ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

দিতিকে দেখতে এসে লজ্জা দিয়ে গেলেন তারা!

প্রকাশিত: ১০:০৪ এএম, ২১ মার্চ ২০১৬

বয়স ১৬। নাম কামরুল। এই কিশোরের নিবাস কারওয়ান বাজার সংলগ্ন রেললাইনের বস্তিতে। আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে সে দাঁড়িয়ে আছে বিএফডিসির গেটের সামনে। কাল রাতেই জানতে পেরেছে চিত্রনায়িকা দিতির মৃত্যুর খবর।

কামরুল জেনেছে সোমবার সকালে দিতিকে নিয়ে আসা হবে বিএফডিসিতে। তাই নায়িকা দেখতে এসেছে সে। দিতির ছবি খুব ভালো লাগে কি না এমন প্রশ্ন ছুঁড়তেই কিছুটা বিব্রত দেখাল তাকে। না সূচক মাথা নাড়ল। খানিক অবাক হয়ে জানতে চাইলাম- তবে এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? জবাবে কামরুলের সরল ভাষ্য, ‌‘আব্বায় কইছে দিতি ম্যালা বড় নায়িকা। খুব সুন্দরী। আব্বায় যহন বিয়ে করে নাই তহন দিতির ছবি বাইর হইত। আব্বা তার বন্ধুরারে লইয়া হলে যাইয়া দিতির ছবি দেখত। আমিও দেখছি দিতিরে। তয় নাটকে। ভালোই লাগে। অতো বড় সিনেমার নায়িকা ভালো লাগব না! হুনলাম মারা গেছেন। তাই দেখতে আইছি। লাশ কি ভিতরে আছে ভাই?’

                                  দিতির জানাজায় উপস্থিত লাখো ভক্তদের সব ছবি দেখুন...

হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে সামনে এগুলাম। দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম- কম করে হলেও শ’ দুয়েক মানুষ হবে এফডিসির মূল ফটকের দুই পাশে। সবাই সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো। তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৫ থেকে ২৫। অনুমান করা যায়, এই প্রজন্ম দিতির সরাসরি দর্শক নয়। দিতি তো নায়িকা হয়ে চলচ্চিত্রে নেই সেও প্রায় বছর পনেরো হতে চললো। দশ বছর আগে কৌতুহলী এই দর্শকরা চলচ্চিত্রের মানেটাও শিখেনি হয়তো বা।

তবে তারা আজ এখানে কেন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে? দিতি তো সময়ের হার্টথ্রুব নন। দিতি তো ক্রেজ নন। তবে কীসের নেশায় একজন বয়স্ক অভিনেত্রীর মরদেহ দেখতে এই ভিড়? একটা উত্তরই মনের মধ্যে বারবার ফিরে আসছিলো। সেটা হলো এরা সবাই কামরুলের মতোই বাবা-মা কিংবা বড় কারো কাছে দিতির গল্প শুনে এসেছেন ‘ম্যালা বড় সিনেমার নায়িকা’কে শেষ দেখা দেখবেন বলে?

আর কিছু মানুষ চোখে পড়ল যারা দিতির চিত্রনায়িকা থাকার দিনগুলোতে হয়তো দিতিকে ভাবতেন প্রিয়তমার মতো করে। অনেকেই হয়তো স্বপ্নে বেঁধেছেন ভালোবাসার ঘর। আজ প্রিয় নায়িকার অকাল প্রয়াণে মনে চরম আঘাত নিয়ে হাজির হয়েছেন তাকে শেষ বিদায় জানাতে।

যে যেভাবে, যে দৃষ্টিকোণ থেকেই আসুন, এটা সত্যি যে এই মানুষগুলো ভীষণ লজ্জা দিয়ে গেল আমাদের। দিতিকে এক নজর দেখার সুযোগ মিলবে কি না সেটি নিশ্চিত না হলেও শহরের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তারা। অথচ, আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষগুলোকে দেখা গেল না এফডিসির আঙ্গিনায় দিতিকে শেষ বিদায় জানাবেন বলে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্যস্ত রুটিনের ফাঁক গলেও দিতির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন স্পীকার, তথ্যমন্ত্রী। দিতির জানাজায় অংশ নিতে সোমবার এফডিসিতে নিজে উপস্থিত হয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। কিন্তু দেখা মিলল না চলচ্চিত্রের মানুষদের।

বিশেষ করে এই প্রজন্মের কয়েক ডজন নায়ক-নায়িকা ঢাকায় বসে থেকেও আসলেন না সিনিয়র-গুণী অভিনেত্রী দিতিকে শেষ বিদায় জানাতে। তাদের কেউ কেউ দায়িত্বের দায় সেড়েছেন ফেসবুকে।

