ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

হুমায়ূন আহমেদই আমার চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রেরণা : শাওন

প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঢাক ঢোল আর বসন্ত বরণের আমেজে গতকাল শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জমকালো প্রিমিয়ার হয়ে গেল নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্পে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কৃষ্ণপক্ষ’র। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ছবিটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন হুমায়ূনপত্নী মেহের আফরোজ শাওন। ছবিতে মুহিব চরিত্র অভিনয় করেছেন হাটথ্রুব চিত্রনায়ক রিয়াজ এবং অরু চরিত্রে অভিনয় করেছেন হালের শীর্ষস্থানীয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।

গেল ১৩ নভেম্বর লেখকের জন্মদিন উপলক্ষে ছবিটি মুক্তি দেয়ার লক্ষেই ২ অক্টোবর থেকে চলছিলো শুটিং। কিন্তু গেল ১৯ অক্টোবর রিয়াজের আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকে এর শুটিং আটকে যায় এবং মুক্তি বিলম্বিত হয়। নানা ঝুটঝামেলা মিটিয়ে অবশেষে ছবিটি আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেতে যাচ্ছে দেশজুড়ে।

প্রথমবার চলচ্চিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা, কৃষ্ণপক্ষ ছবিটি নিয়ে প্রত্যাশা নিয়ে জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগের মুখোমুখি শাওন। আলাপের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য-

জাগো নিউজ : হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র নির্মাণে এলেন। অনুপ্রেরণা বা উৎসাহ কী ছিলো?
শাওন : আমি বেশ কয়েকটি নাটক-টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছি। সেগুলো দর্শকরা গ্রহণ করেছেন। তাদের উৎসাহেই চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রেরণা পেয়েছি। আর প্রত্যেক নির্মাতার স্বপ্ন থাকে চলচ্চিত্র নির্মাণের। আমার ক্ষেত্রেও তাই। তাছাড়া হুমায়ূন আহমেদ চেয়েছিলেন আমি চলচ্চিত্র পরিচালনা করি এবং প্রতিষ্ঠিত নির্মাতা হই। বলতে পারেন হুমায়ূন আহমেদই আমার চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রেরণা।

জাগো নিউজ : হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর জনপ্রিয় উপন্যাস-গল্প রয়েছে। সেখান থেকে ‌‌‘কৃষ্ণপক্ষ’কে কেন নির্বাচন করলেন?  
শাওন : খুব ভালো প্রশ্ন। ২০০৮ সালে হুমায়ূন আহমেদ চেয়েছিলেন তার সৃষ্ট ‘গৌরীপুর জংশন’ উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হবে। কিন্তু তিনি সেটা পারেননি। আমিও প্রথমে চেয়েছিলাম এটি নিয়েই ছবি নির্মাণ করবো। কিন্তু তারপর হুট করেই সিদ্ধান্তটা বদলে গেল। ইচ্ছে হলো ‘কৃষ্ণপক্ষ’ দিয়েই আমার চলচ্চিত্র পরিচালনার যাত্রা হোক। ব্যাস!

Shaon 1
জাগো নিউজ : প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা-অনুভূতি কেমন?

শাওন : আগেই বলেছি নির্মাণে আমি একেবারে নতুন নই। তারপরও চলচ্চিত্র অনেক বড় মাধ্যম এবং শিল্পেরও বিরাট মাধ্যম। সেখানে কাজ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার সঞ্চার হয়েছে। অনেক নতুন বিষয় শিখেছি। যারা ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবির সাথে কাজ করেছেন তারা আমার পূর্ব পরিচিত এবং আমার পরিবারের সদস্যের মত। সকলে কাজের ক্ষেত্রে খুব সিনসিয়ার ছিল। তাদের সহযোগিতা ছাড়া হয়তো ছবিটি নির্মাণের পরিকল্পনা মাথায় আনতাম না। আবার কাজ শেষ করাও সম্ভব হতো না। আর প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে এর প্রতি আমার অনুভূতি বরাবরই আবেগমাখা। জীবনের প্রথম যে কোনো কিছুই মনে রোমাঞ্চ নিয়ে বেঁচে থাকে। কৃষ্ণপক্ষও আমার কাছে তেমনি থাকবে।

