জমজমাট নায়িকাদের লড়াই
ঢাকাই চলচ্চিত্রে মন্দার হাওয়া বিরাজ করলেও নিত্য নতুন নায়িকার আবির্ভাব ঘটছে। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের জাত চেনাতে মরিয়া। ছবি ব্যবসা সফল না হলেও কেউ কেউ তাদের অভিনয় দিয়ে হচ্ছেন প্রশংসিত; আবারো কেউ ফাঁকা আওয়াজ দিয়েই ঝড়ে যাচ্ছেন।
এরমধ্যে বেশ কয়েকজন এসেছেন আলোচনায়। রুপ-মাধুর্য দিয়ে রুপালি পর্দার দর্শকদের মনে শিহরণ জাগাতেও সক্ষম হয়েছেন। আবার ঢাক-ঢোল পিটিয়েও মুখ থুবড়ে পড়েছেন কেউ কেউ। তবে বর্তমানে নায়িকাদের যে লড়াই চলচ্চিত্রের বাজারে জমে উঠেছে সে তালিকায় থাকছেন না অপু বিশ্বাস, ববি ও বর্ষা। এরা প্রত্যেকেই খানিকটা এই সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে স্ট্রাগল করতে থাকা নায়িকাদের চেয়ে অভিজ্ঞ। তাই এদের বাদ দিয়েই জাগো নিউজের এই আয়োজন-
মাহিয়া মাহি
খুব অল্প সময়ে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি হয়েছেন ঢাকাই ছবির নায়িকাদের প্রাণ ভোমরা। রোমান্টিক ছবি? আছেন মাহি, অ্যাকশান ছবি? সেখানেও মাহি। সর্বশেষ মাহি চমক দেখিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিতে অরুর চরিত্রে। বিষয়টি নিয়ে মাহি নিজেই ক`দিন আগে তার ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদের ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে তিনি কোটি টাকা পারিশ্রমিকের সম্মান পেয়েছেন! সেজন্য নির্মাতা-প্রযোজকরা ছবি নির্মাণে আসলে তার কথা আগে মাথায় নেন। কেননা শাবনূর-মৌসুমি-পূর্ণিমাদের পরে মাহি একমাত্র নায়িকা যার নামেই ছবি চলে! এখন পর্যন্ত মাহি অভিনীত ছবিগুলোর বেশির ভাগই প্রযোজকদের মুখে হাসি ফুটাতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে মাহি কাজ করছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে। এছাড়া বেশ কিছু ছবিতে কাজের কথাবার্তাও চলছে।
মৌসুমি হামিদ
লাক্স তারকা মৌসুমি হামিদ ছোটপর্দা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও এরমধ্যে বড়পর্দায় কাজ করেছেন কয়েকটি ছবিতে। তার অভিনীত চারটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ছবিগুলো হলো ব্ল্যাক মানি, ব্ল্যাক মেইল, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি-২ এবং বহুল আলোচিত জালালের গল্প। সবক`টি ছবিতে সফলতা পেয়েছেন তিনি। তবে অল্প ক’দিনেই মৌসুমির ক্যারিয়াকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে ‘জালালের গল্প’ ও ‘ব্ল্যাকমানি’ ছবি দুটি। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও কয়েকটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার লাভ করেছে তার জালালের গল্প ছবিটি। আর ব্ল্যাকমানি বাজিমাত করেছে বক্স অফিসে। তাই তাকেই রাখা যায় দ্বিতীয় আসনে।
আঁচল
চিত্রনায়িকা আঁচলের ঢাকাই ছবিতে অভিষেক হয় ২০১১ সালে ভুল ছবির মাধ্যমে। এরপর বেইলি রোড, ভালোবাসার রংধনু, জটিল প্রেম, প্রেম প্রেম পাগলামি, ফাঁদ, আজব প্রেম, কি প্রেম দেখাইলা, স্বপ্ন যে তুই, কিস্তিমাতসহ আরো কিছু ছবি মুক্তি পায়। মোটের উপর বলার যায় আঁচলের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার বেশ ইতিবাচক। তার অভিনীত কয়েকটি ছবি ছিল ব্যবসা সফল। বর্তমানে আঁচল কাজ করছেন সুলতানা বিবিয়ানা, মেন্টাল ও দাগ নামের তিনটি ছবিতে।
পরীমনি
ছবির সংখ্যার বিচারে নিঃসন্দেহে এগিয়ে ঢাকাই ছবির আলোচিত-সমালোচিত এই নায়িকা। তবে পরিতাপের বিষয় হলো প্রায় হাফ ডজন ছবি মুক্তি পেলেও কোনো ছবিই তার ব্যবসায়িক সাফল্যের মুখ দেখেনি। গতবছরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন পরীমনি। এখন পর্যন্ত রেকর্ড সংখ্যক ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া নায়িকা তিনি। তবে পরীমনি অভিনীত গড়ে সাতটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। গতবছর শাহ্ আলম মণ্ডল পরিচালিত ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ ছবিটি মুক্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় পরীমনির। এরপর একে একে ‘পাগলা দিওয়ানা’, ‘নগর মাস্তান’, ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’, ‘পুড়ে যায় মন’, ‘মহুয়া সুন্দরী’, এবং সর্বশেষ চলতি মাসে ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’ ছবিটি মুক্তি পায়। কিন্তু নিজের অভিনয়ে প্রশংসিত হলেও এখন পর্যন্ত পরীমনি অভিনীত ছবিগুলো সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি। তবে নতুন আশায় বুক বেঁধে বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ‘আপন মানুষ’, ‘মনের জ্বালা’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘কত স্বপ্ন কত আশা’সহ আরো বেশ কিছু ছবিতে। আশা করা হচ্ছে ‘মনপুরা’ খ্যাত নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘স্বপ্নজাল’ ছবিটি পরীমনির ক্যারিয়ারে নতুন মাইলফলক যোগ করবে। ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিও সম্ভাবনাময় এই নায়িকার উত্থানের প্রতীক্ষায়।
নুসরাত ফারিয়া
সাফল্যে যেমনই হোক, আলোচনায় তিনি বেশ এগিয়ে। জাজ মাল্টিমিডিয়ার হাত ধরেই যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবি ‘আশিকী’ দিয়ে রূপালি পর্দায় নুসরাত ফারিয়ার অভিষেক। এরপর একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে ‘হিরো ৪২০’ ছবিতে অভিনয় করলেও নুসরাত ফারিয়ার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার আলো জ্বালাতে পারেনি। পরপর দুই ছবির ফ্লপ নায়িকা হিসেবে নুসরাত ফারিয়া সমালোচনার মুখে পড়েন তারপর নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা ইমরান হাশমির সঙ্গে নায়িকা হয়ে হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন বলে খবর প্রচার করেন। কিন্তু ফারিয়ার এমন মিথ্যা সংবাদ পরে প্রমাণিত হয়। এরপর থেকে তাকে সবাই ঢাকাই চলচ্চিত্রের অচল পয়সা হিসেবে অভিহিত করেন। বর্তমানে নুসরাত ফারিয়া যৌথ পরিচালনার বাদশা ছবিতে কাজ করছেন। সেখানে তার নায়ক জিত। এই ছবিটাই গড়ে দেবে নুসরাতের ভাগ্য।
আইরিন
২০০৮ সালে র্যাম্প মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সাহসী মেয়ে আইরিন। বেশ কিছু নাটকে কাজ করেন তিনি। কিন্তু ইচ্ছে তার বড় পর্দায় কাজ করা। ২০১১ সালে মোহাম্মদ আলী পারভেজের পরিচালনায় ‘প্রিয়তমা, তুমি দাঁড়ি আমি কমা’ নামের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয়। কিন্তু সে ছবি আশার আলো দেখিনি। এরপর বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করেন আইরিন। ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’, ‘ইউটার্ন’ এবং সর্বশেষ আইরিন অভিনীত ‘ছেলেটি আবোল তাবোল মেয়েটি পাগল পাগল’ ছবিটি মুক্তি পায় গেল অক্টোবরে। কিন্তু নিজের অভিনয় দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি আইরিন। বর্তমানে আইরিন ‘মায়াবিনী’, `এক পৃথিবী প্রেম’, ‘টার্গেট’ ইত্যাদি ছবিগুলোতে কাজ করছেন। এই ছবিগুলো আইরিনকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে বটে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, অভিনয়ে অপটু আইরিন তার অভিনয়ে দক্ষতা না বাড়ালে হয়তো ছিটকেই পড়বেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে!
এছাড়াও প্রায় হাফ ডজন নায়িকা একটি-দুটি ছবি নিয়ে আশা-নিরাশার ভেলা ভাসিয়েছেন। তাদের মধ্যে তিশা, অরিন, মিষ্টি জান্নাত, শিরিন শিলা, প্রিয়ন্তি পরী, পুষ্পিতা পপি, তানহা তাসনিয়ারা উল্লেখযোগ্য। অভিষেকের অপেক্ষায় রয়েছেন আরো একঝাঁক নতুন মুখ। তাদের মধ্যে ছবির গল্প, নির্মাণ ও বাজেট অনুযায়ী নওশাবা, অধরা, ভাবনা, মারিয়াদের নাম থাকবে তালিকার শীর্ষে।
নওশাবা অভিনীত ‘আলগা নোঙর’ ছবিটি খুব শিগগির মুক্তি পাবে। এছাড়া ‘প্রতিরুদ্ধ’ এবং ‘ঢাকা অ্যাটাক’ নামে আরো দুটি ছবিতে কাজ করছেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
অধরা কাজ করছেন ঢাকাই ছবির ড্যাশিং ডিরেক্টর শাহীন সুমনের নতুন ছবি ‘ভালোবেসে দিওয়ানা’ ছবিতে। এখানে তিনি দুই নায়কের বিপরীতে কাজ করছেন।
অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনাও বড়পর্দাও অভিষেকের দিনক্ষণ গুনছেন। তার অভিনীত ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ ছবিটি সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ঈদেই মুক্তি পাবে বলে জানা গেছে। এটি নির্মাণ করছেন অনিমেষ আইচ।
অন্যদিকে মারিয়া চৌধুরীর অভিষেক ঘটবে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সোহানুর রহমান সোহানের পরিচালনায় ‘অবলা নারী-ওয়াও বেবী ওয়াও’ ছবি দিয়ে। পাশাপাশি তানিন সুবাহ নামের আরেক নতুন মুখ কাজ করছেন ‘রাজা রানীর গল্প’ ‘তুই আমার’ নামের দুটি ছবিতে।
এলএ/পিআর