জাহিদ হাসান কি অপচয়ের শিকার
আমাদের একজন জাহিদ হাসান আছেন। আমাদের না হয়ে তিনি ভারতের হলে হয়তো প্রতি মাসে বা বছরে অন্তত তিনটি হিন্দি বা তামিল বা তেলেগু ভাষার সিনেমায় তাকে আমরা দেখতে পেতাম। সিনেমা ট্রেড অ্যানালিস্ট মারফত জানতে পারতাম, তার অভিনীত সিনেমা কত শত কোটি রুপি ব্যবসা করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হলে কাড়ি কাড়ি ডলার ব্যয় করে দেখতে যেতাম ব্রডওয়েতে। ঢাকার মঞ্চেও অবশ্য তাকে দেখা যেতে পারতো। মাত্র ১ হাজার বা ৫০০ টাকায় টিকিট কিনে মঞ্চনাটকে! অথচ জাহিদ হাসানকে আমরা দেখি ফ্রি, ইউটিউবে। তিনি এখনো কৌতুক অভিনেতা। জাহিদ হাসান কি নিপুণ অপচয়ের শিকার নন?
১৯৬৭ সালের আজকের দিনে জন্মেছেন জাহিদ হাসান। একই বছরে জন্ম নেওয়া ভিন ডিজেল, জ্যাসন স্ট্যাথাম, উইল ফেরেলদের জীবন কাজভরা! ইতিহাসের পাতায় পাতায় তাদের কীর্তি লেখা হচ্ছে। বলিউডের ববি দেওলও মন্দ নয়, অক্ষয় কুমার এখনো ব্যাটিং করে যাচ্ছেন। আমাদের আছেন ‘আরমান ভাই’! আমরা কি এই জাহিদ হাসান চেয়েছিলাম?
হুমায়ূন আহমেদের ‘আজ রবিবার’ নাটকের আনিস চরিত্রটি মানুষ মনে রাখবে। হয়তো মনে রাখবে একই নির্মাতার ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমায় করা চরিত্রটিও। কিন্তু জাহিদ হাসানের ক্যারিয়ার গ্রাফে আর কী আছে মনে রাখার মতো? মনে পড়ে, ঝাপসা। এই দায় নির্মাতাদের। একজন প্রতিভাবান অভিনেতাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেননি তারা। তবে কি তাদের প্রতিভার ঘাটতি ছিল?
এমনকি জাহিদ হাসানও মনে করেন, জীবনে অনেক ভুল করেছেন তিনি। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে বিগত জীবনের উপলব্ধির ভাগ দিতে গিয়ে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমার একটাই চাওয়া, পেছনে যেসব ভুল করেছি, সেই ভুলগুলো যেন আর কখনো না হয়। ব্যক্তিমানুষ হিসেবে যেন আরও শুদ্ধ হই। অভিনেতা হিসেবে যেন আরও শুদ্ধ হই।’
জাহিদ হাসানকে ভেবে গল্প লেখা যায়। তাকে দিয়ে করানো যায় কোনো ঐতিহাসিক চরিত্রের অভিনয়। কেবল কৌতুকপূর্ণ সংলাপের নাটক নয়, মঞ্চের জন্য নতুন ধরনের সব নাটক, বড়পর্দা কিংবা ওটিটির জন্য ব্যতিক্রম সব গল্পে জাহিদ হাসানকে আরও বেশি বেশি করে কাজ করানো প্রয়োজন। কারণ একজন জাহিদ হাসান গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব। তার কাছেও অবশ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি অভিনয়ে এসেছিলেন, তা কি পূরণ হয়েছে? তিনি বলেন, ‘অভিনয় নিয়ে যে স্বপ্ন আমার ছিল, তা এখনো পূরণ হয়নি। তবে যেটুকু করতে পেরেছি, সেজন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে জাহিদ হাসান ছিলেন দেশের প্রথম সারির অভিনেতা। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, মোস্তফা সরায়ার ফারুকীর ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’, মোস্তফা কামাল রাজের ‘প্রজাপতি’ ছবিগুলোতে অভিনয় করে জাহিদ হাসান তার প্রতিভার ‘স্যাম্পল’ প্রদর্শন করেছেন। পরে তিনি নির্মাতা হিসেবেও কাজ করেছেন। তার বানানো উল্লেখযোগ্য দুই ধারাবাহিক ‘লাল নীল বেগুনী’, ‘টোটো কোম্পানি’। তবে ‘প্রতিভার অপচয়’ হিসেবে তিনি অভিনয় করেছেন বহু খণ্ডনাটকে। সেসবের নাম এখন আর কেউ নেবে না। কারণ উপভোগ শেষে ওগুলো হারিয়ে গেছে ইউটিউবের গভীর সমুদ্রে।
জাহিদ হাসান অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা মোস্তফা সরয়ারি ফারুকী নির্মিত ‘শনিবার বিকেল’। যদিও তার চরিত্রটিকে কেন্দ্রীয় চরিত্র বলা যাবে না। ছবিটি বাংলাদেশে মুক্তির অনুমতি পায়নি এখনো। বিদেশের উৎসবে দেখানো ছবিটি ভারতীয় একটি অখ্যাত ওটিটিতে অবমুক্ত হয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘শনিবার বিকেল’ বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এমএমএফ/আরএমডি/জিকেএস