ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

‘পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই একটি সংগঠন’

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:৫৭ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

তিনি বড় ভালো লোক। তার নামের সঙ্গে এত বেশি বিশেষণ যথার্থ হয় যে, সব বিশেষণই তার গুণের কাছে ম্লান। তাই খুব সাধারণ একটি কথা দিয়েই লেখাটা শুরু করলাম। তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন। বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি অভিনেতা, তিনি ছড়াকার, তিনি লেখক, তিনি মঞ্চসফল নির্দেশক, তিনি নাট্য পরিচালক, তিনি সংগঠক। 
আসলে এক জীবনে এতকিছুর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা যায় এবং সাফল্যেও চূড়াও ওঠা যায়। তাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। তার সব সাফল্যের অন্তরালে হিমালয়সম এক ব্যক্তিত্ব বাস করে। যার জোরে তিনি সাধারণ থেকে হয়ে উঠেছেন অসাধারণ।

লেখার শুরুতে তাই বড় ভালো লোক কথাটা লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। তিনি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ (২৩ সেপ্টেম্বর) তার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন দাদা। তার সফল অভিনয় দেখতে দেখতেই বড় হয়েছি নাটকের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম ধারাবাহিক নাটকের তিনি নায়ক। 

তিনি বাঙালিকে টিভি সেটের সামনে বসানোর অভ্যাস করেছেন তার অভিনয় শৈলীর জাদুতে। মঞ্চেও তিনি অভিনয়ের ব্যাকরণ তৈরি করেছেন। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়কে মূল্যায়ন করেছেন তার প্রকাশিত নাটকে ভিন্নভাবে। 

কীত্তনখোলা নাটকে ইদু কনকদার চরিত্রের একটি সংলাপ ছিল, ‘আঠার ফুট চওড়া রাস্তা বানালাম’। সেলিম আল দীন তার প্রকাশিত কীত্তনখোলা নাটকের বইয়ের ফুটনোট দিয়ে লিখেছেন, ‘অভিনেতা পীযূষ আঞ্চলিক ভঙ্গিতে বলেন টুয়ান্টি ফাইভ ফুট’। তার অভিনয় সেলিম আল দীনকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে, নাট্যাচার্যের লেখা সংলাপ পরিবর্তন করে ফেলার প্রসঙ্গটিও স্থান পেয়েছে সেলিম আল দীন রচিত ‘তিনটি মঞ্চ নাটক’ বইয়ে। শিরোনামেই উল্লেখ করেছি, তিনি আসলে সংগঠক নন, তিনি নিজেই একটি সংগঠন। সম্ভবত সালটা ২০১৬ হবে। পীযূষ দা একদিন আমাকে বললেন তৈরি হও। মাগুরায় একটি উপ-নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে কাজ করতে যেতে হবে। 
আমিও উৎসাহ নিয়েই প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। ধারণা করতে থাকলাম নিশ্চয়ই দলেবলে বেশ কিছু লোক আমরা ঢাকা থেকে যাব।

যাত্রার সময় যখন আসল তখন জানলাম। যাচ্ছেন পীযূষ দা একাই আমি শুধু তার সঙ্গে যাচ্ছি। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কেমন হবে কাজটা? সবাই দেখি নির্বাচন করতে যায় গাড়ি বহর নিয়ে। আমরা দুই জন গিয়ে নির্বাচনে কি প্রভাব ফেলতে পারব। মাগুরায় পৌঁছানোর পর বুঝতে পারলাম। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে যান সেখানে দল-বল-সংগঠন কিছুই লাগে না। প্রতিদিন গ্রামের পর গ্রাম আমরা ভ্রমণ করছি। নির্বাচনী সভা করছি। 

কোথা থেকে যেন লোকজন এসে সভাগুলোকে সফল করে তুলছেন। যারা আসছেন তাদের অধিকাংশেরই এক কথা, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় নামটা শুনেই তারা চলে এসেছেন। অবাক হয়ে লক্ষ করলাম। জ্ঞান অর্জন করলাম একজন ব্যক্তি একটি নামও একটি সংগঠন হয়ে উঠতে পারে। 

