‘অভিনয়ে টাকা আয় করতে পারছে না, তাই গদি নিয়ে মারামারি-কাড়াকাড়ি’
নির্বাচন আর বিতর্ক যেন একই সূত্রে গাঁথা। হোক জাতীয় নির্বাচন বা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সর্বত্রই হিংসা আর কাদা ছোড়াছুড়ি। সর্বশেষ ভোটকেন্দ্রিক এই বিতর্ক দেখা গেলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনেও।
গত শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেলের ১১ শিল্পী নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১০ জন। সভাপতি হয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন জায়েদ খান।
কিন্তু ভোটে কারচুপির অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে ভোট, প্রার্থীকে অশালীন প্রস্তাবসহ নানা বিতর্ক জন্ম দিয়েছে এই নির্বাচন ঘিরে। এসব প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন শিল্পী সমিতির সদস্য অভিনেত্রী মুনমুন।
সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী জায়েদ খান ভোটের দিন আপনাকে টাকা দিয়েছেন, এমন অভিযোগ করেছেন সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত প্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণ। একটি ভিডিও-ও ভাইরাল হয়েছে জায়েদ খানের সঙ্গে আপনার কথোপকথনের। আসলে কী ঘটেছিল সেদিন?
‘আমি বুঝতে পারিনি এমন পরিস্থিতির শিকার হবো। দুই প্যানেলের মারামারিতে আমি নোংরা রাজনীতির শিকার হলাম। আমি আসলে চালাক নই। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানেন, আমি একজন সহজ-সরল অভিনেত্রী। যারা আমার সঙ্গে কাজ করছেন, তারা জানেন। চালাক হলে তো আমি বারবার ঠকতাম না।’
আপনি অভিনয় জগতে দীর্ঘ সময় ধরে। চালাক তো হতেই হয়...
‘টাকা নেওয়ার অভিযোগটা একেবারেই অসত্য। আমি কালো মাস্ক হাতে। অথচ টাকা হাতে নিয়েছি বলা হলো। ভিডিওটা ভালো করে দেখলেই বুঝবেন। নির্বাচনের সময় আমাকে কোথাও আপনারা দেখতে পাবেন না। যেখানে সত্যিকারে টাকার লেনদেন হয়েছে, সেখানেই আমি ছিলাম না। আর নির্বাচনের দিন নাকি জায়েদ খানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে ভোট দিয়ে এসেছি! খুবই কষ্ট পেয়েছি এমন মিথ্যাচারে। মিথ্যার জবাব দেওয়ার জন্য চালাক হওয়ার দরকার আছে মনে করি না।’
আপনার বিরুদ্ধে কী কারণে এমন মিথ্যাচার হতে পারে?
‘আগে চলচ্চিত্র নির্বাচন করে আয় করা হতো। আমার মতো একজন অভিনেত্রী চলচ্চিত্রের জন্য কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা আয় করে দিয়েছি। আমার নামেই ওই সময় ছবি তৈরি হতো। প্রধান চরিত্র আমিই। চলচ্চিত্রের আয়-উন্নয়নে আমার ভূমিকা আছে এবং আমি তা বলার অধিকার রাখি।
আর এখন আমরা নেই। এফডিসি এক কোটি টাকা আয় করতে পারে কি না সন্দেহ আছে। সেই আয় আর নেই। এ কারণেই গদির ওপর এখন সবার নজর। অভিনয়ে নয়, এফডিসির গদির জন্য মরিয়া অভিনেতারা। অভিনয় করে তো আর অভিনেতারা টাকা আয় করতে পারছেন না, তাই গদি নিয়ে মারামারি-কাড়াকাড়ি করছে। হয়তো হিংসা করেই এমন কুৎসা রটাচ্ছেন।’
গদি বা পদ থেকে আসলে আয় হয়?
‘আমি তো গদিতে বসিনি। বলতেও পারবো না। তবে কিছু একটা লাভের জায়গা তো আছেই। নইলে ক্ষমতার জন্য আরেকজন শিল্পীকে কালার (বিতর্কিত) করবেন কেন?’
নায়িকা নিপুণের সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ?
‘না। তার সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত রেষারেষি নেই। একসঙ্গে একটি ছবি করার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত হয়নি। বেশ আগের কথা।’
শিল্পীদের এমন বিরোধ সমিতির জন্য তো ক্ষতি…
‘এই রেষারেষি তো অবশ্যই ক্ষতি বয়ে আনছে। আমাকে বিতর্কিত করে গোটা শিল্পী সমাজের জন্য তো ক্ষতি বয়ে আনা হলো। আমাদের চরিত্র কি এতই খারাপ যে টাকার কাছে বিক্রি হবো! আগেও তো নির্বাচন হয়েছে। তখন কিন্তু এমন জেদাজেদি, নোংরা রাজনীতি হয়নি।
নিপুণ নামের যে নায়িকা টাকার মিথ্যা অভিযোগ আনলেন, তিনি তো শিল্পী সমিতিকে জনসমাজে হেয়প্রতিপন্ন করে ছাড়লেন। এই প্রশ্নে বলতে গেলে জায়েদ খানই বেটার (ভালো), তিনি কখনোই আমাদের ছোট করে, অপমান করে কথা বলেননি। সত্যিকার নেতা তো সেই, যার কাছে সমিতির সদস্যরা মূল্যায়িত হন।’
সিনেমা করছেন না এখন। সব মিলিয়ে কেমন আছেন?
‘আল্লাহ পাক আমাকে খুব ভালো রেখেছেন। আমি সব সময় আল্লাহ শুকরিয়া আদায় করে থাকি। আমি নিজেকে দুই টাকার অভিনেত্রী মনে করি না। আমার টাকার খুব অভাব থাকলে এফডিসিতে নানা পার্টি করে বেড়াতাম। আমি কোথাও যাইনি। ঘরেই ছিলাম।
সারাজীবন সিনেমা না করলেও আমার এখন চলবে। তবে শিল্পী সমিতির সদস্য হয়ে অবশ্যই গর্ববোধ করি। সমিতির আরও উন্নয়ন হোক, এগিয়ে যাক। হিংসা, নোংরামিগুলো অন্তত দূর হোক।’
এএসএস/এইচএ/জিকেএস