সবাই ভুলে যায়, কেবল সাংবাদিকরাই মনে রাখেন : মোনালিসা
পাঁচ বছর আগেও মডেল অভিনেত্রী মোজেজা আশরাফ মোনালিসার ক্যারিয়ারে বৃহস্পতি ছিল তুঙ্গে। নাটক, বিজ্ঞাপন, মডেলিং, মিউজিক ভিডিও- সবখানেই মোনালিসার সাফল্যের ফোয়ারা ঝরতো।
এরপর ২০১২ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফাইয়াজ শরীফের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মোনালিসা। তার কিছুদন পরই ঘটে ছন্দপতন। শোবিজে অনেকটাই মিষ্টি হাসির মোনালিসা অনিয়মিত হয়ে পড়েন। তারপর হুট করেই পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
সেখান থেকে খবর এলো স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন মোনালিসা। তার ভক্তরা কষ্ট পেলেন, হতাশ হলেন। তবে সুখবর হলো, আমেরিকার প্রবাস জীবনের পাঠ চুকিয়ে আপাতত ঢাকাতেই আছেন মোনালিসা। এসেই অভিনয়ে নিয়মিত হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাই, তিনিই এখন ছোট পর্দার সবেচেয়ে আলোচিত তারকা।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন মোনালিসা। জানালেন ক্যারিয়ারটাকে নতুন করে সাজিয়ে নিতে চান তিনি। সেইসঙ্গে বললেন, তার বর্তমান-ভবিষ্যতের অনেক কথাও.....
জাগো নিউজ : বহুদিন পর দেশে ফিরলেন কেমন লাগছে?
মোনালিসা : এক কথায় দারুণ। আসলে দূরে গেলেই আপনি অনুভব করতে পারবেন প্রিয় মানুষদের সত্যিকারের ভালোবাসাটা। দেশে ফিরে সবার ভালোবাসা আর আতিথেয়তায় মুগ্ধ আমি। তবে আমার পরিবারের কাছ থেকে যে ভালোবাসাটা পাচ্ছি সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পাশাপাশি শোবিজে আমার সহকর্মীরা, সাংবাদিক বন্ধু-ভাইদের আন্তরিকতাও মনে নাড়া দিয়েছে। এত ভালোবাসা ছেড়ে এতদিন প্রবাসে থাকাটা বোধহয় ঠিক হয়নি। হা হা হা.....
জাগো নিউজ : তবে আর যাচ্ছেন না তো, নাকি?
মোনালিসা : সেটা এখনো বলতে পারছি না। আপাতত আম্মুর আদর খেতে ভালোই লাগছে। আর অভিনয় করার জন্যও প্রচুর প্রস্তাব পাচ্ছি। অনেকের সাথেই কথা হয়েছে কাজ করব বলে। সেগুলো করি। তারপর দেখা যাবে ভবিষ্যত কী বলে।
জাগো নিউজ : এখন তবে দিন কাটছে কী করে?
মোনালিসা : দিন যে কিভাবে পার হয়ে যাচ্ছে সেটা বুঝতেই পারছিনা। কাছের দূরের পরিচিত মানুষগুলো আমার খোঁজ নিচ্ছেন। অনেকেই বাসায় আসছেন দেখতে। তাদের সঙ্গে কথা বলে, আড্ডা দিয়ে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সাংবাদিক ভাইয়েরা প্রতিনিয়তই খোঁজ নিচ্ছেন। অভিনয় করছি কি না জানতে চাইছেন। সত্যি কথা বলতে এই মানুষগুলোই আমার খুব আপনজন। আমি যখন দেশের বাইরে ছিলাম, শোবিজের অনেক কাছের লোকরাও খোঁজ রাখেনি। কিন্তু সাংবাদিকরা আমার খোঁজ নিয়েছেন। ফেসবুকে জানতে চেয়েছেন কেমন আছি, কী করছি। আমার যখন খারাপ সময় যাচ্ছিলো তখনও তাদের পাশে পেয়েছি। তারাই দেশবাসীকে জানিয়েছেন আমি ভালো আছি নাকি মন্দ আছি। দেশে ফিরে তাই সেইসব মানুষদের সাথে কথা বলছি। অনেকেই ফোন করে স্বাগত জানিয়েছেন, কেউ কেউ বাসায় এসেছেন। খুব ভালো লাগছে।
অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমাদের মিডিয়াতে চোখের আড়াল হলে বড় তারকারাও হারিয়ে যান। সবাই তাদের ভুলে যায়। কিন্তু মনে রাখেন কেবল সাংবাদিকরাই। তারা যখন কাউকে নিয়ে ভাবেন তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
জাগো নিউজ : আপনার প্রবাস জীবনের গল্প বলুন....
