যৌথ প্রযোজনার ছবি সবসময়ই ব্যর্থ হয়েছে : শতাব্দী রায়
কলকাতার একসময়ের দাপুটে অভিনেত্রী শতাব্দী রায় এখন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দল থেকে ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। এ কারণে অভিনয়ে নেই দীর্ঘদিন।
তবে দর্শকদের জন্য সুখবর হচ্ছে, ঢাকার ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে আবারো রূপালী পর্দায় দেখা যাবে এ লাস্যময়ীকে। চিত্রনায়িকা ববি প্রযোজিত ‘বিজলী’ ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি।
গতকাল শনিবার, ২৩ এপ্রিল ঢাকায় এসেছিলেন ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত এই ছবির মহরতে অংশ নিতে। সেই অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে শতাব্দী রায় কথা বললেন জাগো নিউজের সঙ্গে-
জাগো নিউজ : বাংলাদেশে আসলেন কত দিন পর?
শতাব্দী : সঠিক করে বলতে পারবো না। তবে আমার মনে হচ্ছে প্রায় ১২-১৪ বছর আগে সর্বশেষ ঢাকায় এসেছিলাম।
জাগো নিউজ : কেমন লাগছে এতদিন পর ঢাকায় এসে?
শতাব্দী : খুব ভালো লাগছে। তবে আমার মনে হয় আগের তুলনায় ঢাকার রাস্তায় জ্যামটা একটু বেড়েছে। তাছাড়া বাকী সব আগের মতই আছে মনে হচ্ছে। এতদিন পর এসে আমার তো খুব ভালো লাগছে। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। আরো হবে। সবেচেয়ে বেশি উপভোগ করছি চলচ্চিত্রের সাথে জড়ানো নতুন প্রজন্মের মানুষদের।
জাগো নিউজ : বিজলী ছবিতে কাজের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর আবারো ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাই...
শতাব্দী : আমি রাজনীতি নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। ক`দিন পর বিধান সভার নির্বাচন। ওটা নিয়ে ছোটাছুটির মধ্যে আছি। কিছুদিন আগে ববি কলকাতায় গিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করে এবং ছবিতে কাজের কথা বলেন। আমি প্রথমে তাকে বলেছিলাম আমার হাতে সময় নেই। সুতরাং কাজ করতে পারবো না। কিন্তু সে এমনভাবে আমাকে বলেছিলো দ্বিতীয়বার আর না করার সুযোগ পাইনি। আসলে সত্যি কথা কী, এক জীবনে মানুষের কাছে ভালোবাসা আর সম্মানটাই সবচেয়ে বড়। ববি ছোট্ট একটা মেয়ে। তার কাছ থেকে যে ভালোবাসা, আমাকে নিয়ে কাজ করার যে একাগ্র ইচ্ছে এটাই আমাকে এই ছবিতে কাজ করতে অনুপ্রাণীত করেছে। ববির শ্রদ্ধা-সম্মানবোধে আমি মুগ্ধ।
জাগো নিউজ : একজন অগ্রজ হিসেবে ববিকে আপনি কী নির্দেশনা দিয়েছেন?
শতাব্দী : ও খুব ভালো একটা মেয়ে। ভীষণ সেনসিটিভ। ওকে আমি বলেছি প্রযোজনার চাপটা যেন নেয়। যখন সে অভিনয় করবে তখন রিল্যাক্স থাকা প্রয়োজন। আর যেহেতু এই ছবিটিতে ববি মূল চরিত্রে অভিনয় করবে তাই ওর প্রয়োজন অধিক মনযোগ ও পরিশ্রম। আমার বিশ্বাস সে পারবে। আসলে আমি নিজেও প্রযোজনা করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একজন নায়িকার প্রযোজনা করাটা খুব কঠিন কাজ। সবকিছু দেখভাল করে নিজের অভিনয় ঠিক রাখা চারটিখানি কথা নয়। আমি তো প্রায়ই বলি, প্রত্যেক নায়ক-নায়িকাকেই একবার অন্তত প্রযোজনায় আসা উচিত। তবেই তারা বুঝতে পারবে চলচ্চিত্র কেবল স্টারডমের নয়। এর অনেক বাস্তবতা আছে। একজন নায়ক শুটিংয়ে সামান্য আঘাত পেলেই সব বন্ধ করে দিয়ে হাসপাতালে ছুটে। কিন্তু ওই নায়ক যদি ছবিটার প্রযোজক হতেন তবে বলতেন এই আঘাত তেমন কিছু নয়। ও ঠিক হয়ে যাবে। চলো শুটিং শুরু করি। এটাই বাস্তবতা। অন্যের প্রযোজনায় আরাম-আয়েশটা বেশি থাকে। কিন্তু নিজের প্রযোজনায় মূল টার্গেট থাকে দ্রুত সুন্দর করে ছবিটাকে হলে মুক্তির ব্যবস্থা করা।
জাগো নিউজ : শুনলাম ছবিতে আপনাকে একজন বিজ্ঞানীর ভূমিকায় দেখা যাবে?
