শুভ্র দেবের ফোন বন্ধ, মামাকে নিয়ে যা লিখলেন ফেসবুকে
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যামকে হারিয়ে তার পরিবার শোকসাগরে ডুবে আছে। তাকে হারিয়ে সংগীতাঙ্গনেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রয়াত এ সুরস্রষ্টার ভাগনে দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শুভ্র দেব। তার সংগীত জীবনে রয়েছে মামার অনেক অবদান। মামাকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান এ শিল্পী ফোন বন্ধ করে রেখেছেন নানা কারণে। তবে মামাকে নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন তিনি।
গতকাল (১৮ অক্টোবর) শুক্রবার জাগো নিউজের পক্ষ থেকে শুভ্র দেবের কাছে মামা সুজেয় শ্যামের স্মৃতির কথা জানতে চওয়া হয়। মামাকে হারানোর শোকে তিনি যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন।
আজ শুভ্র দেব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। মামা সুজেয় শ্যামকে নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘মামাকে নিয়ে লিখব, তবে কিছুদিন সময় লাগবে। আমি ছিলাম তার আরেক সন্তান। তার সংগীত জগতের এই বর্ণাঢ্য জীবনের অনেক না জানা কথা আমি জানি। তিনি ছিলেন কারও শ্যাম দা, কারও শ্যাম কাকু আবার কারও সুজেয় দা। আমরা ভাইবোনরা তাকে ডাকতাম মিষ্টি মামা।’
- আরও পড়ুন:
- সুজেয় শ্যামের মৃত্যুতে শিল্পীদের শোকগাথা
- সুজেয় শ্যামকে গার্ড অব অনার প্রদান, শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানে মরদেহ
তিনি আরও লেখেন, ‘এত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সংগীতাঙ্গনে ছিল বিরল। এখনকার অনেক তরুণ শিল্পীর তার প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবসায় আমি হয়েছি মুগ্ধ। বিশেষ করে তরুণ সংগীত প্রতিভা ইউসুফের পোস্ট দেখে আমি আবেগে হয়েছি আপ্লুত। গীতিকার মিলন খান মামার একটা হারমোনিয়াম নিয়ে অসাধারণ ছবি দিয়েছে। আরও অনেক ব্যক্তিত্ব ও শিল্পীর লেখা ও পোস্ট আমাদের পরিবারের হৃদয় স্পর্শ করেছে। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।’ স্ট্যাটাসের সঙ্গে শুভ্র দেব সুজেয় শ্যামের সঙ্গে তোলা বিভিন্ন সময়ের কিছু ছবি পোস্ট করেছেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সুজেয় শ্যাম। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারসহ শারীরিক নানান জটিলতায় ভুগছিলেন সুজেয় শ্যাম। সম্প্রতি তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। পরে তার শরীরে ভেতর সংক্রমণ হলে এক পর্যায়ে তা রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও কিডনির জটিলতাও ছিল।
প্রবীণ এ সংগীতশিল্পীর সুর করা গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘শোন রে তোরা শোন’।
একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। গানটির গীতিকার ছিলেন শহীদুল আমিন। গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়।
১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেটে সুজেয় শ্যামের জন্ম। তার বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামের একটি চা বাগানের মালিক। সিলেটেই কাটে তার শৈশব। দশ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ।
দীর্ঘ সংগীত জীবনে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন সুজেয় শ্যাম। সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক এবং ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি।
এমএমএফ/আরএমডি/এএসএম