নিশো-মেহজাবীনের ‘ঘটনা সত্য’ নাটকের বিরুদ্ধে মামলার ঘোষণা
‘ঘটনা সত্য’ নামের নাটকটি প্রচার হয় কোরবানি ঈদে। এ নাটকের সংলাপে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে অসংলগ্নতা প্রকাশ হওয়ায় বেশ সমালোচনায় পড়তে হয় এর নির্মাতা রুবেল হাসান, শিল্পী ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভিকে৷
এ প্রেক্ষিতে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাতেও বুঝি রক্ষা হলো না।
এবার এ নাটকের সংশ্লিষ্টদের নামে মামলার ঘোষণা দিল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কয়েকটি সংগঠন। সেই সঙ্গে টেলিভিশনে টকশোতে দেশের ফুটবলকে ‘প্রতিবন্ধী ছেলের’ সঙ্গে তুলনা করায় আলোচকের বিরুদ্ধেও পৃথক মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।
আজ মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ডব্লিউডিডিএফ) নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার, মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠন পরিষদের (পিএনএসপি) সালমা মাহবুব।
প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রেজাউল করিম সিদ্দিকী এবং অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ডিজঅ্যাবল উইমেনের সভাপতি নাসিমা আক্তার।
সেখানে আইনজীবী রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেন, তিনি নিজেও একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। তিনি বাদী হয়ে মামলা দুটি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হলেই তিনি মামলা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৩ জুলাই একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ‘ঘটনা সত্য’ নাটকটি প্রচার করা হয়। নাটকটি ইউটিউবেও আপলোড করা হয়। নাটকটিতে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়াকে কেন্দ্র করে মা–বাবার কান্নাকাটির মাধ্যমে ভীতিকর পারিবারিক ও সামাজিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। ইউটিউবে নাটকটির প্রচারিত অংশে নেপথ্য কণ্ঠে প্রতিবন্ধিতাকে বলা হয়, ‘বাবা-মায়ের পাপের ফল’।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, একই চ্যানেলে প্রচারিত একটি টকশোতে দেশের ফুটবলের দুর্দশা বোঝাতে ‘প্রতিবন্ধী ছেলে’ উল্লেখ করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আলোচকসহ অনুষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও পৃথক মামলা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর আইনি অধিকার লঙ্ঘন করায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩-এর ৩৭ (৪) ধারায় মামলা করা হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ৩৫০টি সংগঠন এ আইনি ব্যবস্থার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। আইনের ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পাঠ্যপুস্তকসহ যেকোনো প্রকাশনা এবং গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করলে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সম্মেলনের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যখন সমাজ ও রাষ্ট্র সমান সুযোগ দিতে কুণ্ঠাবোধ করে, তখন তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয়ে ওঠেন মা-বাবা। প্রতিবন্ধী সন্তান ‘বাবা-মায়ের পাপের ফল’ সমাজের একাংশের মধ্যে এ ভুল ও অবৈজ্ঞানিক বিশ্বাস বিদ্যমান থাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের অভিভাবকরা মানসিক নিপীড়নের শিকার হন। সেই ভুল ধারণা ও নিপীড়নকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে এই নাটক। এ ধারণা যে ঠিক নয়, নাটকটিতে সে সম্পর্কে কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।
এলএ/এএসএম