সুজেয় শ্যামের মৃত্যুতে শিল্পীদের শোকগাথা
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শিল্পী সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যামের প্রয়াণে দেশের সংগীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বরণ্যে এ শিল্পীর চলে যাওয়ায় অনেকেই তাদের অভিভাবককে হারিয়েছেন বলে মনে করছেন। সবাই শোক প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন তাদের অনুভূতির কথা। শিল্পীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠেছে যেন শোকবই।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার ও সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান লিখেছেন, ‘সহযাত্রী, বন্ধু, শব্দসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন! শান্তি কামনা করি’।
সুজেয় শ্যামকে হারিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তার সাথে সম্পর্ক ১৯৬৯ সাল থেকে। ছোটবেলা থেকেই তার ভালোবাসা এবং স্নেহে ধন্য হয়েছি বার বার। শ্যাম দাদার বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি’।
জনপ্রিয়শিল্পী কনকচাঁপা তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চলে গেলেন আমাদের সংগীতের আরেক কিংবদন্তী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুরকার সংগীত পরিচালক ও সংগঠক সুজেয় শ্যাম। শ্যামদাদা, বাংলাদেশকে আপনি অকৃত্রিম হাতে ঢেলে দিয়েছেন। আমরা কখনো আপনাকে ভুলব না। আপনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
শিল্পী আসিফ আকবর শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় সুজেয় শ্যাম (কাকা) বাংলা গানের আরও একজন কিংবদন্তির প্রস্থান। তিনি সব সময়ের জন্য আমার একজন শ্রদ্ধাভাজন মুরুব্বি ছিলেন। বাবু- আপনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বাংলা সংগীতের ইতিহাসে। বিনম্র শ্রদ্ধা।’
শিল্পী সুরকার ও সংগীত পরিচালক নকীব খান লিখেছেন, ‘তার মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করছি! হারিয়ে গেলেন আরেক কিংবদন্তি সংগীত ব্যক্তিত্ব সুজেয় শ্যাম দা! তার আত্মা শান্তিতে থাকুক। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি’।
শিম্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমি জীবনের আয়োজন সাজিয়েছি শুধু, জীবন সাজাতে পারিনি, ওপারে শান্তিতে থাকবেন মামা (কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম)। আলিফ আলাউদ্দিন লিখেছেন, ‘আপনি শান্তিতে বিশ্রাম করুন, বিদায় সুজেয়ও শ্যাম চাচা।’
বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ২টা ৫০ মিনিটের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সুজেয় শ্যাম। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারসহ শারীরিক নানান জটিলতায় ভুগছিলেন সুজেয় শ্যাম। সম্প্রতি তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। পরে তার শরীরের ভেতর সংক্রমণ হলে এক পর্যায়ে তা রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও কিডনির জটিলতাও ছিল।
প্রবীণ এ সংগীতশিল্পীর সুর করা গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘শোন রে তোরা শোন’।
একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। গানটির গীতিকার ছিলেন শহীদুল আমিন। গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়।
১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেটে সুজেয় শ্যামের জন্ম। তার বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামের একটি চা বাগানের মালিক। সিলেটেই কাটে তার শৈশব। দশ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ।
দীর্ঘ সংগীত জীবনে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন সুজেয় শ্যাম। সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক এবং ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি।
এমএমএফ/জিকেএস