শুভ জন্মদিন সুরের আশীর্বাদ এ আর রহমান
সংগীত তার কাছে প্রার্থনা করার মতোই। কিংবা সংগীত সাধনায় ঈশ্বরের দূতই যেন তিনি। তাই সুর আর গান নিয়ে বসলেই চোখ দুটি বন্ধ হয়ে যায় তার ভাবের আবেশে। যেন বা কথা বলেন ঈশ্বরের সাথে। বলছি ভারতবর্ষ তথা এশিয়ার সংগীত অহংকার আল্লাহ রাখা রহমানের কথা। অবশ্য তিনি সবার কাছে এ আর রহমান নামেই পরিচিত।
তার অ্যালবাম রিলিজ পাওয়ার আগেই হয়ে যায় সুপারহিট। তার মিউজিক ইন্ডিয়ান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে দিয়েছে অনন্য এক মাত্রা। তার প্রতিটি গানই স্বতন্ত্র একটি শিল্প। তার প্রতিটি নতুন টিউনই আনপ্রেডিকটেবল ইনোভেশন। মোজার্ট অফ মাদ্রাজ এবং ইসাই পুইয়াল (তামিল) বা সুরের ঝড় নামেও তিনি সুপরিচিত।
৮১তম অস্কারের মিউজিক ক্যাটাগরিতে ডাবল অস্কার বিজয়ী মিউজিশিয়ান এ আর রহমানের আজ ৪৮তম জন্মদিন। বিশ্ব সংগীতের অমূল্য এই রত্নের মর্তে আগমনী দিনে জাগো নিউজরে পক্ষ থেকে রইল শ্রদ্ধা মিশ্রিত শুভেচ্ছা।
এ আর রহমানের জন্ম ১৯৬৬ সালের ৬ জানুয়ারি ইন্ডিয়ার তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে একটি সংগীত পরিবারে। তার পারিবারিক নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার, ধর্মান্তরের পর নাম রাখা হয় আল্লাহ রাখা রহমান, সংক্ষেপে এ আর রহমান।
তার বাবা আর কে শেখর ছিলেন মালায়ালাম মুভির একজন মিউজিক কম্পোজার ও কন্ডাক্টর। তার মায়ের নাম ছিল কস্তুরি। মুসলিম হওয়ার পরে তার নাম হয় করিমা বেগম।
গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের জীবনের অন্যতম অর্জন আসে ২০০৯ সালে। ওই বছর ৮১তম অস্কার আসরে ড্যানি বয়েলের আলোচিত সিনেমা ‘স্লামডগ মিলিনিয়র’র মিউজিক কম্পোজার হিসেবে সেরা অরিজিনাল মিউজিক স্কোর ও সেরা অরিজিনাল সং ‘জয় হো’র জন্য ডাবল অস্কার জেতেন।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি প্রায় ৬০০-৭০০ জিঙ্গেল তৈরি করেছেন। তৈরি করেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় অডিও এবং ফিল্মের গান। তবে এ আর রহমানের ঐতিহাসিক উত্থান হয় রোজা চলচ্চিত্র দিয়ে ১৯৯২ সালে। এটি রিলিজ হওয়ার পরের ঘটনা কেবলই ইতিহাস। দিল হে ছোটা সা, কিংবা রোজা জানেমান গান দু’টিসহ এ মুভির মিউজিকের সম্পূর্ণ নতুন ফ্লেভারের টাচি ও ক্যাচি মিউজিক রীতিমতো একটি রেভলিউশন এনে দেয় ইন্ডিয়ান মুভি মিউজিকে।
এ রোজা অ্যালবামটিই ২০০৫ সালের টাইম ম্যাগাজিনের ১০ বেস্ট সাউন্ডট্রাকস অফ অল টাইম লিস্টে স্থান করে নেয়। এরপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। ঈর্ষান্বিত অন্যান্য কম্পোজারদের সমালোচনা তার সাফল্যে বিন্দুমাত্র আঁচড় কাটতে পারেনি।
মুভি বোম্বের (১৯৯৫) তু হি রে.. গানটি এবং বোম্বে থিম মিউজিক ট্র্যাকটি এ তার অনন্য দু’টি সৃষ্টি। তার সেরা অধিকাংশ ট্র্যাক বা মুভিই প্রথমে তামিল ভাষায় করা, যা পরে হিন্দিতে ডাব করা হয়েছে। সেই ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তিনি তামিল, তেলেগু, হিন্দি, মালায়ালাম, মারাঠি, কানাড়া, ম্যান্ডারিন ও ইংরেজি ভাষায় উপহার দিয়েছেন দুই শ’রও (ডাবিং ও সিঙ্গেলসহ) বেশি অ্যালবাম।
১৯৯৭ সালে তিনি উপহার দিয়েছেন বন্দে মাতরম-এর মতো মাইলস্টোন অ্যালবাম, যেটি শুধু ইন্ডিয়াতে তখন বিক্রি হয়েছিল ১.২ কোটি পিস! ১৯৯৯তে জার্মানির মিউনিখে কনসার্টে মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন তিনি।