মোনালিসা : সেখানে আসলে ব্যস্ততার মধ্যেই সময় কেটে যেত। দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতাম। কারণ আমি একটা জব করতাম। অবসর তেমন পেতাম না বললেই চলে! যেটুকু পেতাম সময় পেলেই পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। এ ছাড়া প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে দেখা হতো। খুব ভালো লাগত তখন। গল্প করতে পারতাম প্রাণ খুলে।
জাগো নিউজ : ক্যারিয়ারের খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে আপনি বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন। এটা কী নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি?
মোনালিসা : কিছুটা তো নেতিবাচক বটেই। আমি যখন পার্মানেন্টলি আমেরিকাতে থাকতে যাই তখন অনেকগুলো ভালো কাজের অফার পেয়েছিলাম। যেমন সর্বশেষ সাগর জাহান ভাইয়ের ‘সিকান্দার বক্স’র একটি কিস্তিতে কাজ করেছিলাম। এরপর এই নাটকটির আরও কয়েক কিস্তি তৈরি হয়েছে। সেগুলো তুমুল জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। হয়তো আমি থাকলে কাজগুলো করতাম। ধারাবাহিকতায় হয়তো এর চেয়েও ভালো কাজের সুযোগ হতো। কিন্তু সবার উপরে তখন আমার সংসারটাকেই প্রাধান্য দিতে চাইছিলাম। তাই.....
জাগো নিউজ : তারকাখ্যাতি, ভক্তদের ভালোবাসা, রঙিন জীবন- এইসব মিস করতেন না?
মোনালিসা : খুউউব। কিছু কাজ আমি করেছিলাম যেগুলো প্রশংসিত ছিলো। এতদিনে হয়তো আরো ভালো কিছু করার সুযোগ হতো। কিন্তু ওই যে বললাম সংসার নিয়ে ভাবছিলাম। আসলে প্রতিটি মানুষের কাছে পরিবারই প্রাধান্য পায়। আপনি যা করবেন সে তো পরিবারের জন্যই- তাই না? আমিও তাই ফ্যামিলির জন্য আমেরিকাতে পাড়ি দিয়েছিলাম। খুব মিস করতাম বাংলাদেশ। এখানে আমার ভক্তদের, এই অঙ্গনের মানুষদের। লাইট, ক্যামেরা, শুটিংয়ের হৈ চৈ। সব কিছুই মিস করতাম খুব। যাক। আবার তো ফিরে এসেছি। দেখি নিজেকে নতুন করে কতোদূর নিয়ে যেতে পারি।
জাগো নিউজ : শুনলাম নতুন নাটকে কাজ করতে যাচ্ছেন?
মোনালিসা : ঠিকই শুনেছেন। সাগর জাহানের নতুন একটি নাটকে মোশাররফ করিম ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করবো। নাটকের নাম এখনো ফাইনাল হয়নি। এই নাটকের জন্য শিডিউল দিয়েছি ১৬ মে। তাছাড়া আরো কিছু কাজ নিয়ে কথা চলছে।
জাগো নিউজ : মোনালিসা এবার তবে নিয়মিত হচ্ছে?
