শিল্পীসংঘে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপ, আলো আসবেই গ্রুপে সংঘের শিল্পীরা
‘অভিনয়শিল্পী সংঘেও “আলো আসবেই” গ্রুপের মতো একটি গোপন গ্রুপ আছে। সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচি, শিল্প এবং শিল্পীর ভালোমন্দ নিয়ে আলোচনা করা হয়।’ গত ৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে এ রকম একটি পোস্ট দেন অভিনেত্রী মনিরা মিঠু। সেখানে নিজের আক্ষেপ ও অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি। এতে বিব্রত শিল্পীসংঘ। কারণ ‘আলো আসবেই’ গ্রুপেও সংঘের শিল্পীদের অনেককে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্যদিকে এই বিভক্ত সময়ে শিল্পীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ অস্বস্তি তৈরি করেছে বিনোদন অঙ্গনে।
অভিনেতা ডা. এজাজ ও মনিরা মিঠুর একটি হাস্যরসাত্মক ভিডিও ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছিলেন মিঠু। তার অভিযোগ, যথেষ্ট ‘শালীন’ না হওয়ায় শিল্পীসংঘ থেকে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয় তাকে। শালীনতার প্রশ্নে একমত না হলেও সংঘের পরামর্শ মেনে সেদিন ভিডিওটি সরিয়েছিলেন মিঠু। তবে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে ৩শ সত্তর শব্দের একটি পোস্ট দেন মিঠু। সেখানে অভিনয়শিল্পী সংঘের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাজনীন হাসান চুমকি ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক সুজাত শিমুলের নাম উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই অভিনেত্রী।
মনিরা মিঠু
ঘটনাটি সেখানেই শেষ হয়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করলে বিব্রত হয় দুই পক্ষ। বিষয়টির বিস্তারিত জানতে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে শুরুতে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি মনিরা মিঠু। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তার কনটেন্ট নিয়ে শিল্পীসংঘের গ্রুপে আলোচনার যে স্ক্রিনশট দেখেছিলেন, সেগুলো কি শিল্পীসংঘের, নাকি কোনো গোপন গ্রুপের? আগে কোনো শিল্পীকে কি এভাবে ভিডিও সরাতে বলা হয়েছিল? জবাবে তিনি জানান, গ্রুপটি শিল্পীসংঘেরই। আগে কাউকে বলা হয়েছিল কি না, সেটা তার জানা নেই। ভিডিও সরিয়ে ফেলতে বলার কারণ কী বলে মনে করেন? মনিরা মিঠু বলেন, ‘তারা অতি সুশীল, কবিতা ও সাহিত্যের মানুষ। আমি তো সে রকম না, হয়তো আমি ভালগার।’ মিঠু বলেন, ‘চুমকি ইউটিউবে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন, যেটি তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই নয়। ফেসবুকে সেই কনটেন্টটি শেয়ার করে সেটার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর থেকেই তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ।’
বেশ কয়েক মাস ধরে উৎকণ্ঠায় আক্রান্ত হয়ে ওষুধ খাচ্ছেন মনিরা মিঠু। বিনয়ের সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন যে, আলো আসবেই গ্রুপের কথপোকথন ফাঁস হওয়ার পর তার উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়, পুরাতন ক্ষোভ জেগে ওঠে। তা ছাড়া কয়েক মাস আগে নাম উল্লেখ না করে তার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন সহকর্মী নাজনীন চুমকি। বিভিন্ন শুটিং সেট ও গ্রিনরুমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়, যা তাকে প্রতিনিয়ত ব্যথিত করে। সেই ক্ষোভ তিনি সামাল দিতে পারেননি।
