রূপে-অভিনয়ে কালজয়ী ববিতা : পা রাখলেন ৬৮ বছরে
বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। আজ ৩০ জুলাই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। এবছরে তিনি ৬৮ বছরে পা রাখলেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই অনেকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ববিতাকে, জানালেন অভিনেত্রী।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়াতে গুণি এ অভিনেত্রীকে শুভেচ্ছায় সিক্ত করছেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা৷
ববিতার পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউব একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা বি. জে. আরা ছিলেন একজন চিকিৎসক।
বাবার চাকরি সূত্রে তারা তখন বাগেরহাটে থাকতেন। তবে তার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলায়। শৈশব এবং কৈশরের প্রথমার্ধ কেটেছে যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে রাবেয়া মঞ্জিলে। তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়বোন সুচন্দা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, বড়ভাই শহীদুল ইসলাম ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম বৈমানিক, ছোটবোন গুলশান আখতার চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং ছোটভাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা।
ববিতার একমাত্র ছেলে অনিক থাকেন কানাডার টরেন্টোতে। অনিক ওয়াটার ল্যু ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ শিক্ষা জীবন শেষ করে সেখানেই থিতু হয়েছেন। প্রায়ই ছেলের কাছে ছুটে যান ববিতা।
চলচ্চিত্রে তার শুরুটা হয়েছিল গত শতকের ষাটের দশকের শেষ দিকে। ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী পপি (ববিতার ডাক নাম) ‘সংসার’ ছবিতে রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির নির্মাতা ছিলেন বোন জামাই জহির রায়হান। ছবিটি মুক্তি পায়নি। পরে জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে ‘জ্বলতে সুরুজ কা নিচে’ নামে একটি উর্দু ছবির কাজ শুরু করেন। মাঝপথে থেমে যায় এই ছবিটিরও কাজ।
এরপর জহির রায়হান রাজ্জাক ও ববিতাকে নিয়ে তৈরি করেন চলচ্চিত্র ‘শেষ পর্যন্ত’। এটিই ছিল ববিতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। তারপর থেকেই ঢাকাই ছবিতে এই নক্ষত্রের উত্থান। আজও তিনি আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন অভিনয়ে।
ববিতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। এ চলচ্চিত্রে ‘অনঙ্গ বউ’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেঙ্গল ফ্লিম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান।
এছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারি অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। তিনি পরপর তিন বছর একটানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়ে রেকর্ড করেন। এজন্য তাকে ‘পুরস্কার কন্যা’ও বলা হয়।
ববিতা বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন।
ববিতা অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৩৫০ এরও বেশি৷ তারমধ্যে অশনি সংকেত, রামের সুমতি, নিশান, মন্টু আমার নাম, প্রতিজ্ঞা, বাগদাদের চোর, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, চ্যালেঞ্জ, হাইজ্যাক, মায়ের জন্য পাগল, টাকা আনা পাই, স্বরলিপি, তিনকন্যা, লটারী, শ্বশুরবাড়ি, মিস লংকা, জীবন সংসার, লাইলি মজনু, বসুন্ধরা, গোলাপী এখন ট্রেনে, নয়নমনি, সুন্দরী, অনন্ত প্রেম, লাঠিয়াল, এক মুঠো ভাত, মা, ফকির মজনু শাহ, জন্ম থেকে জ্বলছি, বড় বাড়ির মেয়ে, পেনশন, দহন, চন্ডীদাস ও রজকিনী, দিপু নাম্বার টু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এলএ/এসজে