জাগো নিউজ : ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?
শাওন : ছবিটি নিয়ে আমার প্রত্যাশার শেষ নেই। চলচ্চিত্র মন্দার এই বাজারে আমি আমার প্রত্যাশার কথা বেশি কিছু বলতে চাইনা। তবে আমি বিশ্বাস করি ভালো ছবি নির্মাণ হলে দর্শকরা অবশ্যই ছবিটি দেখতে আসবেন। হুমায়ুন আহমেদের নির্মাণের মুন্সিয়ানা সকলেই জানেন। তার সহযাত্রী এবং সঙ্গীনী হিসেবে সবাই আমার নির্মাণেও হুমায়ূন আহমেদের ফ্লেভার খুঁজবেন এটা স্বাভাবিক। সেই ভাবনা থেকেই আমি চেষ্টা করেছি আমার নির্মাণে যতটুকু সম্ভব দর্শক হুমায়ূন আহমেদের ফ্লেভারটা পাক। সে চেষ্টা কতটুকু সফল হয়েছে তা বিচার করবেন দর্শকেরা।

জাগো নিউজ: ‘কৃষ্ণপক্ষ’ কী প্রেমের ছবি?
শাওন : ‘কৃষ্ণপক্ষ’ প্রেমেরই ছবি। তবে এখানে দর্শকরা প্রেমের তারতম্য দেখতে পাবেন। যেমন- বোনের সাথে ভাইয়ের প্রেম, প্রেমিকের জন্য প্রেমিকার প্রেম, স্বামীর জন্য স্ত্রীর প্রেম ইত্যাদি। ছবিতে মুহিব-অরুর (রিয়াজ-মাহি) প্রেমটাই মুখ্য করে অন্য প্রেমগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আবার প্রেমের বিপরীত বিরহের বিষয়টিও দর্শকদের হৃদয়ে নাড়া দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

জাগো নিউজ : ধারণা করা হয়েছিলো পরিচালনার পাশাপাশি ছবিটিতে আপনি অভিনয়ও করবেন। কিন্তু সেটি হয়নি। আপনার দর্শকরা তো আপনাকে মিস করবে। অভিনয় কি তবে ছেড়েই দিতে চলেছেন?
শাওন : যেহেতু আমি ছবিটি নির্মাণ করেছি সেজন্য আমি অভিনয়ের কথা ভাবিনি। পাছে নির্মাণে যদি ভাটা পড়ে! আর আমার যারা দর্শক কিংবা হুমায়ুন আহমেদের যারা দর্শক তারা ছবিতে আমার অভিনয় দেখতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমি অভিনয় না করলেও তারা আমার নির্মাণে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি দেখবে। কেননা, এখানে যারা অভিনয় করেছেন এক মাহি ছাড়া অন্য সবার সঙ্গেই হুমায়ূন আহমেদের হৃদ্যতা ছিলো। তাদেরকে নিয়ে তিনি অসংখ্য কাজ করেছেন। আর মাহিকে আমি নিয়েছি সারপ্রাইজ হিসেবে। আর অভিনয় থেকে দূরে আছি তার মানে এই না যে আর অভিনয় করবো না। সুযোগ মিললে আগামীতে অবশ্যই অভিনয় করব।

Shaon 2
জাগো নিউজ : রিয়াজ ও মাহির মধ্যে প্রায় দুই জেনারেশনের গ্যাপ। এমন অসম বয়সের দুই তারকাকে নিয়ে জুটি করে ছবি বানানো কি ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো না?

শাওন : একদমই না। আমার তা কখনোই মনে হয়নি। আমি বিশ্বাস করি রিয়াজ চলচ্চিত্র থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও তার জনপ্রিয়তায় এতুটুক ভাটা পড়েনি। এদেশে এখনো অনেক দর্শকের কাছে রিয়াজ আপাদমস্তক একজন নায়ক। তিনি হুমায়ূন আহমেদের খুব প্রিয় অভিনেতা। তার সঙ্গে আমিও অনেক কাজ করেছি। সেই ভাবনা থেকেই তাকে নিয়ে নিজের প্রথম চলচ্চিত্রটি বানিয়েছি। অন্যদিকে মাহি এ প্রজন্মের সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী নায়িকাদের একজন। সে সঠিক রাস্তায় চললে আগামীতে অনেক দূরে যাবে। আমি মনে করি বয়সটা কোনো ব্যাপার না। অভিনয়টাই সব। আর ছবিতে তাদের দুজনকে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি যে তাদের অসম বয়সের ব্যাপারটা দর্শকদের অন্তরালে থাকবে। গল্পের প্রয়োজনেই মূলত তাদেরকে দিয়ে কাজ করেছি। দর্শক মুগ্ধ হয়ে দেখবে রিয়াজ-মাহির প্রেম ও তার পরিণতি।

