‘আমি বিটিভি যাইনি, গিয়েছি ঢাকা মেডিকেলে’
আগে মানুষ, নাকি স্থাপনা? একজন মানুষ ও শিল্পী হিসেবে কোনটিকে গুরুত্ব দেবে? সাধারণ অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কেন কথা বলছেন না? ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের ঘটনা কী? এসব নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম। ফোনে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মইনুল ইসলাম।
জাগো নিউজ: রাজধানীর গ্রাউন্ড জিরোতে সংস্কারকামী পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা এক হয়ে ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’র কাছে পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন। আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না কেন?
আহসান হাবিব নাসিম: আমরা কথা বলতে রাজি হচ্ছি না এটা তাদের বক্তব্য। এটা ভুল। আমরা শুরু থেকেই বলেছি, নতুন যেসব প্রস্তাবনা আসবে, সবই আমরা শুনবো। সেভাবেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা বলেছেন, যারা অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্য না, ওই আলোচনায় তারাও উপস্থিত থাকবেন। আমরা বলেছি, সদস্যরা আসুন। তাদের সব কথা শুনবো। যদি সারাদিন লাগে, লাগুক। আমরাও কথা বলতে চাই। কিন্তু তারাই তো কথা বলার পথ বন্ধ করেছে। আমি আবারও আহ্ববান জানাবো, তাদের দাবিগুলো নিয়ে আসতে। আমরা কথা বলতে চাই।
জাগো নিউজ: অসদস্য শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলতে বাঁধা কোথায়?
আহসান হাবিব নাসিম: দেখেন, তারা একা না। আরও অনেক গ্রুপ আছে যারা সংস্কার চাইছে। তাদের কথাও তো আমাদের শুনতে হবে। সংগঠনের একটা নিয়ম আছে। আমরা সেই নিয়ম ভাঙতে পারি না।
আরও পড়ুন:
গত পয়লা আগস্ট ধ্বংসপ্রাপ্ত বিটিভি ভবনে শিল্পীরা। ছবি: বিটিভির সৌজন্যে
জাগো নিউজ: আগে মানুষ নাকি স্থাপনা? মানুষ ও শিল্পী হিসেবে কোনটি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ?
আহসান হাবিব নাসিম: আমি তো বিটিভিতে যাইনি। রওনক ও মামুন ভাইসহ (নাট্যকার মামুনুর রশিদ) কয়েকজন শিল্পীকে নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেলে। সেটাও ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে জানিয়েছিলাম। তারপরই ওই গ্রুপের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
জাগো নিউজ: আলো আসবেই গ্রুপটা কবে থেকে সক্রিয়?
আহসান হাবিব নাসিম: এই গ্রুপ খোলা হয়েছে ৩১ জুলাই। আর ওরা রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আগে ধ্বংস হওয়া স্থাপনায় যাবে। আমাকে কয়েকজন বোঝাতে চেয়েছিল, আমি কিন্তু সেটা মানিনি।
জাগো নিউজ: ঘটনাটা একটু বিস্তারিত বলবেন?
আহসান হাবিব নাসিম: আমরা শিল্পীরা চেয়েছিলাম আগে আহত ছাত্রদের দেখতে যাব। আগে মানুষ, তারপর স্থাপনা। কিন্তু ওরা রাতে সিদ্ধান্ত নিলো, আগে স্থাপনা, বিটিভিতে যাবে। আমরা তখন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলাম, আগে ছাত্রদের কাছে না গিয়ে বিটিভিতে গিয়ে দাঁড়াতে পারবো না। আগস্টের ১ তারিখ সকালে একদল বিটিভিতে গেছে, আমরা কিন্তু যাইনি। সেখান থেকেই আমাদের সঙ্গে তাদের একটা মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। তারপর থেকে আমি ওই গ্রুপের কোনো আলোচনা-সমালোচনায় সক্রিয় ছিলাম না। ঢাকা মেডিক্যালে আমি, রওনক, মামুন ভাইসহ আরও কয়েকজন শিল্পী যাই। বিটিভি ঘুরে এসে একটা দল আমাদের সঙ্গে দাঁড়ায়। অনেকে ভুল ভাবছে যে, বিটিভি টিম এখানে আসছে! তা কিন্তু না। সকালে ওই টিমের সঙ্গে বিটিভিতে আমরা যাইনি। আমার কাছে আহত মানুষ আগে। আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি ষ্পষ্টভাবে বলেছি, সকল হত্যার বিচার চেয়েছি। হত্যার প্রতিবাদ করেছি। ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন দিয়েছি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন দিয়েছি। সকল হত্যার বিচার দাবি করেছি।
আরও পড়ুন:
- সানী বললেন, সিন্ডিকেট ভেঙে গেছে, আলো আসবেই
- শিল্পীসংঘে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপ, আলো আসবেই গ্রুপে সংঘের শিল্পীরা
- ‘আলো আসবেই’ কাণ্ড আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন ক্ষুব্ধ সাইমন
অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম। ছবি: সংগৃহীত
জাগো নিউজ: ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের কাজটা কী আসলে?
আহসান হাবিব নাসিম: আলো আসবেই গ্রুপের যদি কোনো এজেন্ডা থেকে থাকে, সেটা তাদের বিষয়। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অ্যাড করতে কারো পারমিশন লাগে না। ওই গ্রুপে অনেক শিল্পীকে অ্যাড করা হয়েছে। দেখতে হবে যে, আমরা ওই গ্রুপে কোনো কথা বলেছি কি না। সেখানে যুক্ত হয়ে যে বা যারা উসকানিমূলক কথা লিখেছেন, তাদের সঙ্গে অন্যদের মিলিয়ে ফেললে সেটা ঠিক হবে না। গ্রুপ অ্যাডমিন কাদের অ্যাড করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। শুনেছি, ইচ্ছে মতো, ১৫০ জনের মতো, মানুষকে অ্যাড করেছে। আমার নাম ছিল বলে আমি কখনই উসকানিমূলক কোনো কথা বলিনি। কোনো রকম মন্তব্য, কারো কোনো মন্তব্যে লাইক বা শেয়ার করিনি। তাহলে আমার কেন দায় নিতে হবে?
জাগো নিউজ: এই বিষয়টা নিয়ে ফেসবুক তোলপাড়। আপনি কি সেসব দেখেছেন?
আহসান হাবিব নাসিম: যেগুলো বললাম, এই ঘটনাগুলো কেউ জানে না। তাই সমস্যাগুলো হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি ফেসবুকটা ভালোভাবে ডিল করতে পারি না। মানে টাইম টু টাইম ডিল করতে পারি না। আমি ফেসবুকে কিছু পারিবারিক ছবি দেওয়া ছাড়া তেমন কিছু করতে পারি না, তাই সমস্যা হয়ে গেছে। ফেসবুকে নানান ঘটনা টাইম টু টাইম চেঞ্জ হয়। তাই আমি ফেসবুকটাকে বেশি পাত্তা দিই না।
জাগো নিউজ: ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের ওপর সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত। সেখানে আপনার সদস্যদের মধ্যে যারা আছে, তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন?
আহসান হাবিব নাসিম: যারা সেই সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, শিল্পীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছেন এবং আলো আসবেই গ্রুপে উসকানি দিয়েছেন, তাদের আমরা শোকজ করছি। তবে এই মুহূর্তে তাদের নামগুলো জানতে চাইবেন না প্লিজ।
এমআই/আরএমডি/এমএস