০৪ সালে কোরিয়ার সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
ফারুকী বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে আমার অন্যতম প্রিয় নির্মাতা লি চ্যাং-ডংয়ের কাছ থেকে সাহস পেয়েছি। মনে হয়েছে, ঠিক আছে। তিনি যদি সেখান থেকে ফিরে নিজের স্বাধীন চিন্তা অব্যাহত রাখতে পারেন, হয়তো আমিও পারব।’
আরও পড়ুন:
- শুটিংসেট থেকে শপথে চলচ্চিত্রকার ফারুকী
- ‘আওয়ামী লীগের বি-টিম’, কাদের বললেন ফারুকী
- হাসিনার ‘মনস্টার’ হয়ে ওঠা, ফারুকীর ব্যাখ্যা
শপথ অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমে জানানো প্রতিক্রিয়ায় ফারুকী বলেছিলেন, ‘আমি কখনই কোনো পদ বা কোনো চেয়ারে বসব, এটা ভাবিনি। কিন্তু প্রফেসর ইউনূসের সহকর্মী হওয়াটা টেম্পটিং (লোভনীয়), “না” বলাটা মুশকিল।’
বাংলাদেশি সিনেমার জগতে ফারুকী যেন এক নতুন দার্শনিক। তিনি একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার। নিজস্ব ঢঙে পর্দার জন্য কনটেন্ট নির্মাণ করতে বানিয়েছেন ছবিয়াল নামে একটি সংস্থা। ভিন্ন ধারার সিনেমায় দেশের মানুষকে অভ্যস্ত করে তুলেছেন তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ছাপ ফেলেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
ফারুকীর বানানো টেলিছবির মধ্যে রয়েছে ‘স্পার্টাকাস ৭১’, ‘চড়ুইভাতি’, ‘কানামাছি’ ও ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’। ‘একান্নবর্তী’, ‘সিক্সটিনাইন’, ‘৪২০’ তার বানানো জনপ্রিয় কিছু সিরিয়াল। কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ‘আয়েশামঙ্গল’ অবলম্বনে ফারুকী নির্মিত ‘আয়েশা’ নাটকটিও পেয়েছিল দর্শকপ্রিয়তা।
আরও পড়ুন:
- ফারুকী ঢাকায়, ভেজা চোখে কাটলো আবেগাত্মক সন্ধ্যা
- চলচ্চিত্রের কমিটিতে কাদের রাখা উচিত, ফারুকীর পরামর্শ
সিনেমায় ফারুকীর সূচনা ‘ব্যাচেলর’ দিয়ে। গল্প ও নির্মাণে এটি সামাজিক সম্পর্কগুলোর অসংগতি নিপুণভাবে তুলে এনেছে। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া তার সিনেমা ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ ২০০৯ সালে মুক্তি পায়। ‘বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’, ‘রোটেরডেম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’, ‘ফ্রাইবুর্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ ও ‘আবুধাবি চলচ্চিত্র উৎসব’-এ অফিসিয়াল সিলেকশনে ছিল ছবিটি। এ ছাড়া ২০১০ সালে ‘টিবুরন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’, ‘জোগজা-নেপটেক এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ গোল্ডেন হ্যানোমেন অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত হয় সিনেমাটি।
২০১৪ সালে ‘কেস উইক চলচ্চিত্র উৎসবে’ প্রদর্শনীর পাশাপাশি ৮৩তম অস্কারে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ফারুকী নির্মিত এই সিনেমা। ২০১২ সালে ‘টেলিভিশন’, ২০১৩ সালে ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ এবং ২০১৭ সালে ‘ডুব’ সিনেমা নির্মাণ করেন তিনি। ২০১৪ সালে ‘বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে’ সমাপনী ছবি হিসেবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ‘টেলিভিশন‘ সিনেমার।
এমআই/আরএমডি/এমএস