‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ আমার নতুন আরেকটি স্কুল: সেন্টু
আব্দুল্লাহ আল সেন্টু একজন জাত অভিনেতা। তার প্রমাণ তিনি এরই মধ্যে দিয়েছেন। বারবার হোঁচট খেয়ছেন, অভাবের সঙ্গে লড়েছেন, তারপরেও থেমে থাকেননি। তার ‘বাংকার বয়’, ‘শুক্লপক্ষ’, ‘কারাগার’সহ একাধিক কাজে মুগ্ধ দর্শকরা। নিজের সেরাটা ঢেলে দিয়েছেন অভিনয়ে। সর্বশেষ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ জাদু চরিত্রে করেছেন বাজিমাত। প্রধান চরিত্র জাদুর প্রশংসা এখন দর্শকদের মুখে মুখে।
সম্প্রতি তার বর্তমান কাজের ব্যস্ততা, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’-এ কাজের অভিজ্ঞতা ও ভবিষৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত-
জাগো নিউজ: শৈশবের গল্প জানতে চাই—
আব্দুল্লাহ আল সেন্টু: আমার যখন সাড়ে ৩ বছর বয়স আর ছোট বোন কোলে তখন আমার বাবা মারা যায়। তারপর থেকে আমাদের সংসারে অভাবের একটি দূত নেমে আসে। সেখান থেকে আমার মা দর্জির কাজ করে সংসার চালানো শুরু করেন। আমার মায়ের ইচ্ছেতে যখন আমার সাড়ে ৬ বছর বয়স তখন পড়াশোনা করার জন্য গ্রাম ছেড়ে কিশোরগঞ্জ শহরে চলে আসি। সেখানে সরকারি শিশু পরিবার (বালক) সদন থেকে পড়াশোনা করি এসএসসি পর্যন্ত। এটাই মূলত আমার শৈশবের গল্প।
আরও পড়ুন: প্রশংসা কুড়াচ্ছে শ্যামল মাওলার ‘অনবদ্য’ অভিনয়
জাগো নিউজ: অভিনয়ের পথে পা বাড়ালেন কেনো? শুরু গল্পটা কি?
আব্দুল্লাহ আল সেন্টু: আর সেখান থেকেই নাচ, গান, অভিনয় বিভিন্ন কিছুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম, সেখান একটি বিদায় অনুষ্ঠানে ১০ মিনিট আগে আমাকে বলা হয় একটি নাটকে অভিনয় করতে। বলতে গেলে সেদিন থেকেই আমার অভিনয়ের যাত্রা শুরু।
তারপর ১৭ মার্চের একটি নাট্য উৎসবের মধ্যে ওই নাটকটিতে অভিনয় করি। সম্মানী হিসেবে পাই ১২০০ টাকা। তারপর হঠাৎ একদিন একটা বিজ্ঞাপন দেখতে পাই যে চন্দ্রাবতী থিয়েটারে লোক নিবে। সেখানে লেখা ছিল টিভিতে অভিনয় করার সুযোগ আছে। তা দেখে আমি সেখানে অডিশন দিতে যাই এবং ১৫২ জনের মধ্যে অডিশন দিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে চন্দ্রাবতীর সঙ্গে যুক্ত হই। সেখান থেকে ঢাকাতে এসে আন্তর্জাতিক শিশু নাট্য উৎসবে শো করা হয় এবং সেই সঙ্গে বেশ কিছু মঞ্চ নাটক করা হয় বিটিভিতে। সেখান থেকে ঢাকাতে চলে আসি ২০১৬ সালে। পড়াশোনা ও অভিনয় দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
জাগো নিউজ: অভিনয়ের শুরুতে কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?
