পোর্টের কেরানি থেকে মহানায়ক, আজ তার প্রয়াণের দিন
পোর্টে কেরানির চাকরি নিয়েছিলেন অরুণ বাবু। মধ্যবিত্ত সংসারের হাল ধরতে হবে! কিছু করার ছিল না। পড়ালেখা তখনও শেষ হয়নি। সেই অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় একদিন হয়ে উঠলেন দেশসেরা ‘নায়ক’। আজ মহানায়ক বললে যে কেউ বুঝে নেন, বলা হচ্ছে উত্তম কুমারের কথা। আজ তার চলে যাওয়ার দিন।
১৯৮০ সালের আজকের দিনে মারা যান উত্তম কুমার। যদিও ওটা ছিল তার এক আনুষ্ঠানিক যাওয়া। তার মতো অভিনেতারা কখনও কোথাও যান না। তারা মানুষের হৃদয়ে একটা পাকাপোক্ত জায়গা করে নেন। মন খারাপ হলেই সেখানে জেগে ওঠেন, কখনও সংলাপ, কখনও ভুবন ভোলানো হাসি হয়ে। এমনকি আজকের অনেক তরুণী প্রিয় মানুষের চেহারার আদলে খোঁজেন উত্তমকে।
মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেছিলেন উত্তম। তারপর বাংলা সিনেমায়। সেসব সিনেমা আজও দেখেন মানুষ। হালের ওটিটি প্লাটফর্ম ধ্রুপদী সিনেমা হিসেবে কিনে রেখে দিয়েছে উত্তমের কোনো কোনো সিনেমা। ধরা যাক ১৯৫৩ সালের ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির কথা। রীতিমতো ঝড় তুলেছিল সে ছবি। ওটা দিয়েই তো জনপ্রিয় জুটি উত্তম-সুচিত্রার যাত্রা শুরু হল। বাংলা সিনেমার নব রোমান্টিক যুগের সূচনা হল।
- আরও পড়ুন
- কবে আসছে কবরীর শেষ সিনেমা, জন্মদিনে জানিয়েছেন ছেলে
- বাংলাদেশে একইদিনে চঞ্চল চৌধুরীর ‘পদাতিক’
প্রায় ২০৯টি সিনেমা করেছিলেন উত্তম। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরী’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’ আর ‘সাগরিকা’ ছবিগুলো সেকাল জয় করেছিল। আজও সিনেমাপ্রেমীদের প্রিয় ছবির তালিকায় থাকে ওগুলো। নতুন প্রজন্মকে পরামর্শ দিতে হলে এই ছবিগুলোই দেখার কথা বলেন বড়রা। সত্যজিৎ রায়ের মতো বড় নির্মাতা তার ‘নায়ক’ ও ‘চিড়িয়াখানা’ ছবি দুটিতে নিয়েছিলেন উত্তমকে। বলা হয়ে থাকে, উত্তম কুমারকে ভেবেই ‘নায়ক’ ছবির গল্প লেখা হয়েছে। পরে তো বেশ কয়েকটি হিন্দি সিনেমাও করেছেন উত্তম। সেগুলোর মধ্যে ‘ছোটিসি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’ ছবিগুলোও পছন্দ করেছিল মানুষ। তার প্রথম দিকের ব্যবসাসফল ছবি ‘দৃষ্টিদান’, তারপর ‘মায়াডোর’ ও ‘বসু পরিবার’।
সুচিত্রা ও উত্তমকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া কথাগুলো আজ রীতিমতো মিথ! ১৯৪৮ সালে বিয়ে করেছিলেন গৌরী দেবীকে। ১৯৬৩ সালে তাকে ছেড়ে চলে যান উত্তম। সে বছরই সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে শুরু করেন নতুন সংসার। সেসব নিয়ে আজ পর্যন্ত কত কথাই তো হল! আজ চলে যাওয়ার দিনে সেগুলো স্মরণ করে কী লাভ!
১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার ভবানীপুরে জন্ম উত্তম কুমারের। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই কলকাতার টালিগঞ্জে মৃত্যু। তাকে স্মরণ করে আজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো রেখেছে নানা আয়োজন। বিশেষ করে তার সিনেমার প্রদর্শনী। মোট কথা, আজ বেশ ঘটা করেই তাকে স্মরণ করা হচ্ছে সেখানে।
আরএমডি/জিকেএস