ভিডিও সরাতে বলার প্রকৃত কারণ জানতে চাইলে নাজনীন হাসান চুমকি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওনার ও এজাজ ভাইয়ের ভাবমূতি নষ্ট হতে পারে ভেবেই বলেছিলাম। কলিগের সম্মানহানি হলে খারাপ লাগবে আমার। আমি শিল্পীসংঘের কমিটি মেম্বার, ভিডিওটি আমার চোখে পড়েছিল অনেক রাতে। তাই আপাকে আমি ফোন না করে উর্মিলাকে বলেছিলাম। উর্মিলা যে কোনো সময় মিঠু আপাকে ফোন করার অধিকার রাখে। তবে মিঠু আপা কমিটির গ্রুপকে আলো আসবেই-এর মতো গ্রুপ বলে ঠিক কাজ করেননি। কমিটিতে যে কজন সদস্য আছি, সবাই সংগঠনের জন্য কাজ করার সময় পান না। যারা করেন, তারা অত্যন্ত নিষ্ঠাবান। সদস্যদের জন্য আমরা হাসপাতাল, মন্ত্রণালয়, গ্রোসারি শপ কোথায় না গিয়েছি! ভাবমূর্তি রক্ষার খাতিরে ভিডিও সরাতে বলা সামান্য ঘটনা।’
নাজনীন হাসান চুমকি
আলো আসবেই গ্রুপেও তো শিল্পীসংঘের সদস্যরা ছিলেন। সে প্রসঙ্গে চুমকি বলেন, ‘সবার একটা মতাদর্শ থাকে। অনেক রকম গ্রুপে অনেককে যুক্ত করা হয়। দেখবেন, ওই গ্রুপে আমাদের সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কোনো কমেন্ট নেই। তারা গ্রুপে ছিলেন, কিন্তু সক্রিয় ছিলেন না। এটা দেখে আমার ভালো লেগেছে। তবু বলব, ভুল সবার থাকে। আমরা হয়তো বুঝিনি, সেটাই এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। ওসব স্ক্রিনশট বা মিঠুর আপার স্ট্যাটাসে এখন ভাবমূর্তি নষ্ট হলে কিছু করার নেই।’
মনিরা মিঠু ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার পর প্রত্যুত্তরে আলাদাভাবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন চুমকি ও সুজাত শিমুল। একজন সংক্ষুব্ধ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ না করে, তাকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান না করা কি সাংগঠনিক আচরণ? জানতে চাইলে সুজাত শিমুল বলেন, ‘ভিডিও ডিলিট করতে বলার ঘটনাটি বেশ আগের। তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। অভিযোগ থাকলে ডেকে বলতে পারতেন। এতদিন পর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলায় আমি ইমেজ সংকটে পড়েছি। মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। সাধারণ মানুষ অনেক কিছু বুঝতে চান না। তা ছাড়া তিনি আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির গ্রুপকে আলো আসবেই-এর মতো গ্রুপ বলে একটা বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন।’
আত্মপক্ষ সমর্থন করে সুজাত শিমুল বলেন, ‘সংগঠনের স্বার্থে গ্রুপে নানান রকম আলোচনা হয়। ওনার ভিডিও সরাতে বলাও সে রকম ব্যাপার। আমি তো প্রতিক্রিয়া জানাতেই পারি, সেটা আমার দায়িত্ব। আমি সেটা করেছি একটা কমিটির গ্রুপে। মিঠু আপা সেটা ফেসবুকে হাজারো মানুষের উদ্দেশে লিখে দিতে পারেন না। আর সেটা এই অস্থির সময়ে কেন? এটা কি তিনি নিজে করলেন, নাকি কারও প্ররোচনায় করলেন?’
আরও পড়ুন:
মনিরা মিঠু ও সুজাত শিমুল
একজন জ্যেষ্ঠ অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে কটূ কথা কি কমিটির গ্রুপে বলা যায়? এমন প্রশ্নে শিমুল বলেন, ‘আপা যদি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমি তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করব। আমার যদি কোনো ভুল থাকে, সেটা সংগঠন দেখবে। কিন্তু আপাকেও কার্যনির্বাহী গ্রুপকে আলো আসবেই-এর সঙ্গে তুলনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। তার কারণে লোকে আমাকে গালি দিচ্ছে, সংগঠনকে ভুল বুঝছে। আমরা দুই-তিন দিনের মধ্যে আপাকে ডেকে সাংগঠনিকভাবে বিষয়টি নিয়ে বসবো। যা হয়েছে, হয়তো ভুলে যাব, কিন্তু হৃদয়ে ক্ষত থেকে যাবে।’
মনিরা মিঠু তার ফেসবুক পোস্টটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। স্ক্রিনশট হিসেবে সংরক্ষিত থাকলেও প্রত্যাহার করায় তা প্রকাশ করা হল না।
আরএমডি