আব্দুল্লাহ আল সেন্টু: শুরুতে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। ছোটবেলায় আমার অভিনয় সবাই খুব ভালোভাবে নিতো। সমস্যা শুরু হতে লাগলো আমি যখন বড় হতে থাকলাম। তখন মায়ের ইচ্ছে ছিল আমি পড়াশোনা করে একটা সরকারি চাকরি করি। কিন্তু আমার ভেতরে ছিল অভিনয় করার খুদা। যার কারণে আমার বিভিন্ন সময়ে মানুষের বিভিন্ন কথা শুনতে হয়েছে। অনেকেই বলছে যে, ‘আমি খারাপ হয়ে গেছি। যারা অভিনয় করে তারা নষ্ট মানুষ। ভালো না, আমি দেখতে ভালো না। ইত্যাদি ইত্যাদি বলে লাঞ্চনা করতো। আমার মাকে অনেক মানুষ কানপড়া দিতো এতো পড়াশোনা করে খারাপ দিকে চলে গেছে আপনার ছেলে। আরও বিভিন্ন কথা। তার সঙ্গে ছিল চাহিদা পূরণ করে নিজের জীবনকে ও বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধের সংগ্রাম। ঢাকাতে এসে মামা-মামীর সঙ্গে থাকার কারণে আমার চলতে তেমন কষ্ট হতো না। কিন্তু দিন শেষে বাড়িতে মা আছে এবং নিজের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তো একটা কিছু করতে হবে, সে থেকে একটা চাকরি খুঁজি এবং একটি ফার্মেসিতে যুক্ত হই ১৫০০ টাকা মাসিক বেতনে।
সেখান থেকে করোনার সময় বাড়িতে চলে আসি। আবার ঋণ এবং ছোট বোন অসুস্থ থাকার কারনে প্রচুর টাকার অভাবে পড়ে যাই। সেটা আমার জীবনের সব থেকে স্মৃতিময় বেদনার রঙে গেঁথে আছে। যা আমার জীবনকে নতুনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে, যুদ্ধের সাথে যুদ্ধ করে।
আরও পড়ুন: শত পর্বে ‘জবা’
জাগো নিউজ: সেন্টু থেকে জাদু- এ জার্নির গল্পটা কেমন?
আব্দুল্লাহ আল সেন্টু: সেন্টু থেকে জাদু হতে পারি নাই। আমি শুধু চেষ্টা করেছি আমার জীবনের একটা ঘটে যাওয়া মুহূর্তেকে তুলে ধরার। কারণ আমার জীবনের সকল অনুভূতিতো মানুষ জানে না। আমি কখন হাসলে কেমন লাগে, কখন কাঁদলে কেমন সাজে আমার দেহ। তো সেই জায়গা থেকে বলবো যে আমি জাদু হওয়া থেকে নিজেকে এবং নিজের অতীতের সময় গুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সেখানে শুধু জাদু নামটিকে ব্যবহার করেছি নিজের নামটিকে বাদ দিয়ে।
জাগো নিউজ: মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন এ কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
আব্দুল্লাহ আল সেন্টু: আমি কাজ করি শেখার ইচ্ছে নিয়ে। কারণ আমার শিখতে ভালো লাগে, জানতে ভালো লাগে। সেখান থেকে বলবো ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ আমার নতুন আরেকটা স্কুল ছিল। যেখানে স্বল্প কিছুদিনের জন্য একটি কোর্স করার জন্য ভর্তি হয়েছিলাম। যেখান থেকে আমি অনেক কিছু জানা বা শেখার অক্ষর পেয়েছি। কারণ ওই টিমের প্রতিটা মানুষ আমাকে অনেক ভালো বন্ধু করে নিয়েছিল।
জাগো নিউজ: বর্তমান কাজের ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই?
আব্দুল্লাহ আল সেন্টু: বর্তমানে একটা ওয়েবসিরিজ ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যস্ত আছি। সেই সঙ্গে নতুন কিছু কাজের কথা চলছে।
জাগো নিউজ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আব্দুল্লাহ আল সেন্টু: প্রথমে একজন ভালো মানুষ হতে চাই। তারপর অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে নিজেকে জানা ও তৈরি করার মধ্যে দিয়ে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত অভিনয়ে দৌড়াতে চাই।
এমএমএফ/এমএস