সে বছর থেকেই শুরু ২০১৭ সালে এসে সত্যি সত্যি একটি সংগঠন এর জন্ম দিতে দেখলাম পীযূষ দা’কে। আমাকে একদিন বললেন শাহাবগের একটি রেস্তোরাঁয় কিছু লোককে ডেকেছি কথা বলব তাদের সঙ্গে। আমি বাধ্যগত ছাত্রের মত গিয়ে হাজির হলাম। 

দেখলাম একে একে পত্রিকার সম্পাদক, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক ভিসি, সাবেক আমলা, কবি-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিজন, সমাজকর্মীরা আসতে থাকলেন। আমার অবাক হওয়ার তখনো কিছু বাকি ছিল। যখন জানলাম যারা এসেছেন তারাও আসলে জানেন না কী কথা বলার জন্য তাদের আমন্ত্রণ করেছেন পীযূষ দা। 

তারা নিজেরাই আলোচনা করছিলেন কী কারণে আজ পীযূষ ডেকেছেন আমাদের? আজ কী পীযূষের জন্মদিন? অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম এই বিশাল ব্যক্তিত্বের মানুষেরাও চলে এসেছেন বিষয় না জেনেই। এসেছেন শুধু একটি নাম শুনেই। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি ছবি তুলছি। সব আয়োজন দেখছি আর আমন্ত্রিতদের থেকে দুরে দুরে থাকছি। 

কারণ, তারা যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কী কারণে দাদা তাদের ডেকেছেন? আমি তো কোনো উত্তরই দিতে পারব না, কারণ আমি নিজেই বিষয়টি নিয়ে কিছু জানি না। 

যথা নিয়মে আলোচনা শুরু হলো কিছুটা আঁচ করতে পারলাম। আসলে দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে ভাবার বা কাজ করবার অভিপ্রায়ে এই আলোচনা। 

এ ধরনের বেশ কটি সভা হলো, আমন্ত্রিতরা সবাই দাদার সঙ্গে একমত হলেন। দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম স্তম্ভ ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন একটি সাংগঠনিক কাঠামো। অবশেষে ২০১৮ সালের ৭ জুলাই আত্নপ্রকাশ করল দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার সংগঠন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’। 

আমি পীযূষদার কাছে আজন্ম কৃতজ্ঞ থাকব এই কারণে যে কিভাবে একজন ব্যক্তির উদ্যোগে একটি এতবড় সংগঠন গড়ে উঠতে পারে, তা দেখার এবং এই কার্যক্রমের সঙ্গে আমাকে জড়িত থাকার সুযোগটি তিনি করে দিয়েছেন বলে। আমি প্রায়শই এভাবে বলি, আমি একটি সংগঠনের জন্ম হতে দেখেছি। 

দেখতে দেখতে সম্প্রীতি বাংলাদেশ এখন পাঁচ বছর পার করে ছয়ে পা দিয়েছে। সংগঠন বিস্তৃতি লাভ করেছে। এখন জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে গেছে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এর কার্যক্রম। আমি শুধু ভাবি, কিভাবে একজন ব্যক্তি হয়ে ওঠেন একটি সংগঠন। 

সম্প্রীতির প্রয়োজনেই দেশের অনেক জায়গায় গিয়েছি পীযূষদার সঙ্গে। খেয়াল করেছি গ্রাম থিয়েটার করা নিজের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের কারণে শুধু নয়। ব্যক্তি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক অসাধারণ গ্রহণযোগ্যতার কারণেই তার পক্ষে সম্ভব হয় এত কিছু করা। 

আমি লেখক নই। লেখার অভ্যাসও খুবই কম। তবে এই ব্যক্তিত্বকে যতদিন দেখছি। শুধু অবাকই হচ্ছি না। নতুন কিছু আবিষ্কার করছি। মানুষ তার চিন্তার চেয়েও বড় হতে পারে এটা তাকে দেখে শিখছি। তাই পীযূষদার জন্মদিনে সামান্য অভিজ্ঞতা লিখে রাখলাম। 

শুভ জন্মদিন পীযূষ দা    

লেখক: সাইফ আহমেদ, নির্মাতা

এমএমএফ/এসজে