জাগো নিউজ : এই ছবির কলাকুশলীদের মধ্যে রিয়াজ-ফেরদৌস ও অন্যান্যরা হুমায়ূন আহমেদের গল্প বা নির্মাণের আবহের সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু মাহি ছিলেন শতভাগ বাণিজ্যিক ঘরানার নায়িকা। অফ ট্র্যাকের কাজের সঙ্গে সে অভ্যস্ত নয়। তাকে নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
শাওন : আমি জানি মাহি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিতে কাজ করে। এবং সেখানে সে অল্প সময়ে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। আমি যখন ছবিটি নির্মাণের কথা ভাবি তখন অরু চরিত্রে তাকেই এঁকে ফেলেছিলাম। তাছাড়া সে দুর্দান্ত অভিনয় করেছে। তাকে কোনো সিকোয়েন্স একবার বলে দিলেই সেটা সে রপ্ত করতে পেরেছে। আমার ভালো লেগেছে মাহির দায়িত্ববোধ। নিজের চরিত্রকে সাবলীল করতে পরিশ্রম করেছে। একজন নির্মাতা তার শিল্পীর কাছে এটুকুর বেশি আর কী আশা করে। মাহি বুঝতে পারে নির্মাতা তার কাছে কি চায়। সবমিলিয়ে বলবো মাহিকে নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব ভালো ছিলো। আমরা আগামীতেও একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা করি।

জাগো নিউজ : বাবার গল্প ও মায়ের পরিচালনার ছবিটি নিয়ে আপনার দুই পুত্রের আগ্রহ কেমন?
শাওন : নিনিত এবং নিশাত দুজনেই বাবার পরিচয়ে পরিচিত সবার কাছে। তবে আমি চাই তারা তাদের মায়ের পরিচয়টাও গর্বভরে দিক। তারা জানে তাদের বাবা একজন জনপ্রিয় লেখক, মানুষ। কিন্তু তাদের মা যে চলচ্চিত্র পরিচালক এটা তারা এখনো ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। সেজন্য তাদের আগ্রহের জায়গাটা এখনো বিস্তৃত হয়নি।

জাগো নিউজ : ‘কৃষ্ণপক্ষ’ কয়টি হলে মুক্তি পাবে?
শাওন : ‘কৃষ্ণপক্ষ’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২৬ তারিখ। সব কিছু চূড়ান্ত করতে হাতে এখনো বেশ কিছু দিন আছে। তবে এখন পর্যন্ত আমি জেনেছি ছবিটি আশিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে এটা একেবারেই চূড়ান্ত। হল সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এমনটাই জানিয়েছে ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।

Shaon 3
জাগো নিউজ : ‘কৃষ্ণপক্ষ’র পালা তো শেষ হচ্ছে। এবার তবে চলচ্চিত্র পরিচালক শাওনকে নিয়মিত পাওয়া যাবে বলছেন?

শাওন : (হাসি দিয়ে) এখনো আমার পরিচালনায় প্রথম ছবিটি মুক্তি পায়নি। আগে ‘কৃষ্ণপক্ষ’র পালাটা শতভাগ শেষ হোক। কেননা এই ছবিটি আমার কাছে পরীক্ষার মত। এর ফলাফল আগে পাই তারপর নতুন চলচ্চিত্র বা ভবিষ্যত নিয়ে ভাবব। তবে ইচ্ছে তো আছেই নিয়মিত হওয়ার।

জাগো নিউজ : পরিচালক হিসেবে আপনাকে অভিনন্দন। সেইসঙ্গে শুভকামনা থাকল ‘কৃষ্ণপক্ষ’র সর্বোপরি সাফল্যের জন্য।
শাওন : আপনাকে এবং জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ। আর প্রিয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে ছবিটি হলে গিয়ে দেখতে দর্শকদের আমন্ত্রণ রইল।

এলএ

আরও পড়ুন