সবাই তারকা খ্যাতির পেছনে ছুটছে : মোশাররফ করিম
তার অভিনয় দর্শকদের হাসায়, কাঁদায়। কখনো বা কারো কাছে তার অভিনয় প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি আদর্শ। তার নামের বিশেষণ তিনি নিজেই! বলছি জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমের কথা।
ছোটপর্দায় কজ করে বড়পর্দাতেও নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। সারাবছরই তার ব্যস্ততা পিছু লেগে থাকে। এরই মধ্যে বৈশাখ ও ঈদের কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে রেখেছেন। প্রতিদিনই সকাল থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করছেন। সম্প্রতি উত্তরার একটি শুটিং হাউজে মোশাররফ করিম কথা বললেন জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগে...
জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
মোশাররফ : আর ভালো থাকা। দম ফেলার সময় পাচ্ছি না। কাজ আর কাজ। আমার অনেকগুলো সিরিয়াল প্রচার হচ্ছে। সেগুলোর শুটিং তো আছেই। তাছাড়া এরমধ্যেই ঈদের নাটকের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
জাগো নিউজ : এ আর নতুন কী। আপনি তো সারাবছরই ব্যস্ত থাকেন...
মোশাররফ : নিজের মধ্যে ক্লান্তি জিনিসটা আসলে খুঁজে পাই না। আমার ব্যস্ততা লাগামহীন। তাছাড়া সবাই কাছের মানুষ। আমি যদি বিশ্রামের কথা ভাবিও, তাদের অনুরোধের জন্য পারি না। বাধ্য হয়েই ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়।
জাগো নিউজ : এখন পর্যন্ত প্রচার হওয়া আপনার অভিনীত নাটকের সংখ্যাটা বলতে পারবেন?
মোশাররফ : (খানিকাটা ভেবে) সংখ্যাটা বলা মুশকিল। কাজ আসে, কাজ করে যাচ্ছি। সব মিলিয়ে তো দুরের কথা বর্তমানে কি কি নাটক প্রচার হচ্ছে সেটাও হয়তো সঠিক করে বলতে পারবো না। তবে এরমধ্যে দুটি নাটক থেকে দারুণ সাড়া পাচ্ছি। সাগর জাহানের ‘এই কূলে আমি ওই কূলে তুমি’ আর সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘দ্য ভিলেজ ইঞ্জিনিয়ার’। দুটি নাটকই আরটিভিতে প্রচার হচ্ছে। এ দুটিতে চমৎকার কাজ হয়েছে। এছাড়া আরো অনেকগুলো সিরিয়াল এবং খন্ড নাটকে কাজ করেছি এবং সেগুলো প্রচার হচ্ছে নাম মনে নেই।
জাগো নিউজ : আপনার চরিত্রগুলো এমন শৈল্পিক হবার রহস্য কী?
মোশাররফ : চরিত্রে ডুব মেরে একেবারে অন্য কেউ হয়ে যাই বললে একটা বড় ধরনের চাপাবাজি হবে! চরিত্রের সঙ্গে খুব বেশি বিলীন হয়ে গেলে তো কাজটি ভালো হবে না। একজন অভিনেতাকে সচেতন থেকেই চরিত্রে ডুব দিতে হয়। হুবহু বাস্তবটা তুলে ধরলে তো সেটা আর্ট হবে না। তাহলে রাস্তায় মানুষ চা খাচ্ছে, হাঁটছে এসব ভিডিও করেই নাটক বানিয়ে ফেলা যেত!
জাগো নিউজ : ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয়ের কাঠামোগত, পরিবেশগত অবস্থানটা নিয়ে কিছু বলুন...
মোশাররফ : পুরো কাজটা গোছানো হলে ভালো লাগে। একজন অভিনেতা-অভিনেত্রী জানবেন তার কাজটুকু কী, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেবেন। পরিচালক যখন বলবেন ‘স্ট্যান্ডবাই’, তখন পুরো সেট স্ট্যান্ডবাই হবে। এমনকি যে ছেলেটি চা দিচ্ছে, সে-ও। নানা ধরনের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় আমরা দিই। কিন্তু এটা তো বুঝতে হবে- একটু গুছিয়ে কাজ করার জন্য টাকা খরচ হয় না। দরকার মেধা, সম্মিলিত প্রয়াস। সব মিলিয়ে আমার অভিনয়ের পরিবেশটা উন্নত হওয়া দরকার। কেননা, পরিবেশ হট্টগোল হলে নির্মাতার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।
জাগো নিউজ : এতো কাজের ভিতরে নিজের পছন্দের নাটক...
