দুই বছরে দুই টাকাও আয় করতে পারেনি এফডিসির ক্যান্টিন
করোনায় বিপর্যস্ত পৃথিবী। কাতারে কাতারে মানুষ মরছে, আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন লাখ লাখ। প্রাণঘাতি ভাইরাস করোনা আতঙ্কে থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। হুমকির মুখে পড়েছে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা। লোকসান গুনছে অনেক নামি দামি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প খাত।
বিশ্বের শোবিজেও দেখা যাচ্ছে সেই প্রভাব। করোনার ভয়ে গৃহবন্দী শিল্পী ও কলাকুশলীরা। শুটিং নেই, সিনেমা নেই, বন্ধ সিনেমাও হলও। বাংলাদেশের চিত্রটা আরও করুণ। প্রায় দুই বছর ধরেই স্থবির হয়ে আছে ঢালিউড। কাজ নেই, বেকারত্বের কালো থাবায় রিক্ত-শূন্য হয়ে গেছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই।
সিনেমার কারখানা খ্যাত এফডিসিতে তাই সুনসান নিরবতা। যেখানে প্রতিদিন হাজার লোকের মেলা বসেছে, হইহই রবে মুখরিত থেকেছে সেখানে আজ কিছুই নেই। এফডিসিতে লোক সমাগমের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এর ক্যান্টিনটি। কিন্তু সেই ক্যান্টিন খোলা থাকলেও সেখানে নেই লোকের আনাগোানা।
দুই বছর ধরেই করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে ক্যান্টিনটি তার প্রাণ হারিয়েছে। নেই উৎসব, হাকডাক। নেই ক্যান্টিন বয়দের ব্যস্ততাও। লকডাউনে বন্ধ থাকে। লকডাউন শেষ খুললেও জমে উঠে না ক্যান্টিনের আঙিনা। এফডিসিতে শুটিং হলেও খুব একটা লোক আসেন না। আর যারা আসেন তারা ক্যান্টিনমুখো হন না।
গতকাল ২৫ আগস্ট এফডিসিতে গিয়ে দেখা গেল ক্যান্টিন খোলা। ভেতরে বসে আছেন ম্যানেজার আর একজন কিশোর কর্মচারী। তারা জানান, এ দফায় লকডাউনের পর থেকেই ক্যান্টিন খোলা প্রতিদিন। কিন্তু কোনো বেচাকেনা নেই। অবস্থা এতো করুণ যে মালিককে ক্যান্টিনটি চালাতে গিয়ে এখন ভর্তুকী দিতে হচ্ছে।
জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় ম্যানেজার মিলনের। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আসছি খালাতো ভাই আজাদের জন্য। সে ড্যান্স ডিরেক্টর। এফডিসির সবাই তারে চিনে জানে। সে দুই বছর আগে ক্যান্টিন ভাড়া নিছে ২ বছরের জন্য। এই যে ২টা বছর যাইতেছে, ২ টাকাও আয় হয় নাই।
হইবো ক্যামনে, প্রথম হইলো ক্যান্টিন ঠিকমতো চালুই রাখতে পারি নাই। তার উপর নাই মানুষজন। কত দিবস, উৎসব গেল। একটাও তো হইলো না ঠিকমতো। লস খাইতে খাইতে বেদিশা অবস্থা। ক্যান্টিনের মালিকের মাথায় হাত।’
মিলন জানান, ২ বছরের জন্য৪ লাখ টাকা চুক্তিতে ক্যান্টিন ভাড়া নিয়েছিলেন চলচ্চিত্রের নৃত্য পরিচালক আজাদ। আড়াই লাখ অগ্রিম দিয়েছিলেন। বাকি ছিলো দেড় লাখ। এছাড়া প্রতি মাসে ৩০ হাজার করে ভাড়া। কিন্তু ক্যান্টিন নেয়ার পর থেকেই করোনার আক্রমণ। রীতিমতো দুচোখে সরষে ফুল দেখছেন আজাদ।
একদিকে ক্যান্টিনের বকেয়া টাকা ও প্রতি মাসের ভাড়া বকেয়া। অন্যদিকে ম্যানেজারসহ ক্যান্টিনের কর্মচারীদের বেতন। আজাদ জানেন না, কীভাবে এই অর্থনৈতক জটিলতা থেকে মুক্তি পাবেন তিনি।
ম্যানেজার মিলনের প্রত্যাশা, এখনো কিছু উপকার হবে যদি এফডিসি সরগরম হয়। নিয়মিত শুটিং, মানুষের আনাগোনা বাড়লেই জমে উঠবে ক্যান্টিন। সহজ হবে ক্যান্টিন মালিক আজাদের চলমান করুণ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার পথটাও।
এমআই/এলএ/এমকেএইচ