আসেননি অনেক নির্মাতা, প্রযোজকেরাও। শোক বার্তা আসেনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস), কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি)’র পক্ষ থেকে। কোনো শোক বার্তা বা ব্যস্ততা দেখা যায়নি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকেও।

Diti Apa
শুধু তাই নয় জীবনের শেষদিকে ছোট পর্দায় নিয়মিত হয়েছিলেন দিতি। কাজ করেছেন অনেক নির্মাতাদের সঙ্গে অসংখ্য খন্ড ও ধারাবাহিক নাটকে। সেইসূত্রে মিশেছিলেন বহু তারকাদের সঙ্গেও। দুঃখের বিষয় হলো সুবর্ণা মুস্তাফা, চয়নিকা চৌধুরী, বাঁধন ছাড়া আর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি মৃত দিতির পাশে।

সব মিলিয়ে দিতিকে এফিডিসিতে নিয়ে এসে যেন কিছুটা বিব্রতই করা হলো বলে মনে হলো। কেননা, রোববার রাতে (যেদিন দিতির মৃত্যু হয়) দিতির মরদেহ এফডিসিতে আনার জন্য দাবি করেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার। কিন্তু তাতে আপত্তি তুলে দিতির পরিবার। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দিতি যখন অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে পড়ে ছিলেন চলচ্চিত্রের লোকজন দিতিকে দেখতে যাননি। খোঁজ রাখেননি। সাংবাদিক ছাড়া আর কেউ দিতির পাশে ছিলো না। তারা দিতির ভালো মন্দ খবর নিয়েছেন। সেগুলো সবাইকে জানিয়েছেন। সুতারাং মরদেহ এফডিসিতে নিয়ে যাবার দরকার নেই।

কিন্তু মুশফিকুর রহমান গুলজার, ববিতা, রিয়াজ, মিশা সওদাগর, ওমর সানীদের অনুরোধে দিতির মরহেদ এফডিসিতে আনার জন্য রাজি হয় দিতির পরিবার। রাতেই এই খবরটি প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। তবু এফডিসিতে হাজির হননি চলচ্চিত্রের মানুষেরা। এই বিষয়টি চলচ্চিত্রের জন্য হতাশার বলে অভিহিত করেছেন অভিনেতা আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘দিতির মতো সিনিয়র, গুণী একজন অভিনেত্রী আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। কতোজন কতো দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী সব ব্যস্ততা ফেলে ছুটে এসেছেন দিতির জানাজায় অংশ নিতে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম চলচ্চিত্রের অনেক তারকা, বিশেষ করে এই প্রজন্মের তারকারা কেউই দিতিকে বিদায় জানাতে আসেননি। এটা আমাদের জন্য লজ্জার এবং হতাশার। আমরা সেলিব্রেটির জন্ম দিচ্ছি যেখানে সেখানে, কিন্তু মানুষ জন্মাতে পারছি কই?’

একই অভিযোগ শোনা গেল আহমেদ শরীফের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, ‘এই এফডিসি এবং চলচ্চিত্রর উন্নয়নে দিতির অবদান অস্বীকার করা যায় না। তার সুনামে ভর করে অনেক নির্মাতাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, অনেক প্রযোজক প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এ প্রজন্মের অনেক তারকাকেও দিতি নানাভাবে সাহায্য করেছেন। কিন্তু কেউ ই আজ এফডিসিতে এলেন না। এটা অবশ্যই বেদনার।’

চম্পা এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য লজ্জার। শুধু দিতির জন্যই বলছি না, গুণী মানুষদের সম্মান করাটা এখন আর চলচ্চিত্রে দেখা যায় না। আজকে এফডিসিতে জনসমুদ্র হবার কথা ছিলো। কিন্তু তা হয়নি। এটা পরিস্কার করে দিয়েছে আমাদের মানবিকতা কমছে, সামাজিকতা কমছে। বাড়ছে দায়িত্ববোধের দৈন্যতা।’

প্রসঙ্গত, রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন চিত্রনায়িকা দিতি। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান সুবর্ণা মুস্তাফা, রিয়াজ, ববিতা, চয়নিকা চৌধুরী, ওমর সানী, মৌসুমী, সুব্রত, মিশা সওদাগরসহ আরো অনেকেই।

আজ এফডিসিতে দিতিকে শেষ বিদায় জানাতে হাজির হয়েছিলেন এফসিডির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমানে বিটিভির মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদ, অভিনেতা আলমগীর, ওমর সানি, অভিনেত্রী চম্পা, খালেদা আক্তার কল্পনা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার, নির্মাতা এস এ হক অলিক, চিত্রনায়ক রুবেল, লাক্স তারকা বাঁধন ও নিশি, অভিনেতা মিজু আহমেদ, আহমেদ শরীফ, সংগীতশিল্পী মনির খান, অভিনেতা শিবা আলী খান প্রমুখ।

এলএ

আরও পড়ুন