আরও সংকটে চলচ্চিত্র, দুই সপ্তাহে অনিশ্চিত দুই সিনেমাও
কোটা সংস্কার নিয়ে চলমান আন্দোলনের জেরে দেশের অনেক খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশের চলচ্চিত্র শিল্পও সেই তালিকায়। এমনিতেই বছরজুড়ে সিনেমা মুক্তির সংখ্যা কমেছে অন্য বছরগুলোর তুলনায়। যেসব ছবি মুক্তি পায় সেগুলোর মধ্যে হাতেগোনা দু-একটি পায় ব্যবসায়িক সাফল্যের দেখা। তার ভিড়ে ভর করেছে সাম্প্রতিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অচলাবস্থা।
গেল দুই সপ্তাহে কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। অনেকে সিনেমা মুক্তির প্রস্তুতি নিয়েও চুপ হয়ে আছেন দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার অপেক্ষায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শোকের মাস আগস্টের প্রথম দুই সপ্তাহে মুক্তির তারিখ বুকিং দিয়েছে দুটি সিনেমা। এর একটি ‘নন্দিনী’ মুক্তি পাওয়ার কথা ২ আগস্ট। অন্যটি মনতাজুর রহমান আকবরের ‘অমানুষ হলো মানুষ’। এটি ৯ আগস্ট মুক্তি পাওয়ার মিছিলে রয়েছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রদর্শক সমিতির এক কর্মকর্তা জানান, দুটি ছবি মুক্তির জন্য তারিখ বুকিং দিয়েছে। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে ছবিগুলো মুক্তি পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
দুটি ছবির পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের সাড়া মেলেনি। তবে ‘অমানুষ হলো মানুষ’ ছবির প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজল জানান, ‘এই মুহূর্তে সিনেমাটি মুক্তি দেয়া হবে কি না বলতে পারছি না। আমরা পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছি। দেখা যাক কি হয়।’
গেল কোরবানি ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘তুফান’ সিনেমার পর আর কোনো সাফল্যের গল্প নেই ঢালিউডে। চলচ্চিত্রের অনেকেই মনে করছেন, চলতি বছরে দর্শক হলে টানার মতো সিনেমা নেই বলা যায়। এখন অনেক সিনেমা তৈরি হয়, কিন্তু দর্শকের চাহিদার কথা মাথায় রাখা হয় না। গল্প ও নির্মাণেও মুন্সিয়ানার কমতি দেখা যায়। যার ফলে প্রচারের জৌলুস থাকলেও সিনেমাগুলো বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
এদিকে প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু জানান, চলমান আন্দোলনে চলচ্চিত্র শিল্পের সংকট আরও বেড়েছে। সিনেমার মুক্তি যেমন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে তেমনি অনেক নির্মাতা শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিয়েও শুটিং করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সিনেমার শুটিং কিন্তু ব্যয়বহুল। এক ঘণ্টা শুটিং না করতে পারলেই একজন প্রযোজকের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। একজন নির্মাতাও এতে বিপাকে পড়েন। আশার কথা হলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আবারও অনেকে শুটিংয়ে ফিরছেন।
চলচ্চিত্রবোদ্ধারা মনে করছেন, দর্শক হলে টানে এমন সিনেমা বেশি বেশি নির্মাণ করা প্রয়োজন। তাই প্রয়োজন দর্শকের চাহিদা বিশ্লেষণ ও বাজার গবেষণা। সেইসঙ্গে দেশে সিনেপ্লেক্সের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সিঙ্গেল স্ক্রিণের আধুনিকায়ন-সংস্কারও খুব জরুরি। বিশেষ করে সিনেপ্লেক্সগুলোর জন্য উপযোগী সিনেমাই ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে দিতে পারে বলে দাবি করছেন অনেকে। কারণ গেল কয়েক বছরের চালচিত্রে এটা স্পষ্ট- ভালো মানের সিনেমাগুলো দেশের পাশপাশি বিদেশেও ভালো টাকা আয় করে।
প্রযোজক যদি সিনেমা বানিয়ে মুনাফার মুখ না দেখেন তাহলে তিনি আর দ্বিতীয়বার লগ্নি করবে না। ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা রাখা যাবে না। সংকটও কাটবে নাা। তাই ধারাবাহিকভাবে সাফল্য খুব জরুরি ঢালিউডের জন্য।
এলএ/এএসএম