ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

আমি বাবার হাতে মারও খেয়েছিলাম: তিমির নন্দী

বিনোদন প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:০২ পিএম, ১৮ জুন ২০২৩

প্রতিটি সন্তানের জীবনে বাবা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মনে করতে হয়। বাবাকে সব সময় মনে রাখতে হয়। তাইতো বাবাকে সন্তানের জীবনের সঙ্গে আরও গুরুত্ববহ করতে বিশ্ব বাবা দিবস পালন করা হয়ে থাকে।

আজকের বাবা দিবসের বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক তিমির নন্দী তার পরম শ্রদ্ধেয় বাবাকে নিয়ে লিখেছেন-

আমার বাবা, দেবেন্দ্র নাথ নন্দী ছিলেন রেলওয়ের সরকারি চাকরিজীবী। অতি সাধারণ এবং উদার মনের মানুষ। বাবা ছিলেন ভীষণ প্রকৃতিপ্রেমী। যেখানেই তার পোস্টিং হয়েছে, সেখানেই তিনি বাগান করতেন। একটি ফুলের বাগান, একটি সবজির এবং আরেকটি ফলের বাগান। ছোটবেলায় এমন কোনো সবজি ছিল না, যা কিনে খেতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন: তিমির নন্দী

তিনি পশুপ্রেমীও ছিলেন। আমাদের বাসায় একটা মিনি চিড়িয়াখানা ছিল বলা যেতে পারে। সহজ সরল আমার বাবাকে সবাই খুব শ্রদ্ধা করতেন, ভালোবাসতেন। কেউ তার কাছে ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে এলে তিনি সমাধান করতেন।

পরিবারের প্রতি তিনি খুব যত্নশীল ছিলেন। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, সংগীতচর্চার খবর রাখতেন। বাসায় তখনকার নামকরা বেতার শিল্পীদের নিয়ে গানের আসর বসতো।

বাবা সেইসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন। শ্যামাসংগীত, ভজন, কীর্তন, তরজা এবং রাগভিত্তিক সংগীত তার খুব পছন্দের ছিল। বাবা আমাকে পড়াতেন। খুব ভালো ইংরেজি শিখেছিলাম বাবার কাছে। একবার ইংরেজি ট্রান্স্লেশন ভুল করায় আমি বাবার হাতে মারও খেয়েছিলাম। তবে ওটাই ছিল প্রথম এবং শেষ।

শীতের জোৎস্না রাতে বাইরে বাবার সাথে মাচায় বসতাম। বাবা আখ ছিলে দিতেন আমাদের। আমরা সব ভাই-বোন একসাথে বসে আখ খেতাম। প্রায় প্রতি রাতেই বাবার কাছে বিভিন্ন ধরনের গল্প শুনতাম। কোনো কোনোদিন বাবা মন্দিরে যেতেন কীর্তন শোনার জন্য। আমি তার পিছু নিতাম বাতাসা খাওয়ার লোভে।

আমি বাবার হাতে মারও খেয়েছিলাম: তিমির নন্দী

যখন যেটা চেয়েছি, বাবা সাধ্যের মধ্যে তা এনে দিয়েছেন। এইভাবেই বড় হয়েছি। একসময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্কলারশিপ নিয়ে আমি রাশিয়া চলে যাই পড়াশোনা করতে। সেটি ছিল ২৯ আগস্ট ১৯৭৩ সাল।

আরও পড়ুন: বিজয় দিবস উপলক্ষে সাতটি চ্যানেলে তিমির নন্দীর গান

বাবা সেদিন তেজগাঁও পুরোনো এয়ারপোর্টে প্লেনে আমাকে তুলে দিতে এসেছিলেন। সেটাই ছিল বাবার সাথে আমার শেষ দেখা! বছর না ঘুরতেই বাবা পরপারে চলে গেলেন। বাবা মারা যান ৪ আগস্ট ১৯৭৪ সালে।

সেই থেকে বাবার শূন্যতা আমাকে আজও কাঁদায়। কারণ বাবা-ছেলের যে মধুর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, সেটা আমাদের মাঝে হয়নি। আজ বিশ্ব বাবা দিবসে আমি একটি কথাই বলতে চাই, যে বাবা-মা আমাদের জন্ম দিয়েছেন, যারা আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী দেখিয়েছেন।

যাদের হাত ধরে আমরা হাঁটতে শিখেছি, যাদের অসীম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা সুন্দর একটি জীবন পেয়েছি, শেষ বয়সে তাদেরকে কোনো সন্তান যেন কষ্ট না দেন। তারা আমাদেরকে দুধে-ভাতে যেমনটা রেখেছিলেন, সব সন্তানেরাও যেন তাদেরকে ঠিক তেমনভাবেই আগলে রাখেন। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি আমার অশেষ শ্রদ্ধা।

এমএমএফ/জেআইএম

আরও পড়ুন