ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

অভিযোগকারী প্রযোজকের সঙ্গে গুলশানে শাকিব খানের বৈঠক

বিনোদন প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৪৫ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২৩

ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খান। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনের অবহেলা নিয়ে অভিযোগ করেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। তিনি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির প্রযোজক।

বুধবার (১৫ মার্চ) বিকেলে সশরীরে এফডিসিতে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি এবং ক্যামেরাম্যান সমিতিতে শাকিব খানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন। এরপরই এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয় বিনোদনপাড়ায়।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে এক টেবিলে বসলেন শাকিব খান এবং অভিযোগকারী প্রযোজক রহমত উল্লাহ। এর উদ্যোগ নেন শাকিবের সাবেক স্ত্রী অপু বিশ্বাস। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু। তবে এক টেবিলে বসলেও বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: শাকিব খান অনেক গ্যাঁড়াকলে আছে: মালেক আফসারী

খোরশেদ আলম খসরু জাগো নিউজকে বলেন, সমাধানের লক্ষ্যে আজ আমরা বসেছি। সমাধানের পথ অনেক দূর এগিয়েছে। কাল আবার বসবো। কাল বসলে সমাধান হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

প্রযোজক রহমত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতে চান। কিন্তু এখানে তো ভুলের কিছু দেখছি না। ঘটনাতো সত্যি। আমার অভিযোগ শতভাগ সত্যি। তবে শাকিব আবারও আমার সঙ্গে বসতে চেয়েছে। আমি গ্রাম থেকে এসে বসবো। সবকিছু ঠিক থাকলে আমার অভিযোগ হয়তো তুলে নিতে পারি। কিন্তু অভিযোগ যা করেছি সেটা শতভাগ সত্যি। শাকিবের কারণে আমি আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়া যান শাকিব খান। সেই সিনেমার শুটিং চলাকালীন শাকিব খানের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে এই প্রযোজক অভিযোগ করেন। যেখানে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় শাকিব খানের বিরুদ্ধে।

অভিযোগকারী প্রযোজকের সঙ্গে গুলশানে শাকিব খানের বৈঠক

 

আরও পড়ুন: আমি তো মাত্র দুজনকে বিয়ে করেছি: শাকিব খান

গতকাল বুধবার (১৫ মার্চ) বিকেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালি প্রযোজক রহমত উল্লাহ সশরীরে এফডিসিতে উপস্থিত হয়ে শাকিব খানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের মতো গুরুতর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার এ প্রযোজক। এরপরই শিল্পী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ (২০১৭) সিনেমায় অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস, ধর্ষণ (মামলা নং: NSW Police reference no: E ৬২৪৯৪৯৫৯) এবং পেশাগত অবহেলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির ক্ষতি সাধন চলচ্চিত্রের শুটিং সম্পন্ন করতে অথবা লগ্নিকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে অভিযোগ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক।

এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসা সফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি হতো অস্ট্রেলিয়ায় অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। আমার এবং এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আশা ছিল সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচিত হবে।

শাকিব খান একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সঙ্গে পেশাগত আচরণ করবেন। অথচ, আজ পর্যন্ত এই সিনেমার কাজ তিনি শেষ করেননি। ২০১৭ সালে অপারেশন অগ্নিপথের চিত্রায়নের সময় শাকিব খান যেসব ক্ষতিকর কাজ করেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো-

১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও কোনো রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন।

২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন যে হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন, আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্যে। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণ ব্যয় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছামতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়তো শেষ বেলায় দুই-এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সবার বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।

৪. এখন বর্ণনা দিচ্ছি তার ব্যয়বহুল যৌনাচারের। তাকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো, আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। কখনো কখনো একাধিকবার। এই সব যৌনকর্মীদের মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক আমাদেরকেই দিতে হতো।

৫. একবার তিনি আমাদের একজন নারী সহ-প্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করেন। ভুক্তভোগী এই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার স্বীকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেইদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে চুপিসারে চলে যান।

এরপর থেকে শাকিবের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।

উপরোক্ত ঘটনাগুলোর চাক্ষুষ সাক্ষী বলে এই প্রযোজক অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগের একটি অনুলিপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

তাৎক্ষণিকভাবে এ সম্পর্কে জানতে শাকিব খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও বার্তাটি সিন করেও শাকিব খান কোনো উত্তর দেননি।

আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমাটির শুটিং ২০১৭ সালে শুরু হলেও আজও শেষ হয়নি এর কাজ। কারণ হিসেবে শাকিব খানের অসহযোগিতা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক।

এ সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করছিলেন শাকিব খান ও অভিনেত্রী শিবা আলী খান। এ ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে আরও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, টাইগার রবি প্রমুখ।

এমআই/জেডএইচ/জেআইএম