নিপুণের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা আপিল বিভাগের তালিকায়
চিত্রনায়কা নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের করা আদালত অবমাননার মামলাটি কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রেখেছেন আপিল বিভাগ। রোববার (২১ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে অব্যাহত দ্বন্দ্বের মধ্যে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসা নিয়ে অভিনেত্রী নিপুণের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন জায়েদ।
এর আগে এ বিষয়ে গত ৬ জুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে নতুন দিন ঠিক করেন। তারই ধারাবাহিকতায় শুনানির জন্যে তালিকায় ওঠে মামলাটি।
এর আগে গত ২৩ মে শুনানি ৫ জুন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছিলেন আপিল বিভাগ। ওই সময় জায়েদ খানের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আহসানুল করিম ও নাহিদ সুলতানা যুথী। নিপুণের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান।
এর আগে গত ১৪ মার্চ পদে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ ও স্থিতাবস্থার আদেশ কঠোরভাবে মেনে চলতে নিপুণ ও জায়েদকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগের সাধারণ সম্পাদক। একইসঙ্গে চার সপ্তাহের জন্য শুনানি মূলতবি করা হয়।
পরবর্তীকালে প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ২৫ এপ্রিলে দেওয়া এক আদেশে শুনানি ২৩ মে পর্যন্ত মূলতবি করেন।
এমতাবস্থায় নির্ধারিত দিনে মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসলে আদালত শুনানির দিন পিছিয়ে দেন।
গত ২৮ জানুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচন হয়, ফলাফল ঘোষণা করা হয় ২৯ জানুয়ারি। নির্বাচনে ইলিয়াস কাঞ্চন সভাপতি ও জায়েদ খানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই জায়েদকে বিজয়ী ঘোষণা করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন নিপুণ।
নির্বাচনী ফল ঘোষণায় কারচুপির অভিযোগ আনেন নিপুণ। এরপর ওই ফল বাতিল চেয়ে আপিল বোর্ডের কাছে আবেদন করেন তিনি। এ আবেদনের ভিত্তিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ড গঠন করে সমাজ সেবা অধিদপ্তর।
ওই আপিল বোর্ড গত ৫ ফেব্রুয়ারি জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
এরপর ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ শপথ নেওয়ার মাধ্যমে সমিতির দায়িত্বে বসেন। এ অবস্থায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন জায়েদ খান। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আদেশ দেন ও রুল জারি করেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন নিপুণ।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন। আদালতের এ আদেশের পর সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন নিপুণ। এরপরই তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চেম্বার জজ আদালতের আদেশ বহাল রেখে আদেশ দেন। একইসঙ্গে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ মার্চ হাইকোর্ট এক রায়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিনেতা জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন।
এ রায়ের পর ওই রাতেই সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন জায়েদ খান। এরপর নিপুণ আক্তারের করা আবেদনে আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালতের বিচারপতি গত ৬ মার্চ হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন।
এছাড়া নিপুণের আবেদনের ওপর ৪ এপ্রিল আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য করেন। ওই আদেশের পর ওইদিনই সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন নিপুণ। এ কারণে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন জায়েদ খান, যা আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ মামলা করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জায়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করিম।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও নিপুণ আক্তার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে চেয়ারে বসছেন ও কার্যক্রম চালাচ্ছেন, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়েছে।
এফএইচ/এসএএইচ/এএসএম