শ্যামনগরে ২ দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসব
মাটির কাছাকাছি যে মানুষের বাস, জলই নির্ধারণ করে যাদের ভাগ্য, যাদের জীবন। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ই সিনেমার পর্দায় উঠে এসেছে সেসব কথা।
সেসব সিনেমা সারাবিশ্বে প্রশংসিতও হয়েছে। কিন্তু প্রান্তিক মানুষদের ভীষণ আগ্রহ থাকা সত্বেও তাদের নিজ জীবন নিয়ে নির্মিত সিনেমাগুলোর অধিকাংশই বিভিন্ন বাস্তবতা এবং অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে প্রান্তজনদের কাছে আর সেভাবে পৌঁছাতে পারে না।
আরও পড়ুন: কামার আহমাদ সাইমনের নতুন সিনেমার পোস্টার প্রকাশ
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম চলচ্চিত্র উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ফিল্ম ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর গ্লোবাল মিডিয়া মেকারস এবং বাংলাদেশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মাইপিক্সেলস্টোরি-র সহযোগিতায় এবার সেরকম একটি সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে।
ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের সুন্দরবন সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় ২২ এবং ২৩ জুন ‘জলের ছবি, মাটির ছবি’ শিরোনামে এক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
উৎসবের একটি প্রদর্শনীস্থল হচ্ছে, বাংলাদেশের সীমান্ত প্রান্ত এবং সুন্দরবন ঘেঁষা সবচেয়ে বড় উপজেলা শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ। অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রদর্শনীস্থল হচ্ছে, ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ নামের সীমান্তবর্তী এলাকার কালীতলা হাইস্কুল মাঠ।
আরও পড়ুন: নায়ক জিৎকে এক নজর দেখতে মানুষের ঢল
‘জলের ছবি, মাটির ছবি’ শিরোনামে চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হবে স্বনামধন্য বাংলাদেশি পরিচালক কামার আহমাদ সাইমন পরিচালিত, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমা ‘শুনতে কি পাও’ ।
এর আগে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউরোপের অন্যতম উৎসব সিনেমা দ্যু রিলের ৩৫তম আসরে মূল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘গ্রাঁ প্রি’ এবং মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘স্বর্ণশঙ্খ’ সহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছে ‘শুনতে কি পাও’।
এছাড়া একই দিনে প্রদর্শিত হবে রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত পরিচালিত ‘নোনাজলের কাব্য’ যা এবছর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র-সহ সাতটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে। সিনেমাটি স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সন্মেলন কপ-২৬-এ প্রদর্শনীর জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিল।
উৎসবে বাংলাদেশি সিনেমা দুটির পাশাপাশি ভারতীয় দুটি সমাদৃত সিনেমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সিনেমা দুইটি হচ্ছে যথাক্রমে, ‘ফ্রম দ্য শ্যডোওস’ (মিরিয়াম চান্দি মিনাচেরি) এবং ‘মধ্যিখানে চর’ (সৌরভ ষড়ঙ্গী)।
প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত দুটি করে সিনেমা প্রদর্শিত হবে, যা থাকবে সবার জন্য উম্মুক্ত। আগত প্রথম ৩০০ জন দর্শককে দেওয়া হবে একটি করে ফ্রি কুপন, আর প্রতিদিন শেষে দুইজন ভাগ্যবান দর্শক পাবেন একটি করে স্মার্টফোন।
উৎসবটির অন্যতম প্রধান সংগঠক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, বিশ্বায়নের এই যুগে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন এবং লেনদেনের মাধ্যম্যেই কেবলমাত্র সত্যিকার অর্থে উন্নত এবং সমৃদ্ধ একটি সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। দুই দেশের মাঝে সাংস্কৃতিক ভাব আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়ে উঠবে।’
নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন বলেছেন, ‘প্রান্তজনের ছবি কাঁদা-মাটি-মানুষের আরও কাছাকাছি যাবে, এর চাইতে আনন্দের আর কি হতে পারে। এরকম আয়োজন আরও বেশি বেশি হওয়া দরকার, কিন্তু দুঃখের কথা এই আয়োজনও নির্মাতাদেরই করতে হচ্ছে।’
রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত পরিচালিত ‘নোনাজলের কাব্য’ ও কামার আহমাদ সাইমনের ‘শুনতে কি পাও!’ সিনেমাদুটি দেখানো হবে আজ (২২ জুন) সন্ধ্যা ৮টা ৩০ মিনিটে। মিরিয়াম চান্দি মিনাচেরি নির্মমিত ‘ফ্রম দ্য শ্যডোওস’, সৌরভ ষড়ঙ্গী পরিচালিত ‘মধ্যিখানে চর’
সিনেমা দুটি আগামীকাল (২৩ জুন) সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে দেখোনো হবে।
এমএমএফ/জেআইএম