২০০২-এ বিশ্ববিখ্যাত কম্পোজার অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রিলিজ দেন তার প্রথম স্টেজ প্রডাকশন বোম্বে ড্রিমস। ২০০৭ সালে তাজমহলকে দ্য নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স-এ স্থান পাইয়ে দেয়ার জন্য প্রমোশন হিসেবে ওয়ান লাভ গানটি ৬টি ভাষায় রিলিজ দেন।
তার মিউজিক করা উল্লেখ করার মতো হিন্দি মুভিগুলো হলো বোম্বে (১৯৯৫), রঙ্গিলা (১৯৯৫), দিল সে.. (১৯৯৮), তাল (১৯৯৯), লগান (২০০১), সাথিয়া (২০০২), রাঙ্গ দে বাসন্তী (২০০৬), গুরু (২০০৭), যোধা আকবর (২০০৮), জানে তু... ইয়া জানে না (২০০৮), স্লামডগ মিলিয়নেয়ার (২০০৮), ইয়ুভরাজ (২০০৮), গজনি (২০০৮), দিল্লি-৬ (২০০৯) ইত্যাদি।
কম্পোজিশনের পাশাপাশি তিনি একজন অসাধারণ ভোকালিস্টও; হাইপিচ, স্পিরিচুয়ালিটি তার কণ্ঠের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এ আর রহমানের কণ্ঠের প্রথম গান মুভি বোম্বের (১৯৯৫) হাম্মা হাম্মা। তবে বন্দে মাতরাম (বন্দে মাতরাম), লুকা ছুপি (রাঙ্গ দে বাসন্তী), তেরে বিনা (গুরু), খাজা মেরে খাজা (যোধা আকবর), ও... সয়া (স্লামডগ মিলিয়নেয়ার), রেহনা তু (দিল্লি-৬) ইত্যাদি ট্র্যাকগুলোকে তার ভোকাল মাস্টার পিস বলা যেতে পারে।
তিনিই একমাত্র ইন্ডিয়ান মিউজিশিয়ান, যার অ্যালবাম বিশ্বজুড়ে ২০ কোটি কপির চেয়েও বেশি বিক্রি হয়েছে। আর অ্যাওয়ার্ড এ আর রহমানের জন্য সকাল ব্রেকফাস্ট ছাড়া যেন আর কিছুই নয়! ২টি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার, ১টি গোল্ডেন গ্লোব, ১টি বাফটা, ১১টি ফিল্মফেয়ার এবং ৪টি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডসহ প্রায় একশ’র মতো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি।
মাত্র ২০ দিনে মিউজিক তৈরি করা মুভি স্লামডগ মিলিয়নেয়ার (২০০৮) তাকে পৌঁছে দিয়েছে সম্মানের শীর্ষে। কারণ এ মুভিটির জন্যই তিনি জিতেছেন দু’টি অস্কার ও একটি করে গোল্ডেন গ্লোব ও বাফটা অ্যাওয়ার্ড। তিনিই প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র ইন্ডিয়ান যিনি দু’টি অস্কার জিতেছেন।
এ আর রহমানের ইউনিক একটি স্টাইল হলো, তিনি সাধারণত রাতের বেলা কাজ করেন (একমাত্র লতা মুঙ্গেশকরের সঙ্গে তিনি দিনে কাজ করেছেন)। তিনি যখন মৌলিক টিউন করেন, তখন তিনি তার বিশেষ রুমে গিয়ে বসেন এবং একা থাকেন; সঙ্গে থাকে কেবল অন্ধকারে জ্বলতে থাকা কয়েকটি মোমবাতি।
এ আর রহমানের স্ত্রীর নাম সায়রা বানু; তাদের তিন সন্তান নাম খাদিজাহ, রহিমা ও আমান।
এ আর রহমানের যত হিন্দি ছবি
রোজা, ধরম যোধা, চোর চোর, বিশ্ববিধাতা, দ্য জেন্টলম্যান, খেল খিলাড়ি কা, হামসে হায় মুকাবলা, তু হি মেরা দিল, প্রিয়াংকা, বোম্বে, রঙ্গিলা, মুথু মহারাজা, লাভ বার্ডস, হিন্দুস্তানি, দুনিয়া দিলওয়ালো কি, ফায়ার, মি. রোমিও, স্বপ্নে, দৌড়, কাভি না কাভি, জিনস, দিল সে, ১৯৪৭ আর্থ, ডোলি সাজা কে রাখনা, তাল, তক্ষক, দিল হি দিল মে, পুকার, নায়ক, সাথিয়া, ফিজা, জুবেইদা, ওয়ান টু কা ফোর, লাভ ইউ হামেশা, লগান, দ্য লিজেন্ড অফ ভাগাত সিং, তেহযিব, লাকীর, মিনাক্ষী, যুবা, দিল নে জিসে আপনা কাহা, স্বদেশ, কিসনা, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, মঙ্গল পান্ডে, ওয়াটার, রাঙ্গদে বাসন্তী, গুরু, প্রোভোকড, যোধা আকবর, জানে তু... ইয়া জানে না, আদা... এ ওয়ে অফ লাইফ, স্লামডগ মিলিয়নেয়ার, যুভরাজ, গজনি, দিল্লি-৬।
এলএ