দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শিল্পী বেবী নাজনীন
‘কোকিলকণ্ঠী’ শব্দটির সঙ্গে যে নামটি জুড়ে আছে, তিনি বেবী নাজনীন। নব্বই পরবর্তী আধুনিক বাংলা গানের ভুবন যার স্বরগ্রামের সঙ্গে উঠতো, নামতো, নাজনীন তাদের অন্যতম। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে তিনি নাম লেখান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতিতে। কোনঠাসা হয়ে একপর্যায়ে পাড়ি জমান বিদেশে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অবশেষে দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন।
আজ (২৩ আগস্ট) বেবী নাজনীনের জন্মদিন। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী এই শিল্পী। পরিবার নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। জন্মদিনে জানালেন, শিগগিরই দেশে ফিরছেন তিনি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মারা যান বেবী নাজনীনের মা আবিদা মনসুর। বড় সন্তান হয়েও মায়ের শেষযাত্রায় পাশে থাকতে পারেননি এই শিল্পী। তবে এবার ফিরবেন, প্রায় দুবছর পর। শুভেচ্ছা বিনিময়ে জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘জন্মদিন উপলক্ষে আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। আমি যেন সুস্থতার সঙ্গে সব কাজ করে যেতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষকে খুব মিস করছি। দেশের মানুষকে আবারও গান শোনাতে শিগগিরই ফিরব, নতুন নতুন গান উপহার দেব। দেশে বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে আমার কিছু গানের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। সেগুলোও সম্পন্ন করব।’
আরও পড়ুন:
- যে সিনেমাগুলো তাকে করেছে অমর
- অনেক বছর পর কেক কাটেননি বাবু
- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হলেন বেবী নাজনীন
ক্যারিয়ারের একপর্যায়ে বেবী নাজনীন যুক্ত হয়েছিলেন রাজনীতিতে। হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়ার উদেষ্টাদের একজন। এ কারণেই তার সংগীতের ক্যারিয়ার বাধাগ্রস্ত হয়। টেলিভিশনের অনুষ্ঠানেও তাকে নেওয়া হতো না। বঞ্চিত করা হতো স্টেজ শো থেকে। বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততার কারণে বাংলাদেশে তার পেশাগত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতো, স্টেজ শো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কোনঠাসা নাজনীন তাই চলে যান ছেলে কাছে, যুক্তরাষ্ট্রে।
রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়া প্রসঙ্গে বেবী নাজনীন বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতি করার স্বাধীনতা সবারই থাকা উচিত। অথচ রাজনীতি করায় আমাকে কনসার্ট দেওয়া হয়নি। টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান থেকেও আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।’ তবে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাঙালিদের অনুষ্ঠানে বেবী নাজনীনের আবেদন কখনই ফুরায়নি। আসছে ৩১ আগস্ট বেবী নাজনীন গান শোনাবেন কানাডার টরোন্টোতে। সেখানকার বার্চমাউন্ট পার্কের বাংলা মেলায় গাইবেন তিনি। এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশে দুই-তিন দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি যাবেন কানাডায়। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশে ফিরবেন বেবী নাজনীন।
বেবী নাজনীনের গানে হাতেখড়ি বাবা মনসুর সরকারের কাছে। বাবা ছিলেন জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনের একজন বিশেষ শ্রেণির যন্ত্রশিল্পী। পরে নিজ আগ্রহ ও উদ্যোগে সংগীতের নানামুখী দীক্ষা নেন নাজনীন। মঞ্চে গাইতে শুরু করেছিলেন সাত বছর বয়স থেকে। ১৯৮০ সালে প্রথম প্লেব্যাক করেন। এহতেশামের ‘লাগাম’ সিনেমার ওই গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছিলেন আজাদ রহমান। ১৯৮৭ সালে মকসুদ জামিল মিন্টুর সংগীত পরিচালনায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম অ্যালবাম ‘পত্রমিতা’। এই অ্যালবাম তার ব্যক্তিজীবন ও সংগীতজীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
‘কাল সারা রাত’, ‘দুচোখে ঝুম আসে না’, ‘প্রেম করিলেও দায়’, ‘নিঃশব্দ সুর’ অ্যালবামগুলো আধুনিক বাংলা গানে বেবী নাজনীনকে শক্ত অবস্থান করে দেয়। তার কণ্ঠে ‘কাল সারা রাত ছিল স্বপনের রাত’, ‘এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল’, ‘দুচোখে ঘুম আসে না তোমাকে দেখার পর’, ‘মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে’, ‘কই গেলা নিঠুর বন্ধু রে সারা বাংলা খুঁজি তোমারে’, ‘পুবালী বাতাসে’, ‘ও বন্ধু তুমি কই কই রে’সহ অনেক জনপ্রিয় গান আজও মানুষের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। তার সর্বশেষ একক অ্যালবাম ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড বেবী নাজনীন’। দেশে তিনি গেয়েছেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের কোনো স্টেজে তাকে আর গাইতে দেখা যায়নি। সিনেমার গানের জন্য বেবী নাজনীন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে বহু সম্মানায় ভূষিত হয়েছেন। নিজে গান লিখেছেন। তার লেখা তিনটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে।
দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয়া হবেন কি না জানলে চাইলে বেবী নাজনীন বলেন, ‘গান শোনানোর পাশাপাশি আমি মানুষের সেবা করতে চাই। দেশে ফিরলে দল আমাকে যে দায়িত্ব দেবে, তা পালনে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। একটি সুন্দর দেশ গড়তে দলের হয়ে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই।’
এমএমএফ/আরএমডি/এমএস