মোশাররফ : আমার কাছে যেসব নাটকের প্রস্তাব আসে, সবই অভিনয়সমৃদ্ধ। নির্মাতারা আমার বিষয়টা চিন্তা করেই নাটকের গল্প তৈরি করেন। প্রতিটি কাজই আমার মোটামুটি ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সিকান্দার বক্স সিরিজ। তাছাড়া বর্তমানে আরটিভিটে যাচ্ছে ‘দ্য ভিলেজ ইঞ্জিনিয়ার’, ‘এই কূলে আমি ওই কূলে তুমি’ ধারাবাহিকগুলো খুব ভালো লাগছে। নিজের অভিনয় তো বটেই, অন্যরা যারা কাজ করেছেন তারাও খুব ভালো অভিনয় করেছেন। আসলে তখনই একটি ভালো লাগার নাটক তৈরি হয় যখন এর সব কিছুই হয় পারফেক্ট।
জাগো নিউজ : অনেকের কাছে অভিনেতা হিসেবে আপনি আইডল। তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
মোশাররফ : এটা আমার জন্য একদিক থেকে আনন্দের এবং আরেক দিক থেকে বিড়ম্বনারও। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক খ্যাতিমান এবং গুণী অভিনয় শিল্পীরা আছেন। তাদের তুলনায় আমি কিছুই নই। আমি নিজে তাদেরকে অভিনয়ের আদর্শ মেনে এসেছি। আজকের তরুণদেরও উচিত তাদের অনুরসরণ করা। আমি জানি তরুণরাই আমাকে বেশি ফলো করে। তাদের বলবো অভিনয়টাকে ভালোবাসতে হবে। একজন প্রকৃত অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রী হতে হলে পরিশ্রম করতে হবে, সিনিয়রদের সম্মান করতে হবে, সময় জ্ঞান মেনে চলতে হবে। আরো সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে টাকার পিছনে না ছুটে কাজকে ভালোবাসতে হবে। তবে এসব বিষয় আজকাল খুব বেশি দেখা যায় না। সবাই তারকা খ্যাতির পিছনে ছুটছে। এখানে জ্ঞানের কথা বলতে গেলেই এটাকে ব্যড ম্যানার হিসেবে ভাবা হয়। অনেক নতুন দেখেছি যারা সিনিয়রদের এড়িয়ে চলতে চায়। তাদের ভাবটা এরকম, কারো কাছ থেকে শিখার কিছু নেই। সব তারা মায়ের পেট থেকে শিখে এসেছে।
জাগো নিউজ : বিজ্ঞাপনের মডেল মোশাররফ করিমকে নিয়ে কিছু বলুন...
মোশাররফ : এই তো। পছন্দসই বিজ্ঞাপনের অফার আসলে করে থাকি। কিছুদিন আগে হাউজহোল্ড প্লাস্টিক ও ফার্নিচার সামগ্রী প্রস্তুতকারী আরএফএল’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডিউরেবল প্লাস্টিক লিমিটেডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছি। আগামী দুই বছর ডিউরেবল প্লাস্টিক লিমিটেডের বিভিন্ন ফার্নিচার পণ্যের প্রমোশনাল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নেব। তাছাড়া আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করেছেন। তাদের সঙ্গে এখনো পাকা কথা দেইনি। সময় করে ভেবে দেখতে হবে। তবে বিজ্ঞাপনে কাজ করাটা ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। বেশ ভালো লাগে।
জাগো নিউজ : ভিন্নধর্মী সব বেশ ক’টি চলচ্চিত্রে কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন। সর্বশেষ ‘জালালের গল্প’ দেশের পাশাপাশি বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছে। কিছুদিন আগে খবর হয়েছিল কয়লা নামের আরেকটি ছবিতে কাজ করবেন। সেটির কি খবর?
মোশাররফ : ছবিটিতে কাজ করার প্রাথমিক কথা হয়েছে। এটি পরিচালনা করবেন নাট্য নির্মাতা সুমন আনোয়ার। এছবির চিত্রনাট্যও তিনি তৈরি করেছেন। দেখা যাক কী হয়। আমার কাছে অভিনয়টাই আগে। সে নাটকে হোক আর চলচ্চিত্রে।
জাগো নিউজ : কিছুদিন আগে আপনি ফেসবুকে ফ্যানফেজ খুলেছেন। ফ্যানপেজ খুললেনই যখন তবে এতো দেরি করলেন কেন?
মোশাররফ : আমি অনেকটা বিরক্ত হয়ে ফ্যানপেজ খুলেছি। কিছু মানুষ এটা করতে আমাকে বাধ্য করেছে। কারণ ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে আমার নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। একবার না কয়েকবার এমনটা আমার কানে এসেছে। শুনে খুব খারাপ লেগেছিল। তাই উপায় না পেয়ে ফ্যানপেজ খুলতে হয়েছে এবং এটা আমি নিজেই মেইনটেইন করি।
জাগো নিউজ : জীবনের যে সময়টা ফিরে পেতে চাইবেন...
মোশাররফ : চলে যাওয়া সব সময়ই তো ফিরে পেতে চাই! কিছুক্ষণ আগে ফারুক আহমেদের সঙ্গে বসে কথা হচ্ছিল। আড্ডা আমরা খুব মিস করি। আগে সময়টা অফুরন্ত ছিল, এখন এত ব্যস্ততা! বর্তমানটা যে ভালো লাগে না, তা নয়। কাজের কাঠামোগত, পরিবেশগত পরিবর্তন হলে আরও বেশি আনন্দ নিয়ে কাজ করতে পারতাম।
জাগো নিউজ : আপনার পছন্দের লেখক....
মোশাররফ : আমার প্রিয় লেখকের তালিকাটা দীর্ঘ। হাতের কাছে যখন যে লেখকের বই পাই, তাই নিয়ে পড়তে বসি। তবে ডিটেকভিট স্টোরি পড়তে ভালো লাগে।
জাগো নিউজ : আপনার প্রিয় খাবার...
মোশাররফ : সরিষার তেল দিয়ে গরম খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ আমার দারুণ পছন্দ। তাছাড়া আমার মায়ের হাতে বাইন মাছ রান্না খুব প্রিয়। আর আমার স্ত্রী জুঁই গরুর মাংস খুব ভালো রান্না করে। সেটা খেতে ভালো লাগে।
এনই/এলএ/আরআইপি