মোনালিসা : হচ্ছেই তো। যদি দেশে থাকি কাজ তো করতেই হবে! ইচ্ছে আছে ভালো কিছু কাজ করার।
জাগো নিউজ : এখনতো ইউটিউবে চাইলেই নাটক-চলচ্চিত্র দেখা যায়। প্রবাসে থাকাকালীন এ সব দেখতেন?
মোনালিসা : আগেই বলেছি খুব বেশি অবসর মিলতো না আমার। খুব ইচ্ছে করলে রাতে মাঝেমধ্যে নাটক দেখতাম। তবে নিয়মিতভাবে না। বিশেষ দিবসের নাটকগুলো দেখতাম।
জাগো নিউজ : চলচ্চিত্রে কাজ করতে ইচ্ছে করে না?
মোনালিসা : আমাকে কে নেবেন চলচ্চিত্রে? ডোন্ট মাইন্ড! ইট ইজ জাস্ট ফান। আমি যখন আগে নিয়মিত কাজ করতাম তখন বেশ কিছু বাণিজ্যিক ছবিতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু সেসময় সেগুলো আমার পছন্দ হয়নি। হয়তো এতোদিন দেশ থাকলে কিছু একটা হলেও হতে পারতো! তাছাড়া চলচ্চিত্রে কাজ করতে গেলে সময়ের প্রয়োজন। এরজন্য আলাদা প্রিপারেশন লাগে। এই সময়টা হয়তো আমার কাছে নেই। আপাতত চলচ্চিত্রে কাজের মত ইনটেনশন এখন আমার মধ্যে কাজ করছে না।
জাগো নিউজ : এবার একটু ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলবো। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণ ছিল কী?
মোনালিসা : ২০১২ সালের জুনে আমার বিয়ে হয়। একেবারে হুট করেই পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। তাই একজন আরেকজনকে খুব ভালোভাবে জানার বা বোঝার সময়টা পাইনি। আর তাই বিয়ের অল্প কিছুদিন পরই আমাদের সংসারে একধরনের অবিশ্বাস তৈরি হয়। এরপর সম্পর্কে ফাটল ধরে। একটা পর্যায়ে তা বড় আকার ধারণ করে। শুরুতে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও ধীরে ধীরে তা সহ্য সীমার বাইরে চলে যায়। আর তখনই বিচ্ছেদের পথটাকে বেছে নিতে হয়। আমি মনে করি, অশান্তি আর অবিশ্বাস নিয়ে সংসার করার চেয়ে না করাটাই ভালো।
জাগো নিউজ : বিচ্ছেদের আইনগত কিছু ঝামেলার কথা শুনেছিলাম। সেগুলো কী মিটেছে?
মোনালিসা : হ্যাঁ। আর কোনো প্রবলেম নেই।
জাগো নিউজ : শিগগির নতুন জীবন শুরুর কোনো পরিকল্পনা আছে?
মোনালিসা : দেশে আসাটাই তো আমার কাছে নতুন শুরু। আবার অভিনয় করব, ব্যস্ত হয়ে উঠব। ইচ্ছে হলে আবার আমেরিকায় গিয়ে কিছুদিন থাকব। আসলে আমি আমার জীবনকে গুছিয়ে নিতে শিখে গেছি। এখন আমি বেশ স্বাচ্ছন্দের ভেতরে আছি।
জাগো নিউজ : নতুন শুরু বলতে আসলে বলছিলাম আবার বিয়ে করে নতুন সংসারের কথা...
মোনালিনসা : না না। একদম না। এসব আমার মাথায় একদম নেই। আপাতত মন দিয়ে কাজটাই করে যেতে চাই। এই সিদ্ধান্তগুলো পরিবারের উপরই ছেড়ে দিলাম। আমি কেবল আগের সেই মোনালিসা হয়ে সবার মাঝে ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
এলএ/আরআইপি