এফডিসিতে রাজের সেটে নতুন পপি
ছুটির দিনগুলোতে এফডিসিতে সাধারণত শুটিং কমই হয়। সেদিন চলচ্চিত্রের মানুষেরা আসেন আড্ডা দিতে। ভিড় বাড়ে দর্শনার্থিদেরও। কিন্তু গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ছিলো কর্মমুখর একটি দিন। ফটক পেরিয়ে সোজা এগিয়ে হাতের ডানেই ৪ নম্বর ফ্লোর। তার আশপাশে দেখা গেল শ’ খানেক মানুষের জটলা।
তারমধ্যে মেকআপ মেখে ঘেুরে বেড়াতে দেখা গেল কিছু তরুণ-তরুণীকে। চলছে নানা জিনিস পত্রাদি নিয়ে মানুষের ছোটাছুটি, হাঁকডাক। বিষয় কী জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল বহুদিন পর শুটিং করতে এফডিসিতে এসেছেন চিত্রনায়িকা পপি। তবে কোনো চলচ্চিত্রের কাজে নয়। শাবনূর পরবর্তী জনপ্রিয় এই নায়িকা মডেল হয়েছেন রোমানিয়া বিস্কুটের। তারই দৃশ্যধারন চলছে ৪ নম্বর ফ্লোরে।
ভিতরে গিয়ে চোখে পড়ল দৃষ্টি নন্দন এক মঞ্চে অপ্সরীর মতো দাঁড়িয়ে আছেন পপি। অনেকটা শুকিয়েছেন। ফিগারের সাথে সাথে বেড়েছে সৌন্দর্যের লাবণ্যতাও। তার চারপাশে ঘিরে আছে জনা কয়েক সহশিল্পী। হঠাৎ ‘চলো যাই, রেডি, অ্যাকশন’ শব্দ ভেসে আসতেই আলোয় রাঙা মঞ্চে নাচতে শুরু করলেন পপি ও তার দল। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে আশির দশকের জনপ্রিয় ‘নসীব’ চলচ্চিত্রের কালজয়ী গান ‘তোমাকে চাই আমি আরো কাছে’ গান।
ডানে চোখ ঘুরাতেই দেখা গেল মনিটরে মনযোগ দিয়ে দৃষ্টি পেতে রেখেছেন দর্শকনন্দিত নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। শট শেষ হতেই তার সাথে দৃষ্টি বিনিময় হলো। স্বভাবজাত মিষ্টি হাসিতে স্বাগত জানালেন সাংবাদিকদের। বললেন, খুব চমৎকার একটি বিজ্ঞাপন হতে যাচ্ছে রোমানিয়া বিস্কুটের।
কাজে ফাঁকে রাজ জানান, রোমানিয়ার গ্রুপের সাথে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে এক বছরের চুক্তি হয়েছে পপির। সে চুক্তি অনুযায়ী তিনটি সিরিজ বিজ্ঞাপন করা হবে রোমানিয়া বিস্কুটের। তার প্রথমটিই নির্মিত হচ্ছে এখন।
একটি দৃশ্যের কাজ শেষ হতেই দুপুরের খাবারের বিরতি পড়ল। যদিও তখন বিকেল গড়িয়ে সময় সন্ধ্যার দিকে ছুটছিলো। কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় অনেক কিছুই ছাড় দিতে হয় শুটিং ইউনিটকে। সময়মেতা খেতে না পারাটাও তার একটি। সবাই বসে গেলেন উদর পূর্তিতে।
ডায়েটে থাকা নায়িকা জানালেন তিনি এ মুহূর্তে কিছু খাবেন না। ছুটলেন মেকআপ রুমে। সেখানেই তার সাথে আলাপ হলো মেকআপের ফাঁকে। বহুদিন পর এফডিসিতে শুটিং করার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখালো তাকে। সেইসাথে নতুন বিজ্ঞাপনটি নিয়ে শোনালেন আশার কথা। পপি বলেন, ‘খুব সুন্দর একটি থিম নিয়ে টিভিসিটি তৈরি হচ্ছে। আমি এর আগেও অনেক পণ্যের মডেল হয়েছি। তবে চোখ বন্ধ করে বলতে পারি সবগুলো থেকে ব্যতিক্রম কাজ হবে রোমানিয়া বিস্কুটের বিজ্ঞাপন। বিশেষ করে এ প্রজন্মের জনপ্রিয় নির্মাতা রাজের নির্মাণের প্রশংসা করতেই হয়। তার টিম ওয়ার্ক খুব গোছানো এবং পরিচ্ছন্ন। এনজয়ের মধ্য দিয়ে শুটিং করছি। কাজ করছি বলে মনেই হচ্ছে না।’
ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো লাক্সের শুভেচ্ছাদূত হয়েছিলেন তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী পপি। এরপর আরো একাধিক প্রতিষ্ঠানের পণ্যের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মডেল হয়ে কাজ করেছেন তিনি। সর্বশেষ রোমানিয়া বিস্কুটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রোমানিয়া বিস্কুটের সাথে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে পথচলা শুরু করেছি। বেশ ভালো লাগছে। আমার বিশ্বাস যে দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে আমি তা পালন করতে পারব।’
নাটক-চলচ্চিত্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে পপি বলেন, ‘সোনাবন্ধু’, ‘বিয়ে হলো বাসর হলো না’, ‘শর্টকাটে বড়লোক’, ‘দুই ভাইয়ের যুদ্ধ’ ও ‘পৌষ মাসের পিরিতি’ নামের ছবিগুলোতে কাজ করছি। এগুলো মুক্তি পেলে নতুন করে নিজেকে ফিরে পাবো বলে বিশ্বাস করি। আর নাটকেও টুকটাক অভিনয় করছি বেছে বেছে।’
চলচ্চিত্রে আবার ব্যস্ত হতে দেখা যাবে কী- এই প্রশ্নের জবাবে পপি বলেন, ‘আসলে আমার ব্যস্ততা আমার হাতে নয়; ইন্ডাস্ট্রির হাতে। এখানে আসলে গল্পের কোনো বৈচিত্র নয়, নির্মাণেও কোনো নতুনত্ব নেই। প্রেম-ভালোবাসার গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে আমরা চলচ্চিত্র তৈরি করতে পারছি না। যার ফলে শিল্পীরা একটু সিনিয়র হলেই আড়ালে চলে যাচ্ছেন, ব্যস্ততা কমে যাচ্ছে। কারণ, আমাকে কলেজ পড়ুয়া মেয়ে হিসেবে দর্শক নিবে না। কিন্তু আমার জন্য কলেজের শিক্ষিকা কিংবা ব্যতিক্রম কোনো চরিত্রও নির্মিত হচ্ছে না। যার ফলে আমি এবং আমার পূর্ব ও উত্তরসূরী অনেক গুণী অভিনেত্রীরাই এখন চলচ্চিত্রে উপেক্ষিত।’
পপিকে রেখে ফিরে এলাম শুটিং সেটে নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজের কাছে। আলাপে আলাপে তিনি জানালেন, এ বিজ্ঞাপনটি মূলত জিঙ্গেল ভিত্তিক। যেখানে নান্দদিক উপস্থাপনায় পপি বিস্কুটের প্রচারণা করবেন।
তরুণ এই নির্মাতা আরো জানালেন, ‘বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনে নসীব ছবিতে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার গাওয়া ‘তোমাকে চাই আমি আরো কাছে’ গানটি নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। আমেরিকা প্রবাসী নাভেদ সংগীতায়োজনে জিঙ্গেলে কণ্ঠ দিয়েছেন হালের জিঙ্গেল কুইন খ্যাত দিলশাদ নাহার কনা।’
এরইফাঁকে রাজের সহকারী জানালেন পপি আসছেন। বিরতি শেষে নতুন করে শুরু হবে দৃশ্যধারণের কাজ। পপি এলেন, মঞ্চে উঠলেন। তৈরি হলেন। ‘অ্যাকশান’র নির্দেশ পেয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠলো আবারো কনার সুরেলা কণ্ঠ। তার তালে তালে নাচতে লাগলেন পপি ও তার দল। নির্মাতার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম নতুন বিজ্ঞাপনটি টিভিতে দেখার প্রত্যাশায়।
সামুরাই মারুফের শিল্প নির্দেশনা ও রামীম রাজের পেশাক পরিকল্পনায় বিজ্ঞাপনটির চিত্রগ্রহণ করছেন চন্দন রায় চৌধুরী। নতুন বছরের শুরুতেই মোট দশটি দৃশ্যের এই টিভিসিটির প্রচার শুরু হবে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে।
এলএ