শতাব্দী : ঠিকই শুনেছেন। আর আমি কিন্তু এই প্রথম বিজ্ঞানী হয়ে অভিনয় করতে যাচ্ছি। ছবিতে আমার চরিত্রের নাম ডা. জেরিন।
জাগো নিউজ : আপনি নিজেও ক্যারিয়ারের একটা সময় অনেকগুলো যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করেছেন। ইদানিং যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন।
শতাব্দী : যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো করা হয় দুই বাংলার ছবির বাজার বড় করার বাসনা নিয়ে। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যৌথ প্রযোজনার ছবি সবসময়ই ব্যার্থ হয়েছে। এটার বলার কারণ হচ্ছে দুই দেশের প্রযোজনায় নির্মিত একটি ছবিও নেই যেটি কিনা একসঙ্গে দুই দেশে ব্যবসা করতে পেরেছ। কোনোটা ঢাকায় ভালো ব্যবসা করেছে তো কোনোটা কলকাতায়। এখনো সেই ধারাই অব্যাহত আছে। তাই এখন যারা যৌথ প্রযোজনার ছবি বানাচ্ছেন তাদের নতুন করে এ নিয়ে ভাবা উচিত।
জাগো নিউজ : দুই বাংলার চলচ্চিত্র আদান-প্রদানে নানা ঘটনাই ঘটছে গেল দুই বছর ধরে। আপনি তো ওপারের একজন প্রভাবশালী চলচ্চিত্রের মানুষ এবং সরকারি এমপি। এ বিষয়ে আপনার কী মন্তব্য?
শতাব্দী : বাজার বৃদ্ধির স্বার্থে দুই বাংলার চলচ্চিত্রের আদান-প্রদান করা গেলে সেটি খুবই ইতিবাচক হতো। কলকাতা সেটা আন্তরিকভাবেও চায়ও। ঢাকাতেও অনেকে চান। কিন্তু অনেকে এটার বিরোধীতাও করেন। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক খবরই কানে গেছে। আসলে মূল সমস্যাটা হয়েছে একটি রাজ্যের সঙ্গে কখনো একটি দেশের চুক্তি হতে পারে না। কলকাতা ভারতের একটি রাজ্য মাত্র। কলকাতার সঙ্গে চুক্তি করে ওপারের ছবি এপারে কীভাবে মুক্তি দেবেন যদি ভারত সরকার অনুমতি না দেয়? কারণ এই বিষয়ে চুক্তি হলে সেখানে লিখতে হবে ভারত-বাংলাদেশ চলচ্চিত্র বিনিময়। আর সেটি হলে শুধু বাংলা নয়, ভারতের অন্যান্য ভাষার ছবিও এর অন্তর্ভূক্ত হবে। কিন্তু এপার থেকে বাংলা ছাড়া অন্য ভাষার ছবির ব্যাপারে আপত্তি আছে। বিশেষ করে বলিউডের ছবি এদেশের হলে চলবে এটা এখানকার বেশিরভাগই মানছেন না। মানবার কথাও নয়। একশ কোটি বাজেটের ছবির সঙ্গে এক কোটি বাজেটের ছবির প্রতিযোগিতা বা সমজাতীয় বাজার হতে পারে না। তাই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে চুক্তি করতে হবে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাংলা ছবির বিনিময়। তবে কিছু একটা হলেও হতে পারে। তবে এইসব ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন এ বিষয়ে দক্ষ এবং সংশ্লিষ্টরা। আমরা কেবল দুই বাংলার মধ্যে চলচ্চিত্রের বিনিময়ের স্বপ্নটাই দেখতে পারি।
জাগো নিউজ : কবি হিসেবেও আপনার বেশ সুনাম আছে। ‘ও মেয়ে তোর বয়স কত’ ফেসবুকে তো ভাইরাল হয়েছিল। কবিতার সঙ্গে নিয়মিত আছেন?
শতাব্দী : না। আগে রোজ রোজ লেখতাম। আর এখন বছরে একটা দুটো দিন সময় পাই কলম-খাতা নিয়ে বসার। তবে কবিতা লিখতে আমার খুব ভালো লাগে। পড়তেও ভালো লাগে। লেখার সময় সুযোগ না হলেও, কবিতা পড়ার চেষ্টা করি।
জাগো নিউজ : নেত্রী-অভিনেত্রী-কবি; কোন পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য করেন?
শতাব্দী : সবার আগে আমি একজন মানুষ। কারণ চাইলেই একজন নেত্রী-অভিনেত্রী-কবি হওয়া যায়। কিন্তু মানুষ হতে তাকে মানবিক গুণ অর্জন করতে হয়। আমাদের সবার সেই চেষ্টাটাই করা উচিত।
জাগো নিউজ : আপনার তো একটি অভিনয় শেখার একাডেমি ছিল...
শতাব্দী : হ্যাঁ ছিল। কিন্তু এখন সেটির কার্যক্রম বন্ধ।
জাগো নিউজ : বন্ধ করে দিলেন কী কারণে?
শতাব্দী : একাডেমিতে এসে সবাই মনে করে শতাব্দী রায় সবসময় নিজে ক্লাস নিবে। না নিতে পারলে অনেকে মনে করে প্রতারিত হয়েছে! অনেকে মাত্র অল্প কদিন ক্লাশ করে নিজেকে অমিতাভ বচ্চন মনে করে ফেলে। কিংবা ঠিকমত ক্লাস না করে ভাবে শতাব্দী দি`র একাডেমিতে ভর্তি হয়েছি- তাহলে নিশ্চিত পর্দায় মুখ দেখাতে পারব। তারা সাধনা করতে চায় না। এটা বুঝতে চায় না একটা সাধারণ ডিগ্রির মত এটাও কমপ্লিট করা উচিত। এইসব ভাবনা থেকেই ওটা বন্ধ করে দিয়েছি।
জাগো নিউজ : আপনার সন্তানদের সম্পর্কে জানতে চাই। তাদের নাম। তারাও কী অভিনয়ে আগ্রহী?
শতাব্দী : আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নাম শামু এবং মেয়ের নাম শাম্মি। ছেলে বড় আর মেয়ে ছোট। ওদের মধ্যে অভিনয়ে আসার আগ্রহ একেবারেই নেই। আমি কত করে তাদের বলেছি কিন্তু তারা এসব কানে নেয় না। তারা জীবনটাকে অন্যভাবে তৈরি করতে চায়। আমিও এখন আর জোর খাটাই না।
